ভবিষ্যতের শিল্প-বিনিয়োগ মানচিত্র

চায়না প্লাস ওয়ান ও এশিয়ার উত্থান

আরিফুল ইসলাম ভূঁইয়া
আরিফুল ইসলাম ভূঁইয়া আরিফুল ইসলাম ভূঁইয়া , উপপরিচালক, বেপজা।
প্রকাশিত: ০৯:৪২ এএম, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫

বিশ্ব অর্থনীতির দিগন্ত যেন এক অনন্ত ভ্রমণের মানচিত্র। সময়ের স্রোতে এর পথচলা কখনো শান্ত, কখনো উত্তাল -তবু প্রতিনিয়ত সামনে এগোনো। গত কয়েক দশক ধরে বিশ্ব অর্থনীতির স্রোত অদৃশ্য সুতার মতো গতিপথ বদলাতে বদলাতে এগিয়েছে। এই যাত্রায় চীন ছিল এক বিশাল আলোকস্তম্ভ। বিশ্বের কারখানা” হিসেবে তার উত্থান কেবল উৎপাদনের নয়, এক নতুন অর্থনৈতিক ইতিহাসের জন্ম দিয়েছে।

শুরুতে চীনের শিল্পায়ন ছিল একটি জটিল প্রক্রিয়া, যার প্রধান লক্ষ্য ছিল কৃষিভিত্তিক অর্থনীতি থেকে শিল্প ও প্রযুক্তি-নির্ভর অর্থনীতিতে উত্তরণ। এই প্রক্রিয়াটি চীনা কমিউনিস্ট পার্টি (সিসিপি)-এর নেতৃত্বে সম্পন্ন হয়েছে এবং এর গতি ছিল অত্যন্ত দ্রুত। চীনের শিল্পায়ন মূলত দুইটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়ের মধ্য দিয়ে এগিয়েছে। প্রথম পর্যায়টি শুরু হয় ১৯৪৯ সালে গণপ্রজাতন্ত্রী চীন প্রতিষ্ঠার পর। সে সময় দেশটি সোভিয়েত মডেল অনুসরণ করে ভারী শিল্পকে অগ্রাধিকার দিয়ে ছিল। তাদের নীতিনির্ধারকরা বিশ্বাস করত যে দ্রুত শিল্পোন্নয়ন ঘটাতে হলে বড় কারখানা, ইস্পাত উৎপাদন এবং অবকাঠামোগত উন্নয়নকে কেন্দ্র করতে হবে। এই প্রেক্ষাপটেই শুরু হয় “গ্রেট লিপ ফরোয়ার্ড” নামে পরিচিত উদ্যোগ, যার মূল উদ্দেশ্য ছিল স্বল্প সময়ে শিল্প উৎপাদনে উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি ঘটানো। যদিও নীতিগত ভুল, দুর্বল পরিকল্পনা ও খাদ্যসংকটের কারণে এই উদ্যোগ কাঙ্ক্ষিত ফল দেয়নি, তবু বলা যায় এই সময়কাল চীনের দীর্ঘমেয়াদি শিল্পভিত্তি গঠনের প্রাথমিক ভিত তৈরি করে দেয়। দ্বিতীয় পর্যায় ১৯৭৮ সালে দেং জিয়াওপিংয়ের নেতৃত্বে চীন মৌলিকভাবে নীতি পরিবর্তন করে এবং “সংস্কার ও উন্মুক্তকরণ” নামে একটি নতুন অর্থনৈতিক ধারায় প্রবেশ করে।

