খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে এভারকেয়ারের শোকাবহ দৃশ্য
ভোরের আলো ঠিকমতো ছড়াতে না ছড়াতেই এভারকেয়ার হাসপাতালের সামনের বাতাস ভারী হয়ে ওঠে। খবরটা ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গেই মানুষের ঢল নামে; কেউ দৌড়ে, কেউ নিঃশব্দে, কেউ চোখের জল লুকিয়ে। চিকিৎসাধীন অবস্থায় বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার মৃত্যুসংবাদ যেন মুহূর্তে বদলে দেয় হাসপাতাল চত্বরের রং-রূপ। এখানে আর অপেক্ষার উৎকণ্ঠা নেই; আছে শোকের স্তব্ধতা। ছবি: মাহবুব আলম
-
হাসপাতালের ফটকের সামনে জড়ো হওয়া নেতাকর্মীদের চোখে-মুখে একই প্রশ্ন এখন কী হবে? কারও কণ্ঠে কান্না থামছে না, কেউ আবার চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছেন, যেন কথা বললেই ভেঙে পড়বেন। রাজনৈতিক পরিচয় এখানে গৌণ; সামনে শুধু এক অভিভাবক হারানোর বেদনা। এই শোক ব্যক্তিগতও, আবার সমষ্টিগতও।
-
সংবাদ নিশ্চিত হওয়ার পর হাসপাতালের ভেতরে সংবাদ সম্মেলন শেষ হয়। দরজা খুলে বেরিয়ে আসা নেতাদের পায়ে পায়ে নীরবতা নামে করিডরে। কারও চোখে অশ্রু, কারও মুখে অস্ফুট দীর্ঘশ্বাস ক্যামেরার ফ্ল্যাশও যেন এ দৃশ্যে অপ্রাসঙ্গিক। বক্তব্যের সময় শেষ; শুরু শোকের ভাষা, যা শব্দে ধরা পড়ে না।
-
এভারকেয়ার হাসপাতাল আজ কেবল একটি চিকিৎসাকেন্দ্র নয়; এটি হয়ে ওঠে স্মৃতির ভার বহন করা এক প্রাঙ্গণ। এখানে কেউ নেত্রীর সঙ্গে তোলা পুরোনো ছবি দেখান, কেউ ফিসফিস করে স্মৃতিচারণা করেন। কেউ বলেন, ‘তিনি আমাদের সাহস ছিলেন’, কেউ বলেন, ‘তিনি ছিলেন আশ্রয়’। কান্নার ফাঁকে ফাঁকে এই কথাগুলোই ছড়িয়ে পড়ে ভিড়ে।
-
হাসপাতালের সামনে রাস্তা ধরে দাঁড়িয়ে থাকা সাধারণ মানুষও থমকে যান। কারও হাতে দলীয় পতাকা, কারও হাতে নেই কিছুই শুধু ভেজা চোখ। সময় যেন ধীরে চলে। নিরাপত্তার কোলাহলও আজ চাপা পড়ে যায় শোকের ভারে।
-
একটি অধ্যায়ের পরিসমাপ্তি মানেই যে শুধু ইতিহাসের পাতা বন্ধ হওয়া নয়, এভারকেয়ারের আজকের দৃশ্য তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়। নেত্রীহারা দল, অভিভাবকহারা কর্মী আর এক শোকস্তব্ধ শহর সব মিলিয়ে এই হাসপাতাল চত্বর আজ বাংলাদেশের রাজনীতির এক গভীর বেদনার প্রতীক।