মধুবালা থেকে কারিনা, লতা মঙ্গেশকরের জীবনের অজানা অধ্যায়
ভারতীয় সংগীতের আকাশে তিনি ছিলেন এক চিরন্তন নক্ষত্র। মধুবালার ঠোঁট থেকে কারিনা কাপুরের পর্দায়-প্রজন্ম পেরিয়ে গানের জাদুতে যিনি অমর হয়ে আছেন, তিনি লতা মঙ্গেশকর। সাত দশকেরও বেশি সময় ধরে কণ্ঠের সুরে তিনি জয় করেছেন কোটি শ্রোতার মন। তবে সংগীতজীবনের আলোকচ্ছটায় ঢাকা পড়ে গেছে অনেক অজানা অধ্যায়, যা খুব কম মানুষেরই জানা। জন্মদিনে সেই জানা–অজানা গল্পগুলো আবারও মনে করিয়ে দেয়, কেন লতা মঙ্গেশকর শুধুই গায়িকা নন, তিনি এক যুগের প্রতীক। ছবি: সোশ্যাল মিডিয়া থেকে
-
বেঁচে থাকলে ভারতীয় সংগীতের জীবন্ত কিংবদন্তি লতা মঙ্গেশকর আজ পূর্ণ করতেন ৯৫ বছর। ১৯২৯ সালের এই দিনে মধ্যপ্রদেশের ইন্দোরে জন্ম নেওয়া এই কণ্ঠশিল্পী প্রায় সাত দশক ধরে কোটি শ্রোতার হৃদয়ে রাজত্ব করেছেন। শুধু ভারতেই নয়, তার কণ্ঠ পৌঁছে গেছে বিশ্বসংগীতের দরবারে।
-
২০২২ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি তিনি শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন, তবুও আজও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভক্ত, শিল্পী ও রাজনীতিবিদরা তাকে ভালোবাসায় স্মরণ করেন।
-
মাত্র পাঁচ বছর বয়সেই লতার শিল্পীজীবনের সূচনা। তিনি তখন গান নয়, অভিনয় করেছিলেন বাবার মিউজিক্যাল নাটকে। তার বাবা দীননাথ মঙ্গেশকর ছিলেন গোয়ালিয়র ঘরানার শাস্ত্রীয় সংগীতশিল্পী ও নাট্যশিল্পী। সেই সুবাদেই লতার প্রথম মঞ্চে ওঠা।
-
জন্মের পর তার নাম রাখা হয়েছিল ‘হেমা’। পরে বাবার এক নাটকের চরিত্র লতিকা-র নাম থেকে তিনি হয়ে যান লতা। আর সেভাবেই তিনি পরিচিতি পান সারা দুনিয়ায়।
-
তাদের পারিবারিক পদবি ছিল হার্দিকর। পরে দীননাথ এই পদবি পরিবর্তন করে মঙ্গেশকর করেন, যা পরবর্তীতে পরিবারের সবার পরিচয় হয়ে যায়।
-
লতা প্রথম গান রেকর্ড করেন ১৯৪২ সালে, একটি মারাঠি ছবির জন্য। ১৯৪৬ সালে ‘আপ কি সেবা মে’ ছবির মাধ্যমে বলিউডে প্লেব্যাক শুরু করেন। আর ১৯৪৮ সালে সুরকার গুলাম হায়দারের হাত ধরে পান বড় সুযোগ। তার গাওয়া ‘দিল মেরা তোড়া’ গান তাকে নিয়ে যায় শীর্ষ সারির শিল্পীদের কাতারে।
-
শাস্ত্রীয় সংগীত থেকে রোমান্টিক গান, ভজন থেকে গজল-সব ধরনের গানে তিনি ছিলেন সমান সফল। ভারতের প্রায় সব বিখ্যাত সুরকারের সঙ্গেই কাজ করেছেন তিনি।
-
লতা মঙ্গেশকরকে বলা হয় ভারতের কোকিলকণ্ঠী। তার দীর্ঘ ক্যারিয়ারে প্রায় ৩৬টি ভাষায় তিন দশকের বেশি সময়ে তিনি গেয়েছেন প্রায় ৩০ হাজার গান।
-
ষাটের দশকে শিল্পীদের রয়্যালটি ইস্যুতে তার সঙ্গে কিংবদন্তি মোহাম্মদ রফির সম্পর্ক তিক্ত হয়। প্রায় তিন বছর তারা একসঙ্গে গান রেকর্ড করেননি। পরে সম্পর্ক স্বাভাবিক হলেও এ বিতর্ক আজও আলোচিত।
-
নিজের বোন আশা ভোঁসলের সঙ্গেও তার সম্পর্কে একসময় ফাটল ধরে। আশার প্রথম স্বামী গণপতরাও ভোঁসলে এ নিয়ে নানা বাধা দেন। পরে আরেক সুরকার ও আশার দ্বিতীয় স্বামী আর. ডি. বর্মণ দুই বোনকে কাছাকাছি নিয়ে আসেন।
-
১৯৯৯ সালে লতা মঙ্গেশকরকে ভারতের সংসদের উচ্চকক্ষ রাজ্যসভার সদস্য করা হয়। তবে তিনি খুব বেশি অধিবেশনে যোগ দিতে পারেননি। অসুস্থতার কারণেই সংসদ কার্যক্রমে নিয়মিত অংশ নিতে পারেননি তিনি।
-
লতা মঙ্গেশকর বাংলাতেও অসংখ্য কালজয়ী গান গেয়েছেন। ‘প্রেম একবার এসেছিল নীরবে’, ‘আষাঢ় শ্রাবণ মানে না তো মন’, ‘ও মোর ময়না গো’, ‘ও পলাশ ও শিমুল’, ‘আকাশপ্রদীপ জ্বেলে’-এসব গান আজও বাংলার শ্রোতাদের হৃদয় ছুঁয়ে যায়।
-
লতা মঙ্গেশকর শুধু একজন সংগীতশিল্পী নন, তিনি ছিলেন এক যুগের সংজ্ঞা। ৩৬ ভাষায় তার কণ্ঠ ছড়িয়ে পড়েছে, ছুঁয়েছে কোটি হৃদয়। তার জীবনকাহিনী প্রমাণ করে, শিল্পী হওয়া মানেই শুধু গান গাওয়া নয়, বরং সময়ের সীমানা পেরিয়ে ইতিহাসে অমর হয়ে থাকা।