বাজার অর্থনীতির উপাদানগুলো ধীরে ধীরে গ্রহণ করতে শুরু করে, কৃষি ও শিল্পে প্রতিযোগিতা উন্মুক্ত করা হয় এবং বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপন করা হয়, যেখানে বিদেশি বিনিয়োগকে সক্রিয়ভাবে স্বাগত জানানো হয়। এর ফলে চীন বৈশ্বিক সরবরাহ শৃঙ্খলে দ্রুত একীভূত হতে শুরু করে, বিদেশি প্রযুক্তি ও পুঁজি আকর্ষণ করে, এবং শ্রমনির্ভর শিল্পের মাধ্যমে রপ্তানিমুখী অর্থনীতি গড়ে তোলে। এই নীতির ফলেই চীন কয়েক দশকের মধ্যে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতিতে পরিণত হয় এবং বর্তমানে বৈশ্বিক শিল্প ও বাণিজ্যের অন্যতম প্রধান শক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ফলে দীর্ঘ সময় বহুজাতিক কোম্পানিগুলো চীনকে বেছে নিয়ে বাণিজ্য করেছে। কিন্তু পৃথিবীর বাণিজ্যের মানচিত্র কখনোই চিরস্থায়ী নয়। বাড়তি শ্রম ব্যয়, বাণিজ্যিক উত্তেজনা আর ভূরাজনৈতিক অস্থিরতা চীনকে একক কেন্দ্র হিসেবে স্থায়ী করে রাখার ঝুঁকি বাড়িয়েছে দিয়েছে। তখনই জন্ম নেয় নতুন কৌশল- যাকে বলা হচ্ছে “চায়না প্লাস ওয়ান।”

এর মর্মার্থ সহজ: উৎপাদনের মূল কেন্দ্র চীনে থাকলেও আরেকটি দেশে বিকল্প ঘাঁটি গড়ে তোলা। এটি যেন বাণিজ্যের নিরাপত্তা বলয়, যেখানে কোম্পানিগুলো ঝুঁকি ছড়িয়ে দেয় ভিন্ন ভিন্ন স্থানে। ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়া, ভারত কিংবা বাংলাদেশ-সবাই এই কৌশলের সম্ভাব্য অংশীদার। এক কথায়, চীনকে বাদ নয়, বরং চীনের পাশাপাশি নতুন দিগন্তের সন্ধান। সেখান থেকেই শুরু হয় নতুন এক অধ্যায়-যেখানে শুধু পণ্য নয়, বদলে যেতে থাকে রাষ্ট্র ও বাজারের সম্পর্কের ভাষাও। বহুজাতিক কোম্পানির কাছে এটি যেন এক অদৃশ্য আকর্ষণ, যেখানে শ্রম, উৎপাদনশীলতা আর অবকাঠামো মিলেমিশে তৈরি করেছে নতুন এক যুগ।

এই কৌশলের ফলে সবচেয়ে বেশি আলো কুড়িয়েছে এশিয়া। শতাব্দীর পালাবদলে ইউরোপ ও আমেরিকা যেখানে বাজারের মেরুদণ্ড ছিল, সেখানে এখন এশিয়া হয়ে উঠছে নতুন আকর্ষণ। তরুণ জনশক্তি, দ্রুত নগরায়ন, প্রযুক্তিগত অগ্রগতি আর ভোক্তা শ্রেণির বিস্তার-সবকিছু মিলিয়ে এশিয়া যেন ভবিষ্যতের অর্থনৈতিক শক্তিকেন্দ্র। ভিয়েতনাম ইতোমধ্যে ইলেকট্রনিক্স ও টেক্সটাইল খাতে নিজের অবস্থান পাকা-পোক্ত করেছে। ভারত প্রযুক্তি ও সেবা খাতে শক্তিশালী প্রতিযোগী হিসেবে উঠছে। ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ডও বিনিয়োগকারীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছে। এই অঞ্চলের প্রতিটি দেশ যেন নিজেকে বিশ্বের নতুন বিনিয়োগ মানচিত্রে জায়গা করে নিতে প্রতিযোগিতায় নেমেছে।

