কুপ্রবৃত্তি রোধে সুকুমার বৃত্তি চর্চা

ড. মিল্টন বিশ্বাস
ড. মিল্টন বিশ্বাস ড. মিল্টন বিশ্বাস , অধ্যাপক, কলামিস্ট
প্রকাশিত: ১০:২৪ এএম, ০৫ মে ২০২২

মানুষ হবার জন্য যেসব গুণাবলি থাকা দরকার তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে, সামাজিক মূল্যবোধ লালন করা, মানবতা, সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্য রক্ষা করে জীবিকা নির্বাহ করা। কিন্তু এদেশে নির্বিশেষ শিক্ষিত কিংবা নিরক্ষর মানুষ শিষ্টাচার যথাযথভাবে মেনে চললেও মানবিকতায় এখনো আদর্শবাদী বাঙালি জাতি হিসেবে গড়ে উঠতে পারেনি। এজন্য এ সমাজে পাশবিকতা আছে, আছে অপরের ক্ষতি করে নিজে সুখী হওয়ার প্রচেষ্টা।

আমাদের সমাজ পুরুষতান্ত্রিক। এজন্য ধর্ষণ রোধে পুরুষ সমাজকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একদা বলেছিলেন, ‘পুরুষ সমাজকেও বলব, ধর্ষণটা তো পুরুষ সমাজ করে যাচ্ছে, পুরুষ সমাজেরও একটা আওয়াজ তোলা উচিত। খালি নারীরাই চিৎকার করে যাবে নাকি? নির্যাতিত হয়ে সব চিৎকার করবে আর নির্যাতনকারীর স্বজাতি যারা আছে তাদেরও এ ব্যাপারে সোচ্চার হওয়া উচিত বলে মনে করি।’

সংবাদপত্রের সূত্র অনুসারে, ২০২১ সালে ১ হাজার ২৫৩ নারী ও শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে। এর মধ্যে শিশু ৭৩৮ জন অর্থাৎ মোট ঘটনার প্রায় ৫৯ শতাংশ। এসব নারী ও শিশুর মধ্যে ৪৬ জনকে হত্যা করা হয়। একই বছর নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনাও বেড়েছে। আর তা আগের বছরগুলোর চেয়ে অনেক বেশি। করোনার আগে ২০১৯ সালের প্রথম ছয় মাসে দুই হাজারের বেশি নারী ও মেয়েশিশু নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ৭৩১ জন। যাদের মধ্যে হত্যা করা হয়েছিল ২৬ জনকে। ২০১৮ সালে সারাদেশে ৯শ ৪২টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে ধর্ষণ শেষে হত্যা করা হয় ৬৩ নারী ও শিশুকে।

অর্থাৎ, ২০১৮-এর ১২ মাসে যে পরিমাণ ধর্ষণ হয়েছে তার অর্ধেক সময়ে ২০১৯-এ ধর্ষণের পরিমাণ বেড়েছিল প্রায় দেড়গুণ। কয়েকবছর যাবৎ ক্রমবর্ধমান ধর্ষণ ও সামাজিক অবক্ষয়ের বিষয়ে উদ্বেগ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীর মতো অনেকেই বেশ কিছু সুপারিশ প্রদান করেছেন। কেবল ধর্ষণ নয় হত্যা, ছিনতাই-রাহাজানি থেকে মানুষকে মানবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার জন্য কুপ্রবৃত্তি রোধে আরো কিছু কার্যকর কর্মসূচি গ্রহণ করা জরুরি বলে মনে করছেন সকলে। বই পড়া ও পাঠাগার আন্দোলন এক্ষেত্রে ভালো ভূমিকা রাখতে পারে।

আসলে কুপ্রবৃত্তি বা পাশবিকতার প্রতি ঘৃণা ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য দরকার শিশুকাল থেকে সুকুমার বৃত্তির চর্চা করা। স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় কেবল নয় মাদ্রাসা, মসজিদ-মন্দির-গির্জা-প্যাগোডা ও হাট-বাজারের নিরক্ষর মানুষকে সৎ প্রবৃত্তির প্রতি অনুরাগী করে তুলতে হবে, নারীর প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টানোর জন্য প্রচার-প্রচারণা চালাতে হবে, অপরাধ করলে তার শাস্তি দ্রুত কার্যকর করার দৃষ্টান্তও তুলে ধরতে হবে।

