হেয়ালি ভরা ভুল!

অঘোর মন্ডল
অঘোর মন্ডল অঘোর মন্ডল , এডিটর, দীপ্ত টিভি
প্রকাশিত: ১০:২০ এএম, ১০ নভেম্বর ২০১৯

তিনি ক্রীড়ামনস্ক। '৯১ এ বিএনপি ক্ষমতায় আসার আগ পর্যন্ত সেই সময়ের ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী, ঢাকার সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকাও জানতেন না! যে ব্রাদার্স ইউনিয়নের জন্মের সময় ক্লাবটার সাথে জড়িয়ে ছিলেন সাদেক হোসেন খোকা তিনিসহ গোপীবাগবাসী কেউ জানতেন তেমন দাবি কেউ করছেন না! এটা হয়তো ভদ্রলোকের দুর্ভাগ্য! কিন্তু তিনি-ই আবার সৌভাগ্যবান। সেই সময়ের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিএনপির সাবেক মহাসচিব লে. কর্নেল (অব.) মোস্তাফিজুর রহমান ব্রার্দাসের গভর্নিংবডির চেয়ারম্যান হওয়ার সাথে সাথে লোকমান হোসেন ভুঁইয়াও ঢুকে পাড়লেন ক্রীড়াঙ্গনে। তবে তাঁর পরিচিতি, ক্ষমতার প্রভাব সব কিছু দেখতে শুরু করলো ক্রীড়াঙ্গনের মানুষ তাঁর পা পড়লো যখন মোহামেডানে। সেটাও সেই মোস্তাফিজুর রহমানের সৌজন্যে। কারণ, মোহামেডানের গভর্নিংবডির চেয়ারম্যানও তখন বিএনপির সাবেক পররাষ্ট্র মন্ত্রী। তবে মোহামেডান অন্তপ্রাণ ক্রীড়াবিদ, নিবেদিত প্রাণ ক্রীড়া সংগঠকরা কখনও স্বাভাবিকভাবে নিতে পারেননি এই হাইব্রিড ক্রীড়া সংগঠককে।

তবে দারুণ এক চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন মানুষ তিনি। যে কারণে সময়ের স্রোতে ভাসতে হয় কীভাবে তিনি সেটা জানেন। রাজনীতির ছাতা কখন কার দিকে ধরতে হয়, সে ব্যাপারে তিনি দারুণ অভিজ্ঞ। তাই ক্রীড়াঙ্গন থেকে রাজনৈতিক অঙ্গন সবখানে যখন বৈরি সময় চলেছে, তিনি ছিলেন স্বপদে। মোহামেডানের মত ক্লাবের সাফল্যের ধারা যখন দারিদ্র্যনীতি অনুসারী হয়ে পড়েছে, কিন্তু তিনি অর্থ-বিত্তে, ক্ষমতায় অর্থনীতির উন্নতির ধারাটা অনুসরণ করে চলেছেন। সেই মোহামেডানকে পুঁজি করে। মোহামেডান গরীব হয়েছে। কিন্তু ক্ষমতাবান আর ধনীদের সাথে সখ্য-বন্ধুত্ব বাড়িয়ে তিনি ক্রীড়াঙ্গনে বড় বড় পদে বসেছেন!

খুব সরল ভাবে বললে সমাজে এরকম চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের লোক দিনে দিনে বাড়ছে। কিন্তু সেই বাড়বাড়ন্তের মধ্যেও লোকমান হোসেন ভুঁইয়া বিরল শ্রেণির। কারণ, এদেশের রাজনীতিতে প্রবল দুই প্রতিপক্ষ আওয়ামী লীগ আর বিএনপি সেই দুটো দলের প্রধানের একজনের দেহরক্ষী থেকে আরেক দলের প্রধানের সঙ্গে তাঁর সরকারী বাসভবনে প্রবেশাধিকার পাওয়া, চা- কিংবা ডিনার পার্টিতে যোগ দেয়ার সুযোগ ক'জনে পেয়েছেন এদেশে? লোকমান সাহেব পেয়েছেন। সে বিবেচনায় তাঁকে 'ভি ভি এস' বলতেই হবে। সত্যিত ভেরি ভেরি স্পেশাল লোকমান।