'চায়না প্লাস ওয়ান' কৌশলের পেছনে রয়েছে তিনটি শক্তিশালী চালিকাশক্তি। প্রথমত, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে বাণিজ্যিক এবং প্রযুক্তিগত প্রতিযোগিতা অনেক কোম্পানিকে বিকল্প বাজার খুঁজতে বাধ্য করেছে। শুল্ক আরোপ ও আমদানি নিষেধাজ্ঞার মতো পদক্ষেপগুলো তাদেরকে এমন একটি নিরাপদ ভূখণ্ডের সন্ধান দিবে, যেখানে তারা নির্বিঘ্নে উৎপাদন চালিয়ে যেতে পারে। দ্বিতীয়ত, চীনে শ্রম ব্যয় ক্রমবর্ধমান হারে বেড়েছে, যা একসময় তার প্রধান প্রতিযোগিতামূলক সুবিধা ছিল। এর ফলে, তুলনামূলকভাবে সস্তা শ্রমের দেশগুলো বহুজাতিক বিনিয়োগকারীদের কাছে নতুন করে আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে। তৃতীয়ত, কোভিড-১৯ মহামারী বিশ্বকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়েছে, কোনো একটি দেশে লকডাউন বা অন্য কোনো সংকট দেখা দিলে পুরো সরবরাহ শৃঙ্খল কীভাবে ভেঙে পড়তে পারে। এই অভিজ্ঞতা বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে তাদের উৎপাদন ঝুঁকি কমানোর জন্য নতুন গন্তব্যে বিনিয়োগ করতে উৎসাহিত করেছে।

“চায়না প্লাস ওয়ান” মানে চীনকে বাদ দেওয়া নয়, বরং চীনের পাশাপাশি নতুন সম্ভাবনার দেশকে যুক্ত করা। কারণ সরবরাহ শৃঙ্খলের এমন শক্ত ভিত্তি, অবকাঠামো ও প্রযুক্তিগত সক্ষমতা একমাত্র চীনই গড়ে তুলতে পেরেছে। তাই বাস্তবতায় এই কৌশল হলো ভারসাম্য রক্ষা-চীনকে রাখো, কিন্তু আরেকটি বিকল্পও তৈরি করো।

এই নতুন প্রক্রিয়ায় সবচেয়ে বেশি সুবিধাভোগী দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো ভিয়েতনাম। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, আন্তর্জাতিক বাণিজ্য চুক্তির বিস্তৃত নেটওয়ার্ক (যেমন: CPTPP এবং RCEP) এবং কৌশলগত ভৌগোলিক অবস্থান ভিয়েতনামকে বহুজাতিকদের জন্য শীর্ষ গন্তব্যে পরিণত করেছে। স্যামসাং, অ্যাপল এবং ইন্টেলের মতো প্রযুক্তি জায়ান্টরা ইতোমধ্যেই সেখানে ব্যাপক বিনিয়োগ করেছে। ভিয়েতনামের পর আলোচনায় রয়েছে ভারত, যার বিশাল জনসংখ্যা, সস্তা শ্রমশক্তি এবং দ্রুত বর্ধনশীল অভ্যন্তরীণ বাজার এক অপ্রতিরোধ্য শক্তি।

'মেক ইন ইন্ডিয়া' এবং উৎপাদন-সংযুক্ত প্রণোদনা কর্মসূচি বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। যদিও কিছু প্রশাসনিক জটিলতা এবং অবকাঠামোগত সীমাবদ্ধতা ভারতের অগ্রগতিকে কিছুটা শ্লথ করছে, তবুও মহাদেশীয় বাজার হিসেবে এর বিশালতা বহুজাতিকদের কাছে এক অপরিহার্য আকর্ষণ।

বাংলাদেশও এই নতুন ধারার একজন গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় হিসেবে আবির্ভূত হতে পারে। তৈরি পোশাক খাতে দেশের দীর্ঘমেয়াদি সাফল্য এবং বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম পোশাক রপ্তানিকারক হিসেবে তার অবস্থান বৈশ্বিক ব্র্যান্ডগুলোর আস্থা অর্জন করেছে। সস্তা শ্রম, তুলনামূলক কম উৎপাদন খরচ এবং বস্ত্রশিল্পের শক্তিশালী সরবরাহ শৃঙ্খল বাংলাদেশের প্রধান শক্তি।

