ছোট্ট নুসরাত নেই, রয়ে গেছে তার ঘর আর অজস্র স্মৃতি
দরজার গায়ে আজও সাঁটা আছে জন্মদিনের শুভেচ্ছাবার্তা। রঙিন কাগজে ছোট্ট হাতে লেখা ‘শুভ জন্মদিন নুসরাত’। দেয়ালের কোণায় রাখা স্কুলব্যাগটা এখনো যেমন ছিল, তেমনই। খোলা খাতায় পড়ে আছে হ্যান্ডরাইটিংয়ের অনুশীলন, আর একটা পেন্সিল, যেটা শেষবার ব্যবহার করেছিল মেয়েটি। কিন্তু সেই ঘর, খাতা, উইশ কার্ড-সবই আজ যেন বোবা এক সাক্ষী। ছোট্ট নুসরাত আর নেই। বিস্মৃত হতে থাকা এক ভয়াবহ স্মৃতির নাম হয়ে উঠেছে সে। ছবি: মাহবুব আলম
-
সেদিনও ঠিক প্রতিদিনের মতোই ছিল সকালটা। মা পারুল আক্তার মেয়েকে হাতে ধরে স্কুলে পৌঁছে দিয়ে এসেছিলেন গেট পর্যন্ত। ছোট্ট নুসরাত তখন তার প্রিয় টিফিন বক্সটা আঁকড়ে ধরে ক্লাসে ঢুকছিল। মা ফিরছিলেন ধীরে ধীরে, পেছন ফিরে মেয়েকে শেষবারের মতো দেখছিলেন। কে জানত, এটাই ছিল শেষ দেখা!
-
কিছুক্ষণ পরেই নেমে আসে সেই বিভীষিকা। গগনবিদারী শব্দে ভেঙে পড়ে একটি বিমান, মুহূর্তেই অগ্নিকুণ্ডে পরিণত হয় স্কুলের একাংশ। দৌড়ে যান পারুল। ছুটে যান মেয়ের ক্লাসরুমের দিকে। দেখতে পান আগুনে দাউ দাউ করে পুড়ছে পুরো ভবন। বিভ্রান্ত, বিমর্ষ, আর্তনাদে তখন ভেঙে পড়েন তিনি।
-
ঘটনার পরের দৃশ্যটা ছিল হৃদয়বিদারক। স্কুল প্রাঙ্গণ জুড়ে ছিল কান্নার সুর, স্বজন হারানো মানুষের হাহাকার। বাবা আবুল হোসেন স্তব্ধ হয়ে বসে আছেন এক কোণে, কাঁধে ভারী হয়ে ঝুলছে শোক। মুখে কোনো কথা নেই, চোখে শুকিয়ে যাওয়া অশ্রু। একমাত্র কন্যা, পরিবারের উজ্জ্বলতম মুখটি নেই বললেই চলে।
-
নুসরাতের ঘর এখন যেন সময়ের কাছে আটকে আছে। যেখানে প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠে সে মায়ের কাছে ছুটে আসত, এখন সেখানে শুধুই নিস্তব্ধতা। জানালার পাশে রাখা সেই পুতুলটা, যেটা নুসরাত তার জন্মদিনে উপহার পেয়েছিল আজও তাকিয়ে আছে এক অনন্ত শূন্যতায়।
-
পাড়াপড়শিরা জানালেন, নুসরাত ছিল অসম্ভব মেধাবী। স্কুলে সে পড়ালেখায় ভালো, গান-বাজনায় উৎসাহী, সবার প্রিয় মুখ। ‘ওর হাসিটা এত সুন্দর ছিল! এখনো চোখে ভাসে’, বলেন পাশের বাড়ির খালামণি।
-
ঘটনার পর পুরো এলাকায় নেমে এসেছে এক গভীর শোক। স্কুলের বন্ধুরা কেউই এখনো বিশ্বাস করতে পারছে না, নুসরাত আর তাদের মাঝে নেই। টিফিন টাইমে যে মেয়ে সবার সঙ্গে ভাগ করে খেত, খেলাধুলায় ছিল চঞ্চল, সে আজ শুধুই স্মৃতি।