নজরুল-প্রমীলার স্মৃতিবিজড়িত তেওতা জমিদারবাড়ি
বাংলা সাহিত্য ও সংগীতের ইতিহাসে কাজী নজরুল ইসলাম ও প্রমীলা দেবীর নাম অবিচ্ছেদ্যভাবে জড়িয়ে আছে ভালোবাসা, সংগ্রাম ও সৃষ্টিশীলতার স্মৃতিতে। সেই স্মৃতির নীরব সাক্ষী হয়ে আজও দাঁড়িয়ে আছে মানিকগঞ্জের তেওতা জমিদারবাড়ি। এই বাড়ির প্রতিটি ইট, প্রতিটি বারান্দা যেন বহন করে নজরুল–প্রমীলার জীবনের গল্প। সময়ের প্রবাহে অনেক কিছু বদলে গেলেও তেওতা জমিদারবাড়ি এখনও স্মরণ করিয়ে দেয় কবির প্রেম, সাহিত্যচর্চা আর সেই সময়ের সামাজিক-সাংস্কৃতিক আবহ। ছবি: মো. সজল আলী
-
মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলার অবস্থিত ঐতিহাসিক তেওতা জমিদারবাড়ি আজ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। একসময় জেলার ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও স্থাপত্যশৈলীর অন্যতম নিদর্শন হিসেবে পরিচিত এই প্রাসাদ এখন নীরবে হারিয়ে যাচ্ছে অবহেলা, অযত্ন আর প্রাকৃতিক ক্ষয়ের চাপে।
-
জনশ্রুতি অনুসারে, সতেরো শতকে জমিদারবাড়িটি নির্মাণ করা হয়েছিল। নির্মাণ করেছিলেন পঞ্চানন সেন নামক একজন জমিদার। পঞ্চানন সেন একসময় খুবই দরিদ্র ছিলেন। দিনাজপুর অঞ্চলে তিনি তামাক উৎপাদন করে প্রচুর ধন-সম্পত্তির মালিক হওয়ার পর প্রাসাদটি নির্মাণ করেন। পরে এখানে জমিদারি প্রতিষ্ঠা করেন জয়শংকর ও হেমশংকর নামের দুই ব্যক্তি। ভারত বিভক্তির পর তারা ভারত চলে গেলে বাড়িটি পরিত্যক্ত হয়ে যায়। তেওতা জমিদারবাড়িটি মোট ৭.৩৮ একর জমি নিয়ে স্থাপিত। মূল প্রাসাদের চারপাশে আছে বিভিন্ন স্থাপনা ও একটি বড় পুকুর। প্রাসাদের মূল ভবনটি লালদিঘি ভবন নামে পরিচিত। এখানে একটি নটমন্দির আছে। এ ছাড়াও আছে নবরত্ন মঠ ও বেশ কয়েকটি মঠ। সবগুলো ভবন মিলিয়ে এখানে মোট কক্ষ আছে ৫৫টি।
-
তেওতা জমিদারবাড়িতে প্রবেশ করতে প্রথমেই চোখে পড়ে কাচারি ঘর। এখানে জমিদাররা ব্যবসার হিসাব করতেন। এ ছাড়া যদি কেউ দেখা করতে আসতেন; তখন জমিদাররা তাদের সাথে দেখা করতেন। ঘরটি এখন জরাজীর্ণ ভবনে পরিণত হয়েছে। ওপরের চালা খুলে পড়ছে।
-
বিপরীত পাশেই আছে নবরত্ন মন্দির (মঠ)। সুন্দর কারুকার্য আর নয়টি গম্বুজের কারণে এটি নবরত্ন মঠ হিসেবে পরিচিত। মূলত এটি মন্দির। এখানে পূজা করা হতো। মন্দিরটির ওপরে যে গম্বুজ আছে, তাতে একটি করে রত্ন ছিল বলে এর নাম নবরত্ন মন্দির দেওয়া হয়। মন্দিরটি আছে ঠিক কিন্তু এর ওপরে যে নয়টি রত্ন ছিল; সেগুলো এখন আর নেই।
-
তার পাশে আছে উত্তরীসর ভবন। সদ্য ভবনটির সংস্কার কাজ শেষ করেছে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর। মূল যে ভবনটি আছে; সেটি সবচেয়ে বেশি অবহেলায় পড়ে আছে। ইটগুলো খুলে খুলে পড়ছে। কারুকার্য প্রায় বিলীন হয়ে যাচ্ছে। দেওয়ালে তৈরি হয়েছে বড় বড় ক্ষত। দোতলা ভবনটির সিঁড়িগুলো ভেঙে গেছে। ছাদের ঢালাই খুলে পড়ছে। এখন মাদক সেবীদের নিরাপদ আশ্রয়। মূল ভবনের পাশের ভবনগুলো যে কোনো সময় মাটির সঙ্গে মিশে যাবে।