বিশেষ দিনে জানুন সঞ্জয় মিশ্রর অজানা গল্প
বিনোদনের ঝলমলে দুনিয়ায় সবার চোখ পড়ে গ্ল্যামার, তারকা আভা আর জনপ্রিয়তার দিকে। কিন্তু এই চকচকে পর্দার আড়ালে যারা নীরবে নিজেদের কাজ দিয়ে অভিনয়ের সংজ্ঞা বদলে দেন, তাদের একজন নিঃসন্দেহে সঞ্জয় মিশ্র। আজ সেই অনন্য প্রতিভাধর অভিনেতার জন্মদিন। ছবি: অভিনেতার ফেসবুক থেকে
-
১৯৬৩ সালের এই দিনে ভারতের বিহারের দরভাঙ্গায় সাধারণ এক মধ্যবিত্ত পরিবারে তার জন্ম। তার বাবা ছিলেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের কর্মচারী, যিনি চাইতেন ছেলে স্থায়ী চাকরি করুক।
-
কিন্তু সঞ্জয়ের মন পড়ে ছিল অভিনয়ের দুনিয়ায়। ন্যাশনাল স্কুল অব ড্রামা থেকে প্রশিক্ষণ শেষে শুরু হয় তার যাত্রা, যা সহজ ছিল না মোটেই।
-
সঞ্জয় মিশ্র নামটি উচ্চারণ করলেই মনে পড়ে যায় সেই মানুষটির কথা, যিনি চরিত্রে ঢুকে যান এমনভাবে যে আমরা তাকে আর ‘অভিনেতা’ নয়, চরিত্র হিসেবেই দেখি। হোক তা ‘আঙ্কেল’ সিনেমার নিঃসঙ্গ বৃদ্ধ বাবু, ‘মসান’ এর যন্ত্রণাময় পিতা, কিংবা ‘গোলমাল’ এর হাস্যকর কিন্তু প্রাণবন্ত চরিত্র-প্রতিটি ভূমিকাতেই তিনি যেন নতুনভাবে জন্ম নেন।
-
ক্যারিয়ারের শুরুর দিনগুলোতে সঞ্জয় মিশ্র ছিলেন অনেকটা ‘চেনা মুখ অথচ অচেনা নাম’। ছোট ছোট চরিত্র, বিজ্ঞাপন, সিরিয়াল-এভাবেই নিজেকে প্রতিষ্ঠার পথে নিয়ে যান তিনি। টেলিভিশনে ‘অফিস অফিস’ সিরিয়ালের মাধ্যমে প্রথম বড় সাফল্য পান, যেখানে তিনি ‘শুক্লা’ চরিত্রে অভিনয় করে দর্শকের মনে জায়গা করে নেন।
-
কিন্তু সত্যিকার অর্থে সিনেমায় সঞ্জয় মিশ্রর উত্থান শুরু হয় ২০০০-এর দশকের মাঝামাঝি থেকে। ‘আঙ্কেল’, ‘মসান’, ‘আঙ্কল ভি’, ‘আলিগড়’, ‘কড়বি’, ‘ধমাল’, ‘গোলমাল’-প্রতিটি সিনেমাতেই তিনি প্রমাণ করেছেন, বড় চরিত্র না হলেও একজন শিল্পী তার প্রতিভা দিয়ে দর্শকের হৃদয়ে জায়গা করে নিতে পারেন।
-
সঞ্জয় মিশ্রর অভিনয়ের এক বিশেষ দিক হলো তার স্বাভাবিকতা। তার মুখে সংলাপ যেন কখনোই লেখা স্ক্রিপ্ট থেকে নয়, জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে আসে। তিনি এমনভাবে হাসান, যে তার ভেতরেও একরকম বেদনা লুকিয়ে থাকে।
-
এক সাক্ষাৎকারে সঞ্জয় মিশ্র বলেন, ‘আমি কমেডি করি, কিন্তু আমার চরিত্রগুলো জীবনের গন্ধে ভরা। আমি চাই মানুষ হাসুক, আবার ভাবুকও।’
-
এই কথাগুলোই তার অভিনয়ের দর্শন। হাস্যরসকে তিনি ব্যবহার করেন সমাজ, একাকিত্ব, আর মানুষকে বোঝার অস্ত্র হিসেবে।
-
বলিউডে তারকারা সাধারণত প্রচারের আলোয় থাকেন। কিন্তু সঞ্জয় মিশ্র নিজের আলোয় আলাদা। তিনি খুব বেশি মিডিয়া বা সামাজিক মাধ্যমে সক্রিয় নন। গ্রাম্য জীবন, প্রকৃতি, সরলতা-এই জগতে তিনি বেশি স্বচ্ছন্দ।
-
এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘শহর আমাকে ক্লান্ত করে দেয়। আমি পাহাড়ের বাতাসে নিঃশ্বাস নিতে চাই, যেখানে অভিনয় নয়, জীবনটাই বাস্তব।’
-
‘মসান’ চলচ্চিত্রে তার অভিনয়ের জন্য তিনি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন। তবে তার মতে সবচেয়ে বড় পুরস্কার হলো সাধারণ দর্শকের ভালোবাসা। ছোট চরিত্রেও তিনি যেভাবে দর্শকের মনে জায়গা করে নেন, তা বড় কোনো তারকার পক্ষে সবসময় সম্ভব নয়।
-
আজও সঞ্জয় মিশ্র কাজ করে যাচ্ছেন একাগ্রতায়, নীরবে। নতুন প্রজন্মের কাছে তিনি প্রেরণা-কীভাবে সাফল্য মানে শুধু খ্যাতি নয়, বরং নিজের ভালোবাসার কাজ করে যাওয়া। সঞ্জয় মিশ্র প্রমাণ করেছেন, ‘হিরো’ মানে সবসময় লম্বা সংলাপ বা রোমান্টিক দৃশ্য নয়, ‘হিরো’ হতে হলে দরকার হৃদয় দিয়ে বাঁচা চরিত্রের।