চরিত্রে চরিত্রে বদলে যাওয়া এক শিল্পীর জন্মদিন আজ
আজকের দিনটি আফরান নিশোর ভক্তদের জন্য বিশেষ। কারণ এই দিনেই তাদের প্রিয় তারকার জন্ম। দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে টেলিভিশন নাটক, স্বল্পদৈর্ঘ্য গল্প, ওয়েব সিরিজ এবং সর্বশেষ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে যে অভিনয়গুণ তিনি দর্শকদের উপহার দিয়েছেন-তা তাকে শুধু একজন তারকা নয়, বরং অভিনয়ের ধারায় একটি নিজস্ব বিদ্যালয় হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছে। ছবি: সোশ্যাল মিডিয়া থেকে
-
বাংলাদেশের ছোট পর্দায় যে কজন অভিনয়শিল্পী নিজেদের ধারাবাহিক উৎকর্ষ দিয়ে দর্শকদের আস্থার আসনে বসেছেন, নিশো তাদের অন্যতম। তার অভিনয়ে আছে স্বাভাবিকতা, সংলাপে অদ্ভুত এক সাবলীলতা আর চরিত্রে ঢুকে যাওয়ার এক দুর্মর ক্ষমতা। বয়সের সঙ্গে সঙ্গে তিনি হয়েছেন পরিণত ও গবেষণাধর্মী।
-
আফরান নিশোর যাত্রা শুরু মডেলিং দিয়ে। বিজ্ঞাপনের ফ্রেমে দাঁড়িয়েই তিনি প্রথম নজর কাড়েন নির্মাতাদের। সে সময় হয়তো কেউ ভাবেননি এই তরুণই একদিন হয়ে উঠবেন পর্দার সবচেয়ে আলোচিত মুখ।
-
তার পরিশ্রম, অধ্যবসায় আর অভিনয় শেখার আগ্রহই তাকে সামনে এগিয়ে নিয়ে আসে। অল্প সময়েই তিনি টেলিভিশন নাটকে নিয়মিত হতে থাকেন। প্রতিটি কাজেই নতুন এক নিশো, নতুন এক চরিত্র, নতুন এক মানসিকতা।
-
নিশোর অভিনয়কে অন্যদের থেকে পৃথক করেছে তার চরিত্র বিশ্লেষণের ক্ষমতা। তিনি যেই চরিত্রই পান, সেটিতে ডুবে যেতে সময় নেন। হোক সে প্রেমিক, হতাশ যুবক, জটিল মানসিকতার মানুষ কিংবা হাস্যরসাত্মক চরিত্র সবখানেই তিনি যোগ করেন নিজস্ব ব্যাখ্যা।
-
তার অভিনয়ের রয়েছে বিশেষ কিছু উজ্জ্বল দিক। যেমন- চরিত্রের আবেগ বোঝার ক্ষমতা, সংলাপ বলার স্বাভাবিক স্টাইল, মাইক্রো-এক্সপ্রেশন ব্যবহার, এক চরিত্র থেকে আরেক চরিত্রে স্বর, অঙ্গভঙ্গি, চোখের ভাষায় পরিবর্তন।
-
অনেকেই বলেন বাংলা নাটকে কিছু সময় পর ‘একঘেয়েমি’ আসে; কিন্তু নিশো সেই একঘেয়েমির ভাঙন ঘটিয়েছেন বারবার, ভিন্ন ভিন্ন চরিত্রে নিজেকে ভেঙে তৈরি করে।
-
গত এক দশকে যে কয়েকজন অভিনেতা নিয়মিত জনপ্রিয়তা ধরে রেখেছেন, নিশো তাদের শীর্ষ সারির একজন। তার অভিনীত অনেক নাটক ইউটিউব ট্রেন্ডিং তালিকায় থেকেছে দিনের পর দিন।
-
রোমান্টিক থেকে থ্রিলার, সব ধরনের গল্পে তার অভিনয়ই দর্শকদের কাছে গল্পকে আরও জীবন্ত করেছে।
-
ছোটপর্দায় থেমে থাকেননি এই গুণী শিল্পী। কাজ করেছেন ওয়েব সিরিজ ও সিনেমায়। ওয়েব প্ল্যাটফর্মে আসার পর বহু অভিনেতাই দোটানায় ছিলেন এ জায়গা কি তাদের জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ হবে? কিন্তু নিশো এ পথকেও নিজের শক্তির জায়গায় পরিণত করেছেন।
-
‘কাইসার’ ওয়েব সিরিজে একজন গোয়েন্দার চরিত্রে তার অভিনয় অনেককেই অভিভূত করে। চরিত্রে ছিল অন্ধকার, জটিলতা, ব্যথা। নিশো সেটা অভিনয়ে ফুটিয়ে তোলেন এমনভাবে, যেন চরিত্রটি শুধু তার জন্যেই লেখা।
-
অভিনেতা হিসেবে দীর্ঘ সময় ছোট পর্দা মাতানোর পর অবশেষে বড় পর্দায় পা রাখেন তিনি। তার প্রথম চলচ্চিত্র ‘সুড়ঙ্গ’ মুক্তি পেয়ে ব্যাপক প্রশংসা পায়। সিনেমাটিতে তিনি দেখিয়েছেন গভীর আবেগ, মানসিক যন্ত্রণা আর বেঁচে থাকার লড়াই কীভাবে একজন অভিনেতা অভিনয়ের মাধ্যমে দর্শককে অনুভব করাতে পারেন।
-
অনেকেই জানেন না আফরান নিশো গল্প লিখতে ভালোবাসেন। কয়েকটি গল্পের কাজেও সক্রিয় ছিলেন তিনি। এছাড়া সংগীতে তার অংশগ্রহণ দর্শকদের বিস্মিত করেছে। শিল্পচর্চার প্রতি তার ভালোবাসাই তাকে করে তুলেছে আরও পরিণত, বহুমাত্রিক।
-
তার অভিনয়ের মধ্যে যে গভীরতা আছে, তা কেবল জনপ্রিয়তার জন্য নয়; বরং শিল্পের প্রতি একনিষ্ঠ ভালোবাসার ফল।
-
আজ তার জন্মদিনে আমরা শুধু একজন জনপ্রিয় তারকাকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছি না, বরং শ্রদ্ধা জানাচ্ছি একজন পরিশ্রমী শিল্পীকে, যিনি অভিনয়ের মাধ্যমে আমাদের ফুরসত, আনন্দ, হাসি ও ভাবনায় ডুবিয়েছেন বছরের পর বছর।
-
আফরান নিশোকে জন্মদিনের অনেক শুভেচ্ছা। তার কাজ আরও প্রসারিত হোক। সবখানেই তিনি হয়ে উঠুন আরও শক্তিশালী শিল্পী। তার নতুন কাজের জন্য অপেক্ষা থাকবে সবসময়।