জ্বলন্ত স্বপ্নের ছাই: মাইলস্টোন স্কুল গেটের সামনে এক মায়ের কান্না
স্কুলব্যাগটা এখনও রঙচঙে। ছবির কার্টুনগুলো যেন নিষ্পাপ এক জীবনের পরিচয় বহন করছে। কিন্তু সেই ব্যাগের মালিক, ছোট্ট উম্মে আফিয়া মরিয়ম আর নেই। আগুন কেবল পোড়ায়নি তার ছোট্ট দেহটাকে, ছাই করে দিয়েছে ভবিষ্যতের সমস্ত স্বপ্নও। আর স্কুল গেটের সামনে দাঁড়িয়ে কাঁদছেন তার মা চোখে-মুখে শূন্যতা, গলার স্বরে এক ভয়ানক হাহাকার। লেখা: জান্নাত শ্রাবণী; ছবি: মাহবুব আলম
-
মরিয়মের মা বেরিয়ে এসেছিলেন স্কুল গেট থেকে, শরীরে আর কণ্ঠে এক চরম ভাঙনের চিহ্ন। বুকফাটা কান্নায় বলতে না পারলেও চারপাশ যেন বুঝে ফেলেছিল, তিনি তার মেয়েকে হারিয়েছেন। পরিচয় শনাক্তের মতো অবস্থায়ও মরিয়ম ছিল না, জানালেন এক আত্মীয়া। ফায়ার সার্ভিস আর পুলিশ বলছে, মরদেহগুলোর অনেকগুলোই এতটাই পুড়ে গেছে যে মুখ চেনার উপায় নেই। মরিয়মও তাদেরই একজন।
-
ছবিটা ভাইরাল হয়েছে মাইলস্টোন স্কুল গেটের সামনে। ব্যাগ হাতে নিয়ে ভেঙে পড়ছেন এক নারী, স্কুল ড্রেসের রঙ, ব্যাগের ডিজাইন, সব মিলিয়ে বোঝা যাচ্ছে সেই মেয়েটি ছিল আদরের, ছিল প্রিয়জনদের আনন্দের কেন্দ্র। এই এক ব্যাগেই যেন গুমরে কাঁদছে হাজারো সন্তানের ভবিষ্যৎ, একটি প্রজন্মের নিরাপত্তাহীনতা।
-
স্কুল মানেই তো নিরাপত্তার আশ্রয়। সকালে হাসিমুখে বিদায় নেওয়া সন্তান বিকেলে লাশ হয়ে ফিরবে এটা কি কোনো মায়ের কল্পনাতেও ছিল? আগুন কেবল পোড়ায়নি স্কুলবাস বা ভবনের কাঠামো; পুড়িয়েছে অভিভাবকদের আস্থা, রাষ্ট্রের গাফিলতির মুখোশ। প্রশ্ন জাগে কেন এতো মৃত্যু, কেন প্রতিবারই আমরা শুধু প্রার্থনা আর প্রতিবাদের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকি?
-
মরিয়মের মুখ আর দেখা যাবে না, তার হাসিটা থাকবে শুধু স্মৃতিতে। কিন্তু তার পোড়া ব্যাগটা কি এখন কেবল এক বস্তু? না, তা নয়। ওটা হয়ে উঠেছে আমাদের লজ্জার প্রতীক, দায়হীনতার প্রমাণ। ওটা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় আমরা কতোটা ব্যর্থ একটা জাতি, যারা শিশুর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারি না।
-
মরিয়ম তো চলে গেল। কিন্তু আমরা যারা আছি, তারা কী করবো এখন? কত মরিয়ম গেলে আমরা জেগে উঠবো? ব্যর্থতা, অবহেলা আর দায় এড়ানোর সংস্কৃতিতে আর কত শিশুকে আমরা বলি দেবো? মাইলস্টোন স্কুলের গেটের সামনে থাকা সেই মায়ের কান্না শুধু তার একার নয়। তা হয়ে উঠেছে সমস্ত বাংলাদেশের এক দীর্ঘশ্বাস।