বিচারহীনতার সংস্কৃতির কারণে অপরাধীরা ধরা-ছোঁয়ার বাইরেই থেকে যাচ্ছে- এধরনের অভিযোগ এখন অমূলক এটাও প্রমাণ করতে হবে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকেই। তবে শেষ পর্যন্ত সকলে স্বীকার করেন যে, সমাজের বিবেক জাগ্রত করা দরকার। এই সমাজের বিবেক জাগ্রত করার জন্য প্রয়োজন দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা। যে তরুণ সমাজ আজ ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত হচ্ছে তাদের তারুণ্যের শক্তিকে ভাল কাজে লাগানোর জন্য সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের ওপর জোর দিতে হবে।

২০১৬ সালের ১ জুলাই হলি আর্টিজানের ঘটনার পর আমরা শিক্ষিত যুবসমাজের দিকে মনোযোগ দিয়ে জঙ্গিবাদের ভূত থেকে তাদের রক্ষা করেছি। এখন প্রয়োজন আরো একটি যুদ্ধ- সামাজিক অবক্ষয় রোধে নারী-পুরুষ সকলকে সম্মিলিতভাবে সোচ্চার হওয়া।

সুকুমার বৃত্তি চর্চার প্রধান ক্ষেত্র হলো পারিবারিক জীবন। নিজের ছেলেমেয়েদের সঙ্গে সময় কাটাতে হবে আমাদের। তাদের মনের কথাটা শোনার চেষ্টা করা দরকার। তাদের সঙ্গ দিতে হবে। তাদের কী চাহিদা সেটা জানা, তাদেরকে আরও কাছে টেনে নেওয়া, তাদের ভালো-মন্দ, সমস্যা দেখা, উঠতি বয়সের ছেলেমেয়েরা যেন বাবা-মায়ের সঙ্গে মন খুলে কথা বলতে পারে সে সুযোগটা তাদের দেওয়া খুব প্রয়োজন। তাহলেই সুকুমার বৃত্তি চর্চার দ্বার উদঘাটন সম্ভব।

সন্তানেরা কীভাবে চলছে, কী করছে, কাদের সঙ্গে মিশছে-সেদিকে ‘বিশেষভাবে দৃষ্টি’ দেওয়ার জন্য অভিভাবকদের মনোযোগী হতে হবে। সামাজিক অবক্ষয় রোধে পারিবারিক ও সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে প্রত্যেকটা মানুষকে সচেতনতার পথ পাড়ি দিতে হবে। যৌন নির্যাতন কাকে বলে, সেটি শিশুরা কীভাবে চিহ্নিত করবে, সাত ও দশ বছর বয়সী ছোট শিশুদের এমন জটিল বিষয়েও ধীরে ধীরে বোঝাতে হবে।

তাদের শিখাতে হবে কোন স্পর্শটা ভালো আর কোনটা খারাপ। পিতা-মাতা একটি শিশুকে তার শরীরের তিনটি জায়গা সম্পর্কে জানাতে পারেন। তার ঠোঁট, গোপনাঙ্গ ও পায়ুপথ। তাকে জানাতে হবে এই তিনটা তার বিশেষ জায়গা। এখানে বাবা-মা গোসল করানো বা পরিষ্কার করার সময় ছাড়া অন্য কেউ স্পর্শ করতে পারবে না। কেউ সেটি করলে সে কি করবে এবং বাবা মাকে যে জানাবে সেটিও শেখাতে হবে। এতে শিশুরা সচেতন থাকবে। এছাড়া শিশুর আচরণ পরিবর্তন হচ্ছে কিনা তা খেয়াল করতে হবে। তার আচরণ থেকেও অনেক সময় অনেক কিছু বোঝা সম্ভব। এজন্য তার আচরণের পরিবর্তন খেয়াল করতে হবে। শিশুর কথা শুনতে হবে ও তাকে বিশ্বাস করতে হবে।

পরিবারের মমতা, ভালোবাসা, সুখ-শান্তি, সৌহার্দ্য, মা-বাবার মধ্যে সুসম্পর্ক, পরিবারের অন্য সদস্যদের মধ্যে অভ্যন্তরীণ সম্প্রীতি সন্তানের মানসিক বিকাশ সুগঠিত করে। ভালো ও নির্ভরশীল বিশ্বস্ত বন্ধু, সুন্দর ও নিরাপদ বাসস্থান, অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতা- এসব বিষয় তাদেরকে সুন্দর জীবন-যাপনে অভিলাষী করে তোলে। অর্থাৎ শিশুর বেড়ে ওঠা ও মানস গঠনে পরিবারের ভূমিকা অনস্বীকার্য। কেবল শিশু নয় যুবসমাজকে গড়ে তুলতে হবে শুভবোধ জাগ্রত করার মধ্য দিয়ে।

