চিরঞ্জীবীর ভাই নন, আজ তিনি নিজেই এক প্রেরণার নাম
তেলুগু চলচ্চিত্রের কিংবদন্তি চিরঞ্জীবীর ভাই হিসেবেই প্রথমে পরিচিত ছিলেন পবন কল্যাণ। কিন্তু সময়ের সঙ্গে তিনি প্রমাণ করেছেন তার পরিচয় অন্যের ছায়ায় সীমাবদ্ধ নয়। নিজের প্রতিভা, অভিনয়গুণ, ব্যক্তিত্ব এবং মানুষের প্রতি দায়বদ্ধতার মাধ্যমে তিনি গড়ে তুলেছেন আলাদা এক আসন। আজ তিনি কেবল একজন তারকার ভাই নন, বরং নিজ যোগ্যতায় কোটি মানুষের অনুপ্রেরণা, ভক্তদের হৃদয়ের প্রকৃত নায়ক এবং জনতার আস্থাভাজন নেতা। ছবি: ফেসবুক থেকে
-
পবন কল্যাণের আসল নাম কনিডেলা শ্রী কল্যাণ কুমার। ১৯৭১ সালের এই দিনে অন্ধ্রপ্রদেশের বাপাটলায় তার জন্ম। শৈশব থেকেই তিনি ছিলেন শান্ত, কিন্তু আত্মবিশ্বাসী।
-
পবনের বড় ভাই চিরঞ্জীবী ছিলেন তেলুগু চলচ্চিত্রের অন্যতম সেরা নায়ক। তবে পবন কল্যাণ কখনোই ভাইয়ের ছায়ায় আটকে থাকতে চাননি। তিনি চেয়েছিলেন নিজস্ব পরিচয় তৈরি করতে, আর সেখানেই শুরু তার অন্যরকম পথচলা।
-
১৯৯৬ সালে ‘আক্কাদা আম্মায়ি ইক্কাদা আব্বায়ি’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে অভিনয়জগতে পদার্পণ করেন তিনি। তবে বড় সাফল্য আসে ১৯৯৮ সালে ‘থোলি প্রেমা’ সিনেমায় অভিনয়ের মধ্য দিয়ে। এই ছবিটি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারও জেতে।
-
এরপর একে একে ‘থাম্মুডু’ (১৯৯৯), ‘বদ্রি’ (২০০০), ‘খুশি’ (২০০১) তাকে পরিণত করে নতুন প্রজন্মের আইডলে।
-
তার সিনেমায় এক বিশেষ ধারা লক্ষ্য করা যায়-যেখানে সাধারণ মানুষের সংগ্রাম, ভালোবাসা আর সাহসিকতা ফুটে ওঠে। দর্শকরা তাকে দেখতে পান কখনো প্রতিবাদী তরুণ হিসেবে, কখনো প্রেমিক রূপে, আবার কখনো সাধারণ মানুষের কণ্ঠস্বর হয়ে।
-
২০০৮ সালের ‘জলসা’, ২০১২ সালের ‘গাব্বার সিং’, ২০১৩ সালের ‘আত্তারিন্তিকি দারেদি’, ২০২১ সালের ‘ভাকিল সাব’ কিংবা ২০২২ সালের ‘ভীমলা নায়ক’ প্রতিটি ছবি তাকে আরও বেশি জনপ্রিয় করে তোলে।
-
পবন কল্যাণের যাত্রা শুধু সিনেমার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। ২০১৪ সালে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন জন সেনা পার্টি। তার লক্ষ্য ছিল একেবারেই ভিন্ন, তিনি রাজনীতিতে প্রবেশ করেছিলেন মানুষের জন্য কাজ করার সংকল্প নিয়ে।
-
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তিনি হয়ে ওঠেন আন্দ্র প্রদেশের জনমানুষের আস্থাভাজন নেতা। ২০২৪ সালে তিনি রাজ্যের উপ-মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন। একই সঙ্গে গ্রামোন্নয়ন, পরিবেশ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, বন ও পঞ্চায়েত রাজ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বও পান।
-
তিনি প্রমাণ করেন সিনেমার পর্দার নায়ক হওয়া যায়, তবে রাজনীতির মঞ্চে মানুষের প্রকৃত সেবক হওয়াটাই আসল সাফল্য।
-
পবন কল্যাণকে তার ভক্তরা শুধু তারকার মর্যাদায় দেখেন না। তারা তাকে দেখে একজন সৎ, নীতিবান ও সাহসী মানুষ হিসেবে। তার জীবনদর্শন বেশ সরল; মানুষের পাশে দাঁড়ানো, সত্য বলা এবং দায়িত্বশীল হওয়া।
-
তিনি সিনেমার পর্দায় যতটা শক্তিশালী, বাস্তব জীবনেও ততটাই দৃঢ়চেতা। এ কারণেই অন্ধ্রপ্রদেশ ও তেলেঙ্গানায় লাখো ভক্ত তাকে ভালোবাসেন হৃদয়ের গভীর থেকে।
-
পবন কল্যাণের জীবনে সিনেমা ও রাজনীতি দুই-ই সমান গুরুত্বপূর্ণ জায়গা দখল করে আছে। তিনি যেমন রূপালি পর্দায় দর্শকদের মাতিয়েছেন, তেমনি রাজনীতির মঞ্চে মানুষের আস্থা অর্জন করেছেন। আজ তার জন্মদিন শুধু তারকা উদযাপন নয়, বরং একজন সত্যিকারের নেতার প্রতি সম্মান জানানোর দিনও বটে।
-
বিশেষ এই দিনে তার প্রতি শুভেচ্ছা রইল, শুভ জন্মদিন পবন কল্যাণ। আপনার যাত্রা হোক আরও অনুপ্রেরণাদায়ী, আলোকিত এবং সফল।