শুভ জন্মদিন রূপালী পর্দার শাশ্বত নায়িকা
বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসে এমন কিছু নাম আছে, যেগুলো শুধু একটি প্রজন্ম নয়, কয়েক প্রজন্মের স্বপ্ন ও আবেগের অংশ হয়ে আছে। সেসব নামের মধ্যে অন্যতম কোহিনূর আক্তার সুচন্দা। ১৯৪৭ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর বরিশালের মেয়ে এই অভিনেত্রী একসময় হয়ে উঠেছিলেন ঢাকাই চলচ্চিত্রের রোমান্সের প্রতীক। শুধু অভিনেত্রী হিসেবেই নয়, প্রযোজক ও পরিচালক হিসেবেও তিনি নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। ছবি: সোশ্যাল মিডিয়া থেকে
-
সুচন্দার চলচ্চিত্রে পদার্পণ হয় ষাটের দশকে। সেই সময় ঢাকাই চলচ্চিত্রে নতুন মুখের খোঁজ চলছিল। সুচন্দা তার সৌন্দর্য, অভিনয় দক্ষতা ও স্বাভাবিক অভিব্যক্তি দিয়ে দ্রুতই দর্শকের মন জয় করে নেন। তার প্রথম দিককার ছবি ‘কাগজের নৌকা’ (১৯৬৬) দিয়েই নজরে আসেন তিনি। এরপর আর পেছনে তাকাতে হয়নি।
-
সুচন্দার সবচেয়ে বড় শক্তি ছিল তার চোখের ভাষা আর সহজাত অভিনয়। দর্শক মনে করতো, তিনি যেন নিজের বাস্তব আবেগ নিয়েই অভিনয় করেন। ষাট ও সত্তরের দশকে নায়িকা বলতে যে পরিশীলিত সৌন্দর্যের ছবি আঁকা হতো, সুচন্দা ছিলেন তার প্রতিচ্ছবি।
-
নায়ক রাজ রাজ্জাকের সঙ্গে তার জুটি ছিল বিশেষভাবে জনপ্রিয়। তাদের অভিনীত অনেক ছবি আজও ক্ল্যাসিক হিসেবে বিবেচিত হয়।
-
১৯৭২ সালে মুক্তি পাওয়া ‘অরুণোদয়ের অগ্নিসাক্ষী’ বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসে বিশেষ স্থান দখল করে আছে। এই ছবির নায়িকা ছিলেন সুচন্দা, আর এটি ছিল মুক্তিযুদ্ধ-পরবর্তী বাংলাদেশের প্রথম চলচ্চিত্র। এই সিনেমা শুধু তাকে জনপ্রিয়তার চূড়ায় পৌঁছে দেয়নি, বরং একজন সংবেদনশীল অভিনেত্রী হিসেবে তার অবস্থানকে দৃঢ় করেছে।
-
নায়িকা হিসেবে সাফল্যের পাশাপাশি সুচন্দা নিজের অবস্থান তৈরি করেছিলেন প্রযোজক ও পরিচালক হিসেবেও। তিনি প্রযোজনা করেছেন কালজয়ী ছবি ‘শুভদা’, যা সমালোচকদের প্রশংসা কুড়িয়েছিল। তবে তার সবচেয়ে আলোচিত কাজ ছিল হুমায়ূন আহমেদের উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত ‘হাজার বছর ধরে’ (২০০৫)। এই ছবিটি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করে এবং তাকে একজন দক্ষ নির্মাতা হিসেবে প্রতিষ্ঠা দেয়।
-
সুচন্দা বিয়ে করেছিলেন খ্যাতিমান পরিচালক জহির রায়হানকে। তাদের দাম্পত্য জীবন ছিল শিল্প ও চলচ্চিত্রকেন্দ্রিক। তবে ১৯৭২ সালে জহির রায়হানের রহস্যময় অন্তর্ধান সুচন্দার জীবনে এক গভীর শূন্যতা তৈরি করে। তবু তিনি ভেঙে পড়েননি; বরং শিল্পকে শক্তি হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন।
-
সুচন্দা এখনো চলচ্চিত্রপ্রেমীদের কাছে স্নেহভাজন এক নাম। ষাটের দশকের গ্ল্যামার, সত্তরের দশকের আবেগ, আশি-নব্বইয়ের দশকে ধীরে ধীরে নির্মাতা ও প্রযোজকের পরিচয়-সব মিলিয়ে তিনি এক অনন্য যাত্রার অংশ। অনেক নতুন প্রজন্ম তাকে জানে পরিচালক সুচন্দা হিসেবে, আবার অনেকে মনে রাখে কালজয়ী নায়িকা সুচন্দা হিসেবে।
-
সুচন্দা শুধু একজন অভিনেত্রী নন, তিনি ঢাকাই চলচ্চিত্রের ইতিহাসের অংশ। তার চলচ্চিত্র, তার সংলাপ, তার অনাবিল হাসি ও সংবেদনশীল চরিত্রগুলো আজও দর্শকের মনে অমলিন। অনেকেই বলেন, যদি ঢাকাই চলচ্চিত্রে নারী নায়িকাদের স্বর্ণযুগের কথা বলতে হয়, তবে সুচন্দার নাম উচ্চারণ না করে উপায় নেই।