সুকুমার বৃত্তি চর্চার জন্য পারিবারিক ও সামাজিক শিক্ষার পাশাপাশি রাষ্ট্রীয় শিক্ষাব্যবস্থা সহায়ক হয়ে ওঠে। খেলা-ধুলা, সংগীত, নৃত্য, আবৃত্তি ও চিত্রাংকন একজন শিশুর মানসিক বিকাশে ব্যাপক প্রভাব রাখে। বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তার ভেতর বেশ কিছু গুণের বিকাশ ঘটে। অপরের দোষ খুঁজে বেড়ানোর চেয়ে সে নিজের দায়িত্ব নিয়ে সচেতন হয়। অপরাধ দেখে সে নীরব থাকে না। কারণ কোনোরকম অন্যায় ও নিষ্ঠুরতায় সে আগ্রহী নয়। আসলে সুশিক্ষিত ও সংস্কৃতিমনারা অন্যায় ও নিষ্ঠুরতাকে মনে-প্রাণে ঘৃণা করে, তাদের মধ্যে নিষ্ঠুরতা একেবারে অনুপস্থিত থাকে তা সুকুমার বৃত্তি চর্চাকারীকে লক্ষ্য করলেই বোঝা যায়।

অন্যদিকে বিত্ত, ক্ষমতা, সামাজিক মর্যাদা থাকার পরও কেবল সামাজিক মূল্যবোধ আর যুক্তিবিচারের অভাবে একজন মানুষ প্রকৃত মানুষ হিসেবে চিহ্নিত হয় না। সামাজিক মূল্যবোধ হলো- স্থূলতার পরিবর্তে সূক্ষ্ম রুচির অনুশীলন, আরামের চেয়ে সৌন্দর্য, লাভজনক কর্মকাণ্ডের চেয়ে আনন্দপ্রদ সুকুমারবিদ্যাকে শ্রেষ্ঠ মনে করার ভাবনা। জীবনের সকল বিষয়ে বিচারবুদ্ধির কষ্টিপাথরে যাচাই করে নেবার প্রবণতাও মূল্যবোধের অন্যতম দিক। সমাজে এক শ্রেণির মানুষ আছে যারা অর্থবিত্তের পূজারি, তাদের বিচারবুদ্ধি স্বার্থের দ্বারা কলঙ্কিত, স্থূল সুখই তাদের কাম্য। তাদের উদ্দেশ্য সৌন্দর্য বৃদ্ধি নয়, অসুন্দর আরামই তাদের উদ্দেশ্য। আমাদের চারপাশে এরা বিচরণ করে এবং নানাবিধ অপকর্মের হোতা হয়ে ওঠে। পক্ষান্তরে সামাজিক মূল্যবোধ লালনকারী অপরের কল্যাণই বড় বলে মনে করে। এরা আইনকে অবজ্ঞা নয়, মেনে চলে।

সুকুমার বৃত্তি চর্চা ও সামাজিক মূল্যবোধকে অনুশীলন করে মানুষের ভেতর ধর্ষণ ও হত্যাবিরোধী মনোভাব সৃষ্টি করার জন্য সবাই মিলে কাজ করতে হবে। নোংরা মানসিকতা ও অসৎ সঙ্গ যুব সমাজকে বিভ্রান্তির পথে চালিত করলে তা থেকে সঠিক জীবনে তাদের ফিরিয়ে আনতে হবে। এজন্য সন্তানদের সঙ্গে অভিভাবকদের সম্পর্ক আরও ‘নিবিড় ও দৃঢ়’ করার পাশাপাশি তাদের সুশিক্ষায় শিক্ষিত করে তোলার চেষ্টা আবশ্যক।

