মাইলস্টোন স্কুলের নীরবতা যেন এক গুমরে থাকা কান্না
আজ মাইলস্টোন স্কুল ক্যাম্পাসের চারপাশে ঘুরে দাঁড়ালে মনে হয়, এ যেন কোনো পরিত্যক্ত ভবন নয়-এ এক শূন্যতা, যাকে ছুঁয়ে আছে অসংখ্য অজানা প্রশ্ন আর অশ্রুসজল দৃষ্টির প্রতিচ্ছবি। শিক্ষার পবিত্র অঙ্গনটির সব গেট আজ তালাবদ্ধ। মেইন গেটসহ পাশের গেইটগুলোয় নেই সেই চিরচেনা কোলাহল, নেই ক্লাস শেষে একসাথে বের হয়ে আসা শিক্ষার্থীদের হর্ষধ্বনি। আছে শুধু থমথমে নিরবতা আর নিরাপত্তাকর্মীদের কঠোর মুখ। ছবি: মাহবুব আলম
-
সকাল থেকে অনেকেই এসেছেন। সবার চোখে উৎকণ্ঠা। সাংবাদিকেরা ঘুরছেন, কেউ লাইভ করছেন, কেউ ছবি তুলছেন।
-
একটু দূরে দাঁড়িয়ে আছেন স্কুলের এক প্রাক্তন শিক্ষার্থী। তার চোখে আভাস দিচ্ছে বিস্ময় আর বেদনা। তিনি বললেন, ‘এই স্কুল আমাকে মানুষ করেছে। আজ এই চেনা গেটের সামনে দাঁড়িয়ে মনে হচ্ছে, আমার শৈশব আটকে গেছে তালাবদ্ধ দরজার ওপারে।’
-
একজন প্রবীণ পথচারী মন্তব্য করলেন, ‘স্কুলের আশপাশ দিয়ে গেলে প্রতিদিন ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের হেঁটে যাওয়া দেখতাম। আজ এ রাস্তা যেন পাথর হয়ে আছে-কেউ হাঁটে না, কেউ হাসে না।’
-
স্কুল মানে শুধুই চার দেয়ালের মাঝে ক্লাসরুম না। এটা একটা প্রাণ, একটা ধুকপুক করা হৃদয়, যেখানে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের আত্মিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে। মাইলস্টোন স্কুলও তেমন এক হৃদয় ছিল, আজ সে হৃদয় যেন কোনো এক অজানা ব্যথায় চুপচাপ।
-
এখনও বহু কৌতুহলী মানুষ ঘোরাঘুরি করছেন স্কুলের বাইরে। কেউ ছবি তুলছেন, কেউ ভাবছেন কী হচ্ছে ভেতরে? অথচ ভেতরে কী চলছে, তা জানার অধিকার নেই কারও। বাইরে থেকে কেউ স্কুলে ঢুকতে পারছেন না, যেন পুরোটা একটা বৃত্তের মতো ঘিরে ধরা হয়েছে।
-
যে শিশুটি তার নতুন বইয়ের পাতা ওলটাতে চেয়েছিল, যে অভিভাবক সন্তানের পরীক্ষার ফল নিয়ে জানার অপেক্ষায় ছিলেন, যে সাংবাদিক সংবাদ সংগ্রহে এসেছেন -সবাই আজ একই প্রশ্ন নিয়ে ফিরে যাচ্ছেন। ‘কেন?’ এই প্রশ্নটাই বারবার আছড়ে পড়ছে মাইলস্টোন স্কুলের সীমানা প্রাচীরে।
-
আমরা কি এমন ভবিষ্যতের দিকে যাচ্ছি, যেখানে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও ভয় আর সংশয়ের তালাবদ্ধ বারান্দায় আটকে যাবে? যেখানে একটি বিদ্যালয়ের গেইট বন্ধ থাকলে পুরো সমাজ হতবাক হয়ে পড়ে? এই থমথমে দৃশ্য শুধু একটি স্কুলের নয়, বরং এটি একটি সমাজের প্রতিচ্ছবি-যেখানে শিশুর নিরাপত্তা, শিক্ষকের স্বাধীনতা, অভিভাবকের বিশ্বাস সবকিছুই আজ প্রশ্নবিদ্ধ।