কোলাহলহীন শীতের বাজার, অলস সময় কাটাচ্ছেন দোকানিরা
প্রচণ্ড শীত, কুয়াশায় ঢাকা সকাল, গায়ে কাঁপুনি ধরানো বাতাস সব মিলিয়ে শীত যেন এবার নিজের উপস্থিতি ভালোভাবেই জানান দিচ্ছে। কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে এই শীতই যেন অভিশাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে কেরানীগঞ্জ কাপড় মার্কেটের দোকানিদের জন্য। বছরের এই সময়টায় যেখানে সাধারণত শীতের পোশাক বিক্রির হিড়িক থাকার কথা, সেখানে এবার চিত্র পুরোপুরি উল্টো। শীত আছে, ক্রেতা নেই। ফলে শীতের পোশাক নিয়ে কেরানীগঞ্জে চলছে চরম মন্দা। ছবি: তৌফিক হাসান
-
সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত দোকান খোলা থাকলেও অধিকাংশ দোকানির সময় কাটছে অলস বসে। কেউ মোবাইল স্ক্রল করছেন, কেউবা পাশের দোকানির সঙ্গে গল্পে মেতে উঠছেন। মাঝে মাঝে দু-একজন ক্রেতা এলেও তারা বেশিরভাগই দাম শুনে ফিরে যাচ্ছেন, কিংবা শুধু দেখে চলে যাচ্ছেন। যে ব্যস্ততা, কোলাহল আর দরদাম নিয়ে উত্তেজনার দৃশ্য এই মার্কেটের পরিচিত রূপ, তা এখন প্রায় উধাও।
-
কেরানীগঞ্জ কাপড় মার্কেটে সোয়েটার, জ্যাকেট, হুডি, শাল, কার্ডিগান সব ধরনের শীতের পোশাকই রয়েছে। অনেক দোকানি আগেভাগেই বড় অঙ্কের বিনিয়োগ করে মাল তুলেছেন। কেউ কেউ ঢাকার বাইরের জেলা থেকেও পণ্য এনেছেন। কিন্তু প্রত্যাশিত বিক্রি না হওয়ায় এখন তারা চিন্তায় পড়েছেন।
-
দোকানিরা জানান, সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে গেছে। নিত্যপণ্যের দাম, বাসাভাড়া, বিদ্যুৎ-পানি বিল সবকিছুর চাপ সামলে শীতের নতুন পোশাক কেনা অনেকের কাছেই এখন বিলাসিতা। ফলে আগের বছরের পোশাকেই শীত কাটানোর প্রবণতা বেড়েছে।
-
এছাড়া বেড়েছে অনলাইন বাজারের প্রভাব। অনেক ক্রেতা এখন মার্কেটে না এসে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বা ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম থেকেই পোশাক কিনছেন। সেখানে নানা অফার, হোম ডেলিভারি আর সহজ রিটার্ন সুবিধা থাকায় কেরানীগঞ্জের মতো পাইকারি-খুচরা বাজারও চাপের মুখে পড়েছে।
-
এই মন্দা সবচেয়ে বেশি ভোগাচ্ছে ছোট দোকানিদের। অনেকেই দোকান ভাড়া, কর্মচারীর বেতন আর আগের ধার শোধ করতে হিমশিম খাচ্ছেন। কেউ কেউ বলছেন, শীত মৌসুমটাই ছিল তাদের বছরের সবচেয়ে বড় ভরসা। কিন্তু এবার সেই ভরসাতেই ধস নেমেছে।
-
কেরানীগঞ্জ কাপড় মার্কেটের এই চিত্র শুধু একটি বাজারের গল্প নয়; এটি দেশের বর্তমান অর্থনৈতিক বাস্তবতারও প্রতিফলন। যেখানে প্রয়োজন আর সামর্থ্যের মধ্যে ফারাক ক্রমেই বাড়ছে, সেখানে শীতের মতো মৌসুমি বাজারও আর আগের মতো প্রাণবন্ত থাকছে না।