দেশের অর্থনৈতিক অঞ্চল ও রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলের কার্যক্রম, বিনিয়োগবান্ধব নীতি এবং এলডিসি সুবিধাগুলো এটিকে প্রতিযোগিতামূলক অবস্থানে নিয়ে এসেছে। তবে একইসঙ্গে কিছু সীমাবদ্ধতাও এখানে বিদ্যমান-যেমন দুর্বল অবকাঠামো, বিদ্যুৎ ও জ্বালানির নির্ভরযোগ্যতার অভাব, শ্রম মানদণ্ড নিয়ে আন্তর্জাতিক চাপ এবং রাজনৈতিক ঝুঁকি। এই চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা না করলে বাংলাদেশ তার পূর্ণ সম্ভাবনা কাজে লাগাতে ব্যর্থ হতে পারে।

শুধু ভিয়েতনাম, ভারত কিংবা বাংলাদেশ নয়, ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়াও এই প্রতিযোগিতায় অংশ নিচ্ছে। ইন্দোনেশিয়ার বৃহৎ প্রাকৃতিক সম্পদ ও বাজার, থাইল্যান্ডের অটোমোবাইল শিল্পের দক্ষতা এবং মালয়েশিয়ার প্রযুক্তি খাত বহুজাতিক কোম্পানির জন্য বিশেষ আকর্ষণীয় হয়ে উঠছে। এক কথায় বলা যায়, পুরো দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এখন বিশ্বের নতুন বিনিয়োগ মানচিত্রে দ্রুত উত্থানশীল অঞ্চল।

'চায়না প্লাস ওয়ান' কেবল বিনিয়োগ স্থানান্তরের একটি কৌশল নয়, বরং এটি বৈশ্বিক শিল্পায়নের একটি নতুন ধারা। এর ফলে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে প্রত্যক্ষ বৈদেশিক বিনিয়োগ (FDI) বাড়বে, যা শিল্পায়ন ত্বরান্বিত করবে এবং নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করবে। বহুজাতিক কোম্পানির অংশীদার হওয়ার মাধ্যমে এই দেশগুলো বৈশ্বিক সরবরাহ শৃঙ্খলে আরও গভীরভাবে অন্তর্ভুক্ত হবে। এর পাশাপাশি, অবকাঠামো উন্নয়ন, প্রযুক্তি স্থানান্তর এবং আঞ্চলিক সংযোগ বৃদ্ধি এই দেশগুলোর সামগ্রিক অর্থনীতিকে শক্তিশালী করবে। এই বিনিয়োগ প্রবাহের ফলে অনেক ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটতে পারে।

প্রথমত, শিল্পায়ন আরও দ্রুত ত্বরান্বিত হবে, কর্মসংস্থান বাড়বে এবং নতুন দক্ষ শ্রমশক্তির চাহিদা তৈরি হবে। দ্বিতীয়ত, বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন বাড়বে, যা অর্থনীতিকে শক্তিশালী করবে। তৃতীয়ত, বৈশ্বিক সরবরাহ শৃঙ্খলে গভীরভাবে সম্পৃক্ত হওয়ার ফলে প্রযুক্তি স্থানান্তর ও উদ্ভাবনী দক্ষতা বৃদ্ধি পাবে। চতুর্থত, আঞ্চলিক সংযোগ বৃদ্ধি পাবে, কারণ বহুজাতিকরা কেবল উৎপাদন স্থাপন করে থেমে থাকে না, তারা সড়ক, বন্দর ও লজিস্টিক খাতেও বিনিয়োগ করে।

তবে সুযোগের পাশাপাশি চ্যালেঞ্জগুলোও কম নয়। বাংলাদেশসহ অনেক দেশের অবকাঠামো এখনো বৈশ্বিক মানদণ্ডে পৌঁছায়নি, যা উন্নত প্রযুক্তির শিল্প স্থাপনের জন্য বড় বাধা। দক্ষ শ্রমশক্তির অভাব উচ্চপ্রযুক্তি খাতের বিকাশে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করতে পারে। নীতিগত অনিশ্চয়তা এবং আমলাতান্ত্রিক জটিলতা বিনিয়োগকারীদের নিরুৎসাহিত করতে পারে। এছাড়াও, পরিবেশবান্ধব উৎপাদন এবং টেকসই মানদণ্ড পূরণ এখন আর ঐচ্ছিক নয়, বরং আন্তর্জাতিক বাজারে টিকে থাকার জন্য অপরিহার্য শর্ত। সর্বোপরি, এই দেশগুলোকে নিজেদের মধ্যে তীব্র প্রতিযোগিতার মুখোমুখি হতে হচ্ছে, যেখানে প্রত্যেককেই প্রমাণ করতে হবে তারা কতটা আকর্ষণীয় ও স্থিতিশীল বিনিয়োগ পরিবেশ দিতে পারে।

