শুভ জন্মদিন সুবর্ণা মুস্তাফা
বাংলাদেশি অভিনয়ের ইতিহাসে কিছু নাম আছে, যাদের উপস্থিতি নিজেই একটি যুগ। সুবর্ণা মুস্তাফা সেই বিরল অভিনেত্রীদের একজন, যিনি কেবল তার প্রতিভা দিয়ে নয়, তার ব্যক্তিত্ব, সাবলীলতা, সৌন্দর্য আর শিল্পীসত্তার পরিশীলনে আজও দর্শকদের মুগ্ধ করে চলেছেন। আজ তার জন্মদিন। বিশেষ এই দিনটি আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় এদেশের অভিনয়ধারায় সুবর্ণা মুস্তাফা শুধু একজন মুখ নন, তিনি এক স্থির আলোকবর্তিকা। ছবি: সোশ্যাল মিডিয়া থেকে
-
সুবর্ণা মুস্তাফার জীবন শুরু থেকেই শিল্পের আবহে। পরিবারেই ছিলেন শিল্প, সংস্কৃতি ও বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার উজ্জ্বল অনুষঙ্গ। তার বেড়ে ওঠার পরতে পরতে ছিল অভিনয়ের প্রতি স্বাভাবিক টান, শব্দের প্রতি সংবেদনশীলতা ও চরিত্র বোঝার একটি জন্মগত ক্ষমতা, যা তাকে পরবর্তী সময়ের অসামান্য অভিনেত্রী হিসেবে গড়ে তোলে।
-
অনেকেই অভিনয়ে আসেন প্রশিক্ষণের মাধ্যমে, অনেকেই সুযোগের মাধ্যমে; কিন্তু সুবর্ণার ক্ষেত্রে অভিনয় যেন তার রক্তে জন্ম নেওয়া একটি স্বত্তা-স্বাভাবিক, সহজ, অথচ গভীর।
-
বাংলাদেশ টেলিভিশনের সুবর্ণ যুগে একাধিক প্রতিভার মধ্যেও তিনি আলাদা হয়ে ওঠেন তার স্বতন্ত্র অভিনয়ভঙ্গির জন্য। পরিমিত সংলাপ, নিখুঁত আবেগপ্রকাশ, শরীরী ভাষার হিসেবি ব্যবহার সব কিছু মিলিয়ে সুবর্ণা মুস্তাফা হয়ে ওঠেন উচ্চমানের টেলিভিশন নাটকের অপরিহার্য মুখ।
-
তার অভিনয় ছিল কখনো তীব্র, কখনো নরম; কখনো দৃঢ়, কখনো ভঙ্গুর। তিনি শুধু অভিনয় করতেন না, চরিত্রকে জীবন্ত করে তুলতেন।
-
টেলিভিশনের পাশাপাশি মঞ্চনাটকেও সুবর্ণার অবস্থান ছিল প্রতাপশালী। সেখানে তার দাপট, সংলাপের গভীরতা আর নাট্যচরিত্রের প্রতি দায়বদ্ধতা তাকে দিয়েছে অভিনয়ের এক শক্ত ভিত্তি।
-
চলচ্চিত্রে তিনি অভিনয় করেছেন পরিমিত সংখ্যায়, কিন্তু প্রতিটি চরিত্রই ছিল মনে রাখার মতো। তার অভিনয় কখনো উচ্চকণ্ঠে নয়, বরং নিঃশব্দ শক্তিতে প্রকাশ পায়। এটাই তার অভিনয়শৈলীর বিশেষত্ব।
-
বাংলাদেশি অভিনয়জগতে সুবর্ণা মুস্তাফা সেই অল্পসংখ্যক শিল্পীর একজন, যাকে নিয়ে ‘গ্রেস’ শব্দটি স্বাভাবিকভাবেই উচ্চারিত হয়। তার ফ্যাশনসেন্স সবসময়ই ছিল পরিমিত, মার্জিত, রুচিশীল। তিনি জানেন কোথায় মিনিমালিজমের প্রয়োজন, কোথায় ক্ল্যাসিক স্টাইলের।
-
আর তার কণ্ঠস্বর? সাবলীল, গম্ভীর, গভীর যা যেকোনো সংলাপকে করে তোলে দ্বিগুণ শক্তিশালী। অনেক নতুন অভিনেত্রী এখনো বলেন, সুবর্ণার উচ্চারণ, কণ্ঠ ও বাচনভঙ্গি শিখতে চাই।
-
জীবনের নানা অভিজ্ঞতার মধ্যেও তিনি সবসময় ছিলেন যথেষ্ট সংযত, আত্মবিশ্বাসী ও মার্জিত। অসংখ্য অভিনেতা ও অভিনেত্রী সুবর্ণা মুস্তাফাকে দেখে বড় হয়েছেন, অভিনয় শিখেছেন, আত্মবিশ্বাস পেয়েছেন। তিনি প্রমাণ করেছেন অভিনয় শুধু পেশা নয়; এটি দায়বদ্ধতা, অধ্যবসায় ও চরিত্রকে আত্মস্থ করার শিল্প। সুবর্ণার অভিনয় স্কুল কোনো ভবনে নয়; তার প্রতিটি কাজ, সংলাপ, চরিত্রই নতুনদের জন্য একেকটি পাঠশালা।
-
তার ক্যারিয়ারজুড়ে তিনি পেয়েছেন ভালোবাসা, সম্মান, অসংখ্য প্রশংসা। কিন্তু সবচেয়ে বড় পুরস্কার দর্শকের অবিচল বিশ্বাস। যে বিশ্বাস আজও তাকে ঘিরে থাকে।