৭৮ বসন্ত পার করে ৭৯-এ বাকের ভাই
৩১ অক্টোবর। বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গনের জন্য এই দিনটি বিশেষ-কারণ এই দিনে জন্মগ্রহণ করেছিলেন একজন মানুষ, যিনি একাধারে নাট্যশিল্পী, আবৃত্তিকার, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব এবং বীর মুক্তিযোদ্ধা। তিনি ‘বাকের ভাই’ খ্যাত অভিনেতা আসাদুজ্জামান নূর। যার কথার মধ্য দিয়ে জীবনের বাস্তবতা ও মানুষের অনুভূতি মিলে যায় এক অনন্য সুরে। ছবি: সোশ্যাল মিডিয়া থেকে
-
আসাদুজ্জামান নূরের অভিনয় যাত্রা কেবল একটি মঞ্চ বা পর্দার সীমানায় আটকে নেই। তিনি সেই শিল্পী, যিনি চরিত্রের গভীরতা এবং মানুষের অনুভূতির সূক্ষ্মতম দিকগুলোকে স্পর্শ করতে জানেন।
-
‘নাটকের মঞ্চে দাঁড়িয়ে দর্শকের হৃদয় জয় করা’-এটাই তার প্রতিটি অভিনয়ের মূলমন্ত্র। তার অভিনয়ধারা এমনভাবে মেলে যে চরিত্রের সঙ্গে দর্শকের আবেগ সরাসরি সংযুক্ত হয়। শুধু অভিনয় নয়, নাট্যসংগঠনের ক্ষেত্রে তাঁর অবদানও অসামান্য।
-
আবৃত্তিতে আসাদুজ্জামান নূরের স্থান এক আলাদা। তিনি শুধু কবিতা বা গল্প পাঠ করেন না; তিনি তা জীবন্ত করে তোলেন। শব্দের ছন্দ, উচ্চারণের স্পষ্টতা এবং আবৃত্তির ভাবসম্পর্কিত সূক্ষ্মতা-সব মিলিয়ে তিনি দর্শককে এক অনন্য আবেগের ভ্রমণে নিয়ে যান। তার আবৃত্তি শুধু বিনোদন নয়, বরং পাঠকের মনের ভেতর একটি গভীর ছাপ ফেলে।
-
১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধ, যখন দেশের জন্য প্রতিটি মানুষ নিজ নিজ স্থানে অবদান রাখছিল, আসাদুজ্জামান নূরও ছিলেন সামনের সারিতে। একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তিনি দেশের জন্য ত্যাগের পরিচয় স্থাপন করেছিলেন। এই বীরত্ব শুধু ইতিহাসের পাতায় নেই; তা আজও আমাদের প্রেরণা জোগায়।
-
কেবল সাংস্কৃতিক অঙ্গনেই নয়, রাজনৈতিক জীবনে তিনি ছিলেন দায়িত্বশীল ও সতর্ক নেতৃত্বের উদাহরণ। মানুষের সমস্যার প্রতি তার দায়বদ্ধ দৃষ্টিভঙ্গি এবং সাংগঠনিক ক্ষমতা তাকে একটি আদর্শ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বে পরিণত করেছে। সমাজের নানা ক্ষেত্রে সচেতনতা, সাংস্কৃতিক উন্নয়ন ও মানুষের কল্যাণে তার পদচারণা একটি অনন্য দৃষ্টান্ত।
-
৭৮ বসন্ত পার করে ৭৯-এ পা দিলেও আসাদুজ্জামান নূরের কর্মপ্রেরণা, আবেগের তীব্রতা এবং জীবনের প্রতি উদারতা অটুট। ‘বাকের ভাই’ খ্যাতি শুধু কথার কারণে নয়; এটি সেই মানুষের স্বাক্ষর, যিনি প্রতিটি ক্ষেত্রে স্পষ্ট ও সক্রিয় ভূমিকা রাখেন। তার জীবন দর্শন, ‘মানুষের কল্যাণে কাজ কর, সত্যের পথে চল’, আজও আমাদের প্রেরণা দেয়।