আমাদের শক্তি আমাদের তারুণ্য। এদেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৩০ শতাংশ অর্থাৎ প্রায় ৫ কোটি তরুণ। দেশের অগ্রগতিতে তাদের অবদান দিন দিন স্পষ্ট হচ্ছে। এরা মিথ্যা শক্তিকে যেমন গুঁড়িয়ে দিতে পারে তেমনি ভূমিকা রাখতে পারে সমাজ-বিপ্লবের মাধ্যমে দেশ গড়তে। জাতির কাণ্ডারির ভূমিকায় শক্ত হাতে হাল ধরার ক্ষমতাও এদের আছে। কোনো অন্যায় কিংবা মিথ্যা শক্তির কাছে এরা কখনো মাথা নত করেনি আর করবেও না কোনোদিন।

বাংলাদেশে এখন প্রতি তিনজনে দুজনই উপার্জনক্ষম। নির্ভরশীল মানুষের সংখ্যা কমে যাওয়ায় জাতীয় সঞ্চয় বেড়েছে; অর্থনীতি সবল হয়েছে। বাংলাদেশে এখন ১০ থেকে ২৪ বছর বয়সী তরুণের সংখ্যা পৌনে পাঁচ কোটি। এর সঙ্গে ২৫ থেকে ৪০ বছর বয়সী যুব জনসংখ্যাকে ধরলে বলা যায় যে জনসংখ্যার তিন ভাগের দুই ভাগই টগবগে তরুণ। বিপুলসংখ্যক তরুণ জনগোষ্ঠীর ‘উন্নতি করার’ তীব্র আকাঙ্ক্ষাকে কাজে লাগাতে হবে। এটা একটা সামাজিক-পুঁজি।

তরুণ প্রজন্মকে শিক্ষিত ও দক্ষ করে তোলার দায়িত্ব পালন করছে বর্তমান সরকার। এখন দরকার অপরাধের জগৎ থেকে তাদের রক্ষা করা। কারণ দেশের এই তরুণ জনগোষ্ঠীকে নিয়ে বিপদ ঘনিয়ে এসেছে। সামাজিক অবক্ষয়ের ব্যাপক বিস্তারের কারণে নানাবিধ অপকর্মে জড়িত হচ্ছে তারা। ধর্ষণ ও সংঘবদ্ধ হত্যাকাণ্ডের মতো অপরাধে সক্রিয় হয়েছে শিক্ষিত-অশিক্ষিত যুব সমাজ। কে তাদের রক্ষা করবে? সমাজের ভেতর-বাইরে তারা দেখছে ক্ষমতাবানদের দাপট ও যথেচ্ছাচার। অপরাধ করেও রক্ষা পাচ্ছে কেউ কেউ। ফলে সমাজের আনাচে-কানাচে শক্ত আস্তানা গেড়েছে তারা। সেখানকার প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় তরুণরা সমাজের ভেতর দুর্বল মানুষ ও নারীদের নিগৃহীত করার সুযোগ নিচ্ছে।

জঙ্গিবাদ ও মাদকাসক্ত থেকে যুবসমাজকে যেমন রক্ষা করা গেছে তেমনি এখন দরকার সামাজিক অবক্ষয়ের নোংরা জগত থেকে তাদের রক্ষা করা। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় তরুণ সমাজকে অগ্রণী ভূমিকা পালন করার জন্য অনুপ্রেরণা দিতে হবে। দেশে বর্তমানে ৪৭ শতাংশ শিক্ষিত বেকার রয়েছে এবং দিন দিন এই সংখ্যা বাড়ায় চাহিদা মোতাবেক সুষ্ঠু কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হচ্ছে না। এর সঙ্গে জড়িত আছে বিএনপি-জামায়াত সৃষ্ট রাজনৈতিক অস্থিরতার পাঁয়তারা, বিপুল বিনিয়োগ না থাকা এবং পর্যাপ্ত নতুন কর্মসংস্থান বৃদ্ধির সুযোগ না হওয়া।

পশ্চিমা বিশ্বে যেখানে প্রতিবছর নতুন নতুন কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হচ্ছে সেখানে আমাদের স্থানীয় পর্যায়ে চাকরি খুঁজতে তরুণদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। বেকার সমস্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আর্থ-সামাজিক টানাপোড়েন সৃষ্টি হচ্ছে। সন্ত্রাস, হত্যা ও রাহাজানি বাড়ার সঙ্গে বেকারদের সংশ্লিষ্টতা আবিষ্কার করেছেন গবেষকরা। অপরাধী গোষ্ঠীর টার্গেটে পরিণত হয়েছে এসব বেকার কিন্তু শিক্ষিত যুব সমাজ। যুব সমাজকে অপরাধীদের খপ্পর থেকে রক্ষার জন্য জাতীয় পর্যায় থেকে নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি হয়ে পড়েছে।

