পরিণীতি চোপড়া, যিনি স্বপ্ন ভাঙলেও হার মানেননি
বলিউডের প্রতিভাবান অভিনেত্রী পরিণীতি চোপড়ার জন্মদিন আজ। একসময় করপোরেট দুনিয়ায় ভবিষ্যৎ দেখেছিলেন তিনি, কিন্তু ভাগ্য তাকে টেনে নেয় রুপালি পর্দার ঝলমলে জগতে। নিজের পরিশ্রম, বুদ্ধি ও আত্মবিশ্বাস দিয়ে তিনি প্রমাণ করেছেন-ভাগ্য নয়, মানুষ নিজেই নিজের পথ তৈরি করতে পারে। ছবি: অভিনেত্রীর ইনস্টাগ্রাম থেকে
-
১৯৮৮ সালের এই দিনে ভারতের হরিয়ানার অ্যাম্বালায় পরিণীতি চোপড়ার জন্ম। তার পরিবার শিক্ষিত, স্নেহময় ও সাংস্কৃতিকভাবে সমৃদ্ধ। বাবা পূনিত চোপড়া ছিলেন ব্যবসায়ী, মা রীনা চোপড়া গৃহিণী।
-
পরিণীতির কাজিন প্রিয়াঙ্কা চোপড়া তখনই বলিউডে নিজের অবস্থান তৈরি করছেন, কিন্তু পরিণীতি নিজে একেবারেই ভিন্ন পথে হাঁটতে চেয়েছিলেন।
-
তিনি পড়াশোনা করেছেন ইংল্যান্ডের ম্যানচেস্টার বিজনেস স্কুল থেকে। বিষয় ছিল অর্থনীতি, ব্যবসা ও ফাইন্যান্স। পরিকল্পনা ছিল ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকার হবেন। কিন্তু ২০০৮ সালের মন্দায় সেই স্বপ্ন থেমে যায়। ইংল্যান্ড থেকে দেশে ফিরে পরিণীতি খুঁজে পান নতুন এক দিক-চলচ্চিত্রজগৎ।
-
প্রথমে তিনি যশরাজ ফিল্মসে জনসংযোগ কর্মকর্তা হিসেবে কাজ শুরু করেন। সেখান থেকেই ধীরে ধীরে তার মধ্যে অভিনয়ের প্রতি আগ্রহ তৈরি হয়। পরিচালক আদিত্য চোপড়ার নজরে আসেন তিনি, আর সেই সূত্রেই ২০১১ সালে মুক্তি পায় তার প্রথম চলচ্চিত্র ‘লেডিজ ভার্সেস রিকি বাহল’। যদিও ছবিতে পরিণীতির ভূমিকা ছিল পার্শ্বচরিত্র, কিন্তু তার প্রাণবন্ত অভিনয় দর্শকদের মনে দাগ কাটে।
-
এরপর ২০১২ সালে ‘ইশকজাদে’ ছবিতে জয়া চরিত্রে অভিনয় করে তিনি পান জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের বিশেষ স্বীকৃতি। শক্তিশালী সংলাপ, প্রাণবন্ত অভিব্যক্তি আর সাহসী উপস্থিতি-সব মিলিয়ে পরিণীতি প্রমাণ করে দেন, তিনি কেবল নায়িকা নন, একজন সক্ষম অভিনেত্রী।
-
পরিণীতির পরের যাত্রা ছিল উত্থান-পতনের। ‘শুদ্ধ দেশি রোমান্স’, ‘হাসি তো ফাসি’, ‘দাওয়াত-এ-