দীপঙ্কর দে: নায়ক না হয়েও যিনি ছিলেন গল্পের মেরুদণ্ড
আলোর কেন্দ্রে থাকার জন্য সব সময় নায়ক হওয়া জরুরি না। কখনও কখনও ছায়ার গভীরতাতেই লুকিয়ে থাকে চরিত্রের আসল শক্তি। দীপঙ্কর দে ঠিক তেমনই এক শিল্পীর নাম, যিনি কখনও রঙিন পোস্টারে প্রথম সারির নায়ক ছিলেন না, কিন্তু প্রতিটি দৃশ্যের মেরুদণ্ড হয়ে থেকে গেছেন চুপচাপ, দৃঢ় ও বিশ্বাসযোগ্য অভিনয়ে। বাংলা চলচ্চিত্র ও টেলিভিশনের শত শত চরিত্রে তিনি ঢেলে দিয়েছেন বাস্তবতার ছোঁয়া, এক চিলতে আবেগ, একরাশ নির্ভরতা। দীপঙ্কর দে ছিলেন সেই শিল্পী, যিনি নিজের চরিত্রকে কখনও ‘চরিত্র’ মনে করতেন না, বরং বাঁচিয়ে তুলতেন এক নিখুঁত মানবিকতা দিয়ে। তাই তো আজও তার অভিনীত দৃশ্যগুলো আমাদের মনে দাগ কেটে থাকে, বারবার ফিরে দেখা হয় পর্দার সেই নিরব অথচ গভীর শিল্পীকে। ছবি: সোশ্যাল মিডিয়া থেকে
-
১৯৪৪ সালের এই দিনে ভারতের জামশেদপুরের ঝাড়খন্ডে তার জন্ম।
-
চলচ্চিত্রে যেমন তিনি ছিলেন ছায়ার মতো সত্য, টেলিভিশনেও তার ভূমিকা সমান গুরুত্বপূর্ণ। ‘গানের ওপারে’ নাটকে ‘নক্ষত্র মিত্র’ চরিত্রে তার উপস্থিতি যেমন স্মরণীয়, তেমনি ‘খুকুমনি হোম ডেলিভারি’, ‘জীবনসাথী’, ‘সারবজয়া’ ইত্যাদি ধারাবাহিকে তিনি হয়ে উঠেছেন পারিবারিক গল্পের আত্মা।
-
তার অভিনয়ে ছিল একটা সময়ের প্রতিচ্ছবি, একজন কঠিন কিন্তু স্নেহময় বাবা, একজন দ্বিধাদ্বন্দ্বে জর্জরিত সমাজপ্রেমিক মানুষ কিংবা একজন নিঃসঙ্গ বৃদ্ধ, যিনি ভেতরে অনেক গল্প চাপা দিয়ে বসে আছেন।
-
‘পরমা’ সিনেমায় পার্শ্বচরিত্রে অভিনয়ের জন্য দীপঙ্কর দে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান ১৯৮৬ সালে। এটা শুধু তার জন্য নয়, গোটা বাংলা সিনেমার জন্য এক অনন্য প্রাপ্তি।
-
পশ্চিমবঙ্গ সরকার তাকে দিয়েছে ‘বঙ্গবিভূষণ’ সম্মান। কিন্তু তার সবচেয়ে বড় পুরস্কার সম্ভবত দর্শকের ভালোবাসা-যা আজও তিনি ধরে রেখেছেন।
-
দীপঙ্কর দে শুধু একজন শিল্পী নন, তিনি একজন প্রেমিক মানুষও। বহু বছর একসঙ্গে পথচলার পর ২০২০ সালে অভিনেত্রী দোলন রায়ের সঙ্গে তিনি বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। সামাজিক রীতি-নীতি তোয়াক্কা না করে, পরিণত বয়সে প্রেম ও বিবাহের সাহসিক সিদ্ধান্ত তিনি আমাদের দেখিয়ে দিয়েছেন। এক্ষেত্রে তিনি হয়েছেন বাস্তব জীবনের এক সত্যিকারের নায়ক।