মাহে রমজান
সেহরি ও ইফতারের গুরুত্ব

আল্লাহতায়ালার অপার কৃপায় পবিত্র রমজানের রহমতের দশকের আজ শেষ দিনের রোজা রাখার তৌফিক লাভ করেছি, আলহামদুলিল্লাহ। এজন্য আল্লাহপাকের দরবারে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি। আমরা জানি, রমজান আল্লাহতায়ালার সন্তুষ্টি লাভ করার মাধ্যম। এ দিনগুলোতে আমরা তার সন্তুষ্টির জন্য যে কাজই করি না কেন, তিনি তাতে অনেক অশেষ কল্যাণ দান করেন।
রমজানের বিশেষ একটি দিক হচ্ছে সেহরি ও ইফতার। কেননা, এতে বরকত রয়েছে। এ সম্পর্কে হজরত নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা রমজানে সেহরি খাও, কেননা সেহরির মাঝে বরকত রয়েছে’ (মুসলিম)।
হজরত রসুল করিম (সা.) আরো বলেছেন, ‘আমাদের ও কিতাবীদের (বনী ইসরাইলিদের) রোজার পার্থক্য হলো সেহরি খাওয়া’ (মুসলিম)। তাই বলা যায়, রোজার সাথে সেহরি খাওয়ার গুরুত্ব অনেক। অনেকে এমনও আছেন, সেহরি খায় ঠিকই কিন্তু গভীর রাতে খেয়ে ফেলেন, যা মোটেও ঠিক নয়। বুখারি শরিফের একটি হাদিসে এভাবে উল্লেখ রয়েছে, মহানবীর (সা.) সেহরি খাওয়া আর ফজরের নামাজের আজানের মাঝে পঞ্চাশ আয়াত তেলাওয়াত করার সময় অবশিষ্ট থাকতো।
মুসলিম শরিফে বলা হয়েছে, হজরত রাসুল করিম (স.) হজরত বেলালের আজান শুনে সেহরি খাওয়া বাদ দিতে বারণ করেছেন। কেননা, হজরত বেলাল (রা.) রাত থাকতেই আজান দিয়ে দেয়’। তাই সেহরির যে সময় নিদ্ধারণ আছে সেই সময়ই সেহরি খাওয়া উচিত।
এছাড়া মহানবী (সা.) সেহরি খাওয়াতে কিছুটা বিলম্ব করতে এবং ইফতার সূর্য অস্ত যাওয়ার সাথে সাথে করাকে পছন্দ করতেন এবং তিনি (সা.) তার উম্মতকে এই নির্দেশই দিয়েছেন, তারাও যেন এমনটি করেন।
এ বিষয়ে হজরত রাসুল করিম (সা.) বলেছেন, ‘লোকেরা যতদিন দ্রুত ইফতার করবে, ততদিন কল্যাণের মাঝে অবস্থান করবে’ (বুখারি)। পুনরায় আরেক স্থানে এভাবে বর্ণিত হয়েছে, হজরত উমার ইবনুল খাত্তাব (রা.) বর্ণনা করেন, হজরত রাসুল করিম (সা.) বলেছেন, ‘যখন রাত ঐ (পূর্ব) দিক হতে আসে এবং ঐ (পশ্চিম) দিকে চলে যায় আর সূর্য ডুবে যায় তখন যেন রোজাদার ইফতার করে নেই’ (বুখারি)।
মহানবী (সা.) ইফতারের সময় দোয়ায় রত থাকতেন। তিনি (সা.) ইফতারের পূর্বে দোয়া করতেন- ‘আল্লাহুম্মা লাকা সূমতু ওয়াবিকা আমানতু ওয়া লাকা রিজকিকা আফতারতু বিরাহমাতিকা’ অর্থাৎ হে আল্লাহ! আমি তোমার জন্য রোজা রেখেছি, আর তোমারই ওপর ঈমান এনেছি এবং তোমারই রহমতের রিজিক দ্বারা ইফতার করছি’ (মুসলিম)।
এছাড়া ইফতার শেষেও তিনি মহান আল্লাহপাকের শুকরিয়া জ্ঞাপন করে দোয়া করতেন। হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) হতে বর্ণিত- তিনি বলেন, হজরত নবী করিম (সা.) যখন ইফতার করতেন তখন বলতেন, ‘যাহাবা জ্জামায়ু ওয়াবতাল্লাতি উরুকু ওয়া ছাবাতাল আজরু ইনশাআল্লাহ’ অর্থাৎ পিপাসা দূর হলো, শিরা উপশিরা সিক্ত হলো এবং যদি আল্লাহ চান তবে প্রতিদান স্থির হলো’ (আবু দাউদ)।
আমরা জানি, মহানবী (সা.) খেজুর আর পানি দিয়ে ইফতার করতেন। আমার প্রিয়নবী, বিশ্বনবী (সা.) অত্যন্ত সাধারণ ইফতার করতেন। তিনি (সা.) সূর্যাস্তের সাথে সাথে সামান্য কয়েকটি তাজা খেজুর দ্বারা ইফতার করতেন। যদি তাজা খেজুর না পেতেন, তবে শুকনা খেজুর, আর যদি তাও না পেতেন, তবে কয়েক ঢোক পানি পান করে ইফতার করতেন (বুখারি, মুসলিম)।
ইফতার শুধু নিজে করলেই হবে না বরং অন্যান্যদেরকেও ইফতার করাতে হবে। আমরা যেখানে বসবাস করি, এর আশপাশে এমন কতক রোজাদার পাওয়া যাবে যাদের কাছে ইফতার করার মত তেমন কিছু থাকে না। এমন লোকদেরকে যখন আমরা আমাদের ইফতারে অন্তর্ভুক্ত করে নিব তখনই আমরা আল্লাহপাকের সন্তুষ্টি অর্জনকারী হবো। কেননা রোজাদারকে ইফতার করানো অনেক বড় পুণ্যের কাজ। মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো রোজাদারকে ইফতার করাবে, তার জন্য রোজাদারের প্রতিদান সমান প্রতিদান দেওয়া হবে এবং রোজাদারের প্রতিদান থেকেও কোনো প্রতিদান কমানো হবে না’ (তিরমিজি)।
তাই আমাদেরকে খোঁজ নিয়ে দেখতে হবে আমাদের প্রতিবেশীদের মাঝে কারা অসহায় এবং কারা কষ্টে আছে। আল্লাহপাক যাদেরকে স্বাচ্ছন্দ্য দিয়েছেন তাদের উচিত হবে তার প্রতিবেশীর খোঁজ নেয়া।
আল্লাহতায়ালা আমাদেরকে পবিত্র এ রমজানে সব ধরনের নেক কর্ম বেশি বেশি করার তাওফিক দান করুন, আমিন।
লেখক: ইসলামি গবেষক ও কলামিস্ট।
এইচআর/এমএস