সুকুমার বৃত্তি চর্চার পাশাপাশি জাতীয় পাঠ্যক্রম তৈরির সময় সামাজিক অপরাধ ও অপরাধের শাস্তি সম্পর্কে পঠন-পাঠন বাধ্যতামূলক করা দরকার। এমনকি ধর্ষণ ও হত্যার বিরুদ্ধে জনসচেতনতা তৈরিতে ইমাম ও আলেমদের নিয়ে ধর্ম মন্ত্রণালয় একসঙ্গে কাজ করতে পারে। সামাজিক অপরাধ রোধে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থার রয়েছে ব্যাপক সাফল্য। তবে অপরাধের ব্যাপকতা বৃদ্ধির কারণে আমাদের সমাজ আজ নানাভাবে হুমকির সম্মুখীন। এই অবস্থা থেকে উত্তরণ এককভাবে কোনো সরকারের পক্ষে সম্ভব নয়। এর জন্য প্রয়োজন সম্মিলিত সহযোগিতা, যা বাংলাদেশে করে দেখাতে পারে।

সুকুমার বৃত্তি চর্চার অন্যতম দিক হলো- অপরের সুবিধা-অসুবিধা, মতামত ও অনুভূতির প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা শিশুকাল থেকে অভ্যাস করতে হয়। অন্যের অপরাধ ও সহিংসতা দেখার মাধ্যমে শিশুর মনে সহিংসতার ছাপ বসে যায়। অনেকে অনুকরণ করে শিখে থাকে সহিংসতা। অনেকে অপরাধীকে নির্বিঘ্নে চলাফেরা করতে দেখে। সতর্ক থাকতে হবে, সমাজে সহিংস ব্যক্তিরা ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে পুরস্কৃত যেন না হয়। এই অভিজ্ঞতা শিশুকাল থেকে সন্তানের মনে সহিংসতার বীজ রোপণ করে দিতে পারে; উপরন্তু ভীতি সঞ্চার করতে পারে।

অসততার দৃষ্টান্ত কিংবা মারপিট ও খুনোখুনির দৃশ্য তার ভেতর অস্থিরতা তৈরি করে বিপথে চালিত করতে পারে। উদ্ধত ও অবিনীত কিংবা অমার্জিত আচরণে মানুষ বেদনাহত হয়। ভাল আচরণের শিক্ষাও অর্জিত হয় সুকুমার বৃত্তি চর্চার মধ্য দিয়ে। ভাল মানুষ বুঝতে পারে, ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ডের শিকার মানুষের জীবনের স্বাধীনতা ও নিরাপত্তা বিধানের অধিকার রয়েছে। অপরাধী কর্তৃক কাউকে নৃশংস অত্যাচার ও খুন করা স্পষ্টত মানবাধিকার লঙ্ঘনের চূড়ান্ত পর্যায়। তাদের নির্মূল করা এবং যুব সমাজকে বাঁচাতে যা করণীয় তার সবই করতে হবে সরকার ও সচেতন জনগণকে।

আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও পারিবারিক বন্ধন এবং সুকুমার বৃত্তির চর্চাই সামাজিক অবক্ষয় রোধ করে এ দেশকে সুন্দর করতে পারে। সুকুমার বৃত্তি চর্চার কারণে একজন অন্যায়কে সমূলে উৎপাটন করতে উৎসাহী হয় এবং নিষ্ঠুরতাকে মানবতাবিরোধী অপরাধ হিসেবে গণ্য করে। মূলত শিক্ষাকে সৎ আর ন্যায়ের পথে কাজে লাগানো এবং নিজ স্বার্থের দিকে নজর না দিয়ে, অযৌক্তিকতাকে দূরে ঠেলে দিয়ে সুন্দরকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য ব্রতী হওয়াই সুকুমার বৃত্তি চর্চার অন্যতম দিক।

লেখক : কবি, কলামিস্ট, সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ প্রগতিশীল কলামিস্ট ফোরাম, নির্বাহী কমিটির সদস্য, সম্প্রীতি বাংলাদেশ এবং অধ্যাপক, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যাল।
[email protected]

এইচআর/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।