জন্মদিনে ফিরে দেখুন কারিশমার রুপালি পর্দা থেকে বাস্তব জীবনের সংগ্রাম
রুপালি পর্দার ঝলমলে আলোয় যার সৌন্দর্য ও অভিনয় একসময় বলিউড কাঁপিয়েছে, সেই কারিশমা কাপুর আজ জীবনের অর্ধশতকের মাইলফলকে দাঁড়িয়ে। নব্বইয়ের দশকে হিটের পর হিট সিনেমা উপহার দিয়ে দর্শক হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছিলেন তিনি। তবে তার জীবন ছিল না শুধুই পর্দার রঙিন গল্প। ব্যক্তিগত জীবনের টানাপোড়েন, সংসারের ভাঙন, সন্তানদের একা বড় করে তোলা-সব কিছু মিলিয়ে কারিশমার জীবন যেন রূপকথা আর বাস্তবতার এক মিশ্র উপাখ্যান। জন্মদিনে ফিরে দেখা যাক বলিউডের এই রাজকন্যার রুপালি যাত্রা আর জীবনসংগ্রামের গল্প। ছবি: ইনস্টাগ্রাম থেকে
-
১৯৭৪ সালের এই দিনে মুম্বাইয়ের (তৎকালীন বম্বে) কিংবদন্তি কাপুর পরিবারে তার জন্ম।
-
তার বাবা রণধীর কাপুর, মা বাবিতা এবং ছোট বোন কারিনা কাপুর খান, দাদা রাজ কাপুর এবং ঠাকুরদা পৃথ্বীরাজ কাপুর সবাই ছিলেন হিন্দি চলচ্চিত্র জগতের প্রভাবশালী নাম।
-
বাড়ির পরিবেশেই শৈশব থেকেই কারিশমার মধ্যে অভিনয়ের প্রতি আকর্ষণ গড়ে ওঠে। ছোটবেলা থেকেই স্বপ্ন দেখতেন পর্দায় নিজেকে প্রকাশ করার।
-
প্রথমে মুম্বাইয়ের ‘ক্যাথিড্রাল অ্যান্ড জন কনন’ বিদ্যালয়ে প্রাথমিক শিক্ষা নেন কারিশমা। পরে ভর্তি হন সোফিয়া কলেজে। কিন্তু খুব অল্প বয়সেই সিনেমার প্রতি ভালোবাসা তাকে লেখাপড়ার গণ্ডি পেরিয়ে অভিনয়ের জগতে টেনে আনে।
-
মাত্র ১৭ বছর বয়সে ১৯৯১ সালে ‘প্রেম কায়েদী’ নামের একটি চলচ্চিত্র দিয়ে বলিউডে পা রাখেন কারিশমা কাপুর। ছবিটি বাণিজ্যিকভাবে সফল না হলেও তার অভিনয় নজর কাড়ে দর্শক ও নির্মাতাদের
-
এরপর একে একে ‘জিগর’, ‘আনারি’, ‘রাজা বাবু’, ‘কুলি নাম্বার ওয়ান’, ‘সাজন চলে শ্বশুরাল’, ‘হিরো নাম্বার ওয়ান’ এইসব হিট ছবিতে অভিনয় করে দ্রুতই জনপ্রিয়তার শীর্ষে পৌঁছে যান কারিশমা।
-
১৯৯৬ সালে আমির খানের বিপরীতে ‘রাজা হিন্দুস্তানি’ চলচ্চিত্রে অনবদ্য অভিনয়ের জন্য তিনি প্রথমবারের মতো শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর পুরস্কার অর্জন করেন। এই ছবিটি তাকে এনে দেয় এক অনন্য উচ্চতা।
-
১৯৯৭ সালে ‘দিল তো পাগল হ্যায়’ ছবিতে সহ-অভিনেত্রী হিসেবে অভিনয় করে অর্জন করেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। আর ‘ফিজা’, ‘জুবেইদা’, ‘শক্তি’ এর মতো ছবি তার অভিনয় দক্ষতার দ্যুতি আরও উজ্জ্বল করে তোলে।
-
চলচ্চিত্র জীবনের সাফল্যের পাশাপাশি ব্যক্তিগত জীবন কিন্তু খুব সহজ ছিল না। ২০০৩ সালে ব্যবসায়ী সঞ্জয় কাপুরকে বিয়ে করেন কারিশমা। কিছুদিনের মধ্যেই সেই সংসারে শুরু হয় ভাঙনের সুর। নানা মতবিরোধ, মানসিক চাপ এবং পারিবারিক দ্বন্দ্বের কারণে ধীরে ধীরে দূরত্ব বাড়তে থাকে।
-
২০০৫ সালে কন্যা সন্তান সামায়রা এবং ২০১০ সালে পুত্র কিয়ান জন্ম নেয়। তবে দাম্পত্য জীবন টিকিয়ে রাখা সম্ভব হয়নি।
-
অবশেষে ২০১৬ সালে কারিশমা ও সঞ্জয়ের বিবাহ বিচ্ছেদ হয়।
-
বিচ্ছেদের পর দুই সন্তানকে নিয়েই কারিশমা শুরু করেন নতুন এক অধ্যায়।
-
বিচ্ছেদের পর কারিশমা দীর্ঘদিন চলচ্চিত্র থেকে নিজেকে দূরে রেখেছিলেন। সময় দিয়েছিলেন নিজের পরিবার ও সন্তানদের। তবে অভিনয়ের প্রতি ভালোবাসা কখনোই মুছে যায়নি।
-
২০২০ সালে তিনি ‘মেন্টালহুড’ নামের একটি ধারাবাহিকে অভিনয়ের মাধ্যমে আবারও দর্শকের সামনে ফিরে আসেন। সেখানে একজন মায়ের চরিত্রে অভিনয় করে নিজের বাস্তব অভিজ্ঞতাকে যেন পর্দায় তুলে ধরেন।
-
২০২৪ সালে ‘মার্ডার মুবারক’ নামের একটি চলচ্চিত্রেও তার অভিনয় প্রশংসিত হয়। বয়স বা সময় নয়, আত্মবিশ্বাস ও প্রতিভা দিয়েই যে একজন নারী নিজেকে নতুনভাবে প্রতিষ্ঠিত করতে পারে-কারিশমা তার জ্বলন্ত উদাহরণ।
-
কারিশমা কাপুর পেয়েছেন অসংখ্য পুরস্কার ও সম্মাননা। এর মধ্যে রয়েছে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, একাধিক শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর পুরস্কার, সহ-অভিনেত্রীর পুরস্কার এবং সমালোচকদের রায়ে পাওয়া সম্মাননা। তবে তার সবচেয়ে বড় অর্জন হয়তো হলো চলচ্চিত্রের পাশাপাশি বাস্তব জীবনের কঠিন পথেও মাথা উঁচু করে এগিয়ে যাওয়া।
-
কারিশমা কাপুর শুধু নব্বইয়ের এক প্রিয় তারকার নাম নয়, তিনি একজন মায়ের প্রতিচ্ছবি, একজন সংগ্রামী নারীর মুখচ্ছবি এবং একজন আত্মপ্রত্যয়ী মানুষের পরিচয়।
-
৫০ বছর বয়স পেরিয়েও তিনি নিজেকে নতুন করে খুঁজে নিচ্ছেন, সন্তানদের সুন্দর ভবিষ্যতের জন্য কাজ করছেন এবং নিজের ভালোবাসার পেশা অভিনয়ের সঙ্গে নিজের সম্পর্ক অটুট রেখেছেন।