এই প্রেক্ষাপটকে কাজে লাগানো বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত জরুরি। শুধুমাত্র তৈরি পোশাক খাতের ওপর নির্ভর না করে দেশের শিল্প খাতকে বহুমুখী করতে হবে। তথ্যপ্রযুক্তি, ফার্মাসিউটিক্যালস, ইলেকট্রনিক্স এবং লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং-এর মতো নতুন খাতগুলোকে অগ্রাধিকার দিতে বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন। পাশাপাশি, অবকাঠামো উন্নয়ন, বিশেষ করে বন্দর ব্যবস্থাপনা ও লজিস্টিক খরচ কমানো এখন সময়ের দাবি। শ্রমিকদের দক্ষতা বৃদ্ধি, কারিগরি শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ কর্মসূচির সম্প্রসারণ ছাড়া উন্নত শিল্পায়ন সম্ভব নয়। বিনিয়োগবান্ধব নীতিমালা আরও স্বচ্ছ ও স্থিতিশীল করতে হবে, যাতে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা দীর্ঘমেয়াদি আস্থা রাখতে পারেন।

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, 'চায়না প্লাস ওয়ান' কৌশল একটি সাময়িক প্রবণতা নয়, বরং এটি বৈশ্বিক অর্থনীতির একটি নতুন বাস্তবতা। দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলো এখন বিশ্বের কারখানার নতুন রূপকল্প গড়ার পথে। বাংলাদেশসহ অন্যান্য দেশ যদি সময়োপযোগী পদক্ষেপ নিতে পারে, তবে এই কৌশল তাদের জন্য শিল্পায়ন, কর্মসংস্থান এবং বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে। তবে, যদি এই সুযোগকে কাজে লাগাতে দেরি হয়, তাহলে অন্য দেশগুলো এই প্রতিযোগিতায় এগিয়ে যাবে। এটিই 'চায়না প্লাস ওয়ান' কৌশলের সবচেয়ে বড় শিক্ষা-যে দেশ যত দ্রুত মানিয়ে নিতে পারবে, তারাই ভবিষ্যতের বৈশ্বিক বাণিজ্যের নিয়ন্ত্রক হবে।

এখানে বাংলাদেশের গল্পও নতুনভাবে শুরু হতে পারে। তৈরি পোশাক শিল্প আমাদের প্রধান চালিকাশক্তি হলেও এখন দরকার বহুমুখীকরণ। তথ্যপ্রযুক্তি, ওষুধশিল্প, চামড়া ও কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্য-এসব খাতে রয়েছে অফুরন্ত সম্ভাবনা। বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থানও কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ। দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সংযোগস্থলে দাঁড়িয়ে আমরা সহজেই আঞ্চলিক বাজারে প্রবেশ করতে পারি। চায়না প্লাস ওয়ান কৌশলের অংশ হতে হলে অবকাঠামো উন্নয়ন, নীতি সহায়তা এবং বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করা অপরিহার্য।

তবে একটি সত্য অস্বীকার করা যায় না: “চায়না প্লাস ওয়ান” মানে চীনকে বাদ দেওয়া নয়, বরং চীনের পাশাপাশি নতুন সম্ভাবনার দেশকে যুক্ত করা। কারণ সরবরাহ শৃঙ্খলের এমন শক্ত ভিত্তি, অবকাঠামো ও প্রযুক্তিগত সক্ষমতা একমাত্র চীনই গড়ে তুলতে পেরেছে। তাই বাস্তবতায় এই কৌশল হলো ভারসাম্য রক্ষা-চীনকে রাখো, কিন্তু আরেকটি বিকল্পও তৈরি করো।

লেখক : আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বিষয়ক বিশ্লেষক।

এইচআর/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।