আর সে কারণেই তিনি আলোচিত ক্যাসিনো কাণ্ডে র‌্যাবের হাতে আটক হওয়ার পর তার ঘনিষ্ট বন্ধু বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন বলেছিলেন; লোকমানকে মদ কেন, ওকে কোন দিন সিগারেটও খেতে দেখিনি! ও ক্যাসিনো চালায় এটা আমি জানতাম-ই না। একজন সাংসদ একজন আইনপ্রণেতা যখন এরকম সাক্ষ্য দিচ্ছেন তাতে জনমনে ধোঁয়াশা তৈরি হতে পারে। লোকমানকে কী বিনা দোষে আটক করা হয়েছে? ভাগ্য ভাল এখনও বিএনপির কোন লোক বলেননি; এটা বিএনপির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র! হয়তো বিএনপির লোকজনও বুঝতে পেরেছেন এইসব লোক তাদের দলের জন্যও বোঝা!

কিন্তু আওয়ামী লীগের সাংসদ এবং বিসিবি সভাপতি নিজে আবার বললেন, লোকমানের ব্যাপারে বিসিবি থেকে সিদ্ধান্ত নিতে হলে সময় দরকার। কারণ, তিনি বিসিবির পরিচালক। নির্বাচিত পরিচালক। কথাটা সত্যি। তবে এটাও ঐতিহাসিক সত্যি, বিসিবি সভাপতি তার পাশে যাদের নিয়ে কথাগুলো বলেছেন, লোকমান সাহেবদের প্ররোচণায় ২০০২ সালে বিসিবির নির্বাচিত পরিচালকদের একরকম জোর করে বোর্ড থেকে বের করে দেয়া হয়েছিল। তখন তারা কেউ কেউ বিএনপি পরিচয়ে সেই সময় বিএনপি এমপি এবং বিসিবি সভাপতির উপদেষ্টা হয়েছিলেন। সেই সাক্ষ্যপ্রমাণের অভাব নেই। সেই মামলা বাতিলও হয়নি। কিন্ত শুধু আলী আসগর লবি বাদে বাকি অনেকেই বিসিবিতে রয়ে গেছেন।

লোকমান শুধু নির্বাচিত পরিচালক নন। তার আগেও নির্বাচিত পরিচালকদের বিসিবি থেকে বের করে দেয়া হয়েছিল। কারণ, তাদের দোষ ছিল তারা আওয়ামী লীগ সরকারের সময় নির্বাচিত। লোকমান সাহেব ভাগ্যবান। ছাত্রজীবন থেকে বিএনপি করে, বেগম জিয়ার গাড়িতে ঝুলে, বেগম জিয়ার মাথায় ছাতা ধরে আওয়ামী লীগের সময় ক্ষমতার মাখনটা ভালোভাবে ভাগে পেলেন। র‌্যাবের হাতে আটক হওয়ার পর আবার আওয়ামী লীগের এমপি তার পক্ষে সাফাই গেয়ে বলছেন, তিনি নির্বাচিত পরিচালক। অতএব তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সময় লাগবে!’ শুধু আটক বা সাক্ষ্যপ্রমাণে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারছে না।‘পাকাপোক্ত সাক্ষ্যপ্রমাণ’ প্রমাণ লাগবে।

একজন ক্যাসিনো পরিচালনাকারী বাংলাদেশের আইনে জুয়াড়ি। কিন্তু জুয়া বাংলাদেশে কোন বৈধ বিষয় নয়। একজন জুয়াড়ি বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডে আছেন কী নেই সেটা বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের অ্যান্টি করাপশান ইউনিট তদন্ত করে দেখতে পারেন। তারা নিজেরা না পারলে বিষয়টা আইসিসির অ্যান্টি করাপশন ইউনিটকে দিয়ে খতিয়ে দেখতে পারেন। তা না হলে সাকিবের মত তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠতে পারে ভবিষতে, খোদ বিসিবির ভেতরেই ক্যাসিনো বা জুয়ার সঙ্গে জড়িত লোকজন আছেন। সাকিবের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত কিন্তু খুব দ্রুত হয়েছে। বিসিবির পরিচালকরা কী মনে করেন ক্যাসিনো কোনো জুয়া নয়। এটা নিয়ে আইসিসিকে জানানোর কী আছে! সাকিবের মত হেয়ালিতে ভরা ভুলের মাশুল তাদেরও দিতে হতে পারে।

লেখক : সিনিয়র জার্নালিস্ট ও কলামিস্ট।

এইচআর/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।