মিছে মজে থাকা!

তুষার আবদুল্লাহ তুষার আবদুল্লাহ
প্রকাশিত: ১০:৪৩ এএম, ১৯ জুন ২০১৮

এই মূহুর্তে ফুটবল নিয়ে মজে আছি আমরা। কেনাকাটা নিয়ে হুলুস্থুল কেটেছে। মাঝে ছেলেদের মেয়েদের টি টোয়েন্টি ছিল। আসা যাওয়া করেছে বিএনপি-আওয়ামী লীগ। খালেদা-হাসিনা, ট্রাম্প-ঊণ, অপরাধী পোলা-মাইয়া ,ছিল ভোট-বাজেট।

এখন ফুটবলের মাঝেই গাজীপুরের ভোট, নির্বাচন কমিশন চলে আসবে আলোচনায়। সিলেট, রাজশাহী, বরিশালের নির্বাচন নিয়ে কথা উঠবে। মেসি, নেইমার, মোহাম্মদ সালাহ কিংবা রোনালদো গোল করতে পারলো কি পারলো কি পারলোনা সেই দুঃশ্চিন্তা চলে যাবে খালেদা জিয়া নির্বাচনের আগে কারাগার থেকে বের হচ্ছেনতো? বিএনপি শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে যাচ্ছেতো।

ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, জার্মানি, পর্তুগাল কে ছিটকে পড়লো কোয়ার্টার ফাইনালের আগে,সেই বুক ধরফরানির মধ্যে,বুক কাঁপবে চার সিটিতে আওয়ামী লীগ জিতে আসতে পারবে কিনা? আগামী জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের পথচিত্র নিয়েও জন দুঃশ্চিন্তা থাকবে। এরই মধ্যে শোনা যাবে হাম্বা ডাক। সবাই মজে যাবে কোরবানির হাটে।

আমরা মজে যেতে শিখেছি বেশ। এখানে আমরা মনোযোগী শিক্ষার্থী বটে। সুযোগ মতো যে যার লাভ-ক্ষতি দেখে হয় মজে যাই, না হয় সটকে পড়ি।গণ মজে যাওয়ার ঘটনাও আছে। আমরা তো এমনি এমনি মজি। কিছু না বুঝেই মজে যাই।

বিশ্বকাপ এসেছে তাই নেইমার –মেসি-মোহাম্মদ সালাহ নিয়ে দুই চারটা কথা বলতেই হবে। না বললে সমাজে ইজ্জত থাকেনা। গাড়িকে চলন্ত অবস্থায় কোন ধনকুবের পুত্র ধর্ষণ করেছে, ব্যস গণ গালিগালাজ শুরু হয়ে গেল। মুন্সিগঞ্জে প্রকাশক হত্যা করা হলো, সেখানেও গণ হা পিত্যেস ও প্রতিবাদের ঢঙ। পাহাড় ধ্বসে মৃত্যু, এটিএম শামসুজ্জামান মারা যাননি, গুজবের খবরই খবর করলো কোন কোন চ্যানেল তাই নিয়ে ধিক্কারে মজে যাওয়া। আমরা মজে গিয়ে বেশ ভাল থাকি হয়তো। ভুলে থাকি হয়তো, ভুলে থাকার চেষ্টা করতেই হয়তো আমাদের এই মজে থাকা।

এমনটা ভাবতাম, ভেবেছি এক সময়। এখন দেখছি ঠিক এমন নয়। আমরা যখন তখন যে কোন কিছুতে মজে যাই আমাদের ব্যর্থতাকে ঢেকে রাখতে। ব্যর্থতাকে ভুলে থাকতে। আমাদের অনেক না পারা আছে। সেই না পারা বিষয় গুলোকে, সত্য বা বাস্তবে রূপ দিতে না পারাকে ভুলিয়ে রাখার টনিকই মজে যাওয়া, মজে থাকা।

আমাদের ব্যর্থতার কারণ গুলো খুঁজে বের করতে কোন প্যাথলজি পরীক্ষার প্রয়োজন নেই। চোখ দেখেই বুঝা যায় আমাদের রোগ কি। আমরা সকলে একটি রোগেই ভুগছি। হীণমন্যতা। কেন এই হীনম্মন্যতা? আমরা কয়জন একে অপরের চোখে চোখ রেখে কথা বলার সাহস বা যোগ্যতা রাখি।

সংখ্যাটি কতো বলা মুশকিল। কারণ নিজেদের কাছেই আমরা নিজেরা অপরাধী। কারো বিরুদ্ধে অন্যায় করা হলে তার পাশে গিয়ে আমরা শেষ কবে দাঁড়িয়ে ছিলাম? দাঁড়াইনি, দাঁড়াতে শিখিনি। কারণ আমরা সব সময়ই ভেবেছি এই অন্যায়টিতো আমার সঙ্গে হয়নি। আমিতো বেঁচে গেছি। খামোখা কারো বিরাগভাজন হবার দরকার কি? নগদে লাভ কিছু নয় ক্ষতিই হবে। আমরা সকলেই নগদের লাভ লোকসান হিসেব মিলিয়ে দেখতে ব্যস্ত।

জীবনের চূড়ান্ত হিসাব এখানেই মিলিয়ে নিতে শিখে গেছি। কিন্তু জীবনের হিসেব, সেটি ব্যক্তি, সমাজ, রাষ্ট্র যাই হোক না কেন, তার কোন চুড়ান্ত হিসেব নেই। আমরা ভুলে বসে আছি সমাঝোতার হিসেব কখনো অমীমাংসিত থাকেনা।

জীবনের গণিত মীমাংসা খুঁজবেই। খুঁজতে গিয়েই সে সত্য সত্য সূত্রের পথে এগোবে। আমরা জীবন যাপনে নিজের রুচি, চিন্তার মূল্যায়ণ করতে পারিনি। তাই অপর দ্বারা প্রভাবিত হয়ে পড়ি। ভাবি অন্যের পথই বেশি সুগন্ধি ফুল দ্বারা আচ্ছাদিত।

নিজের ইচ্ছের মৃত্যু ঘটাই নিজেই। অন্যের ইচ্ছের ফুলে সৌরভ ভাবি। আসলে তা নয়। নিজের শক্তির চেয়ে চরম শক্তি আর নেই। তাই অন্যের মতো করে না বেঁচে থেকে, নিজের মতো করে বাঁচতে শিখলে দেখবো-আমার যে কোন প্রতিবাদ বা জয়ধ্বনির শক্তি কতো বলবান। সমাজ, রাষ্ট্র সেই ধ্বনিকে সমীহ করবে, অভিনন্দন জানাবে। তাই ব্যর্থতার ঢাকার শ্যাওলা জমা মজা পুকুরে মজে না থেকে, ভেসে না থেকে আমাদের সাতঁরে পাড়ি দিতে হবে সত্যের স্বচ্ছ পুকুরে।

লেখক : হেড অব নিউজ, সময় টিভি।

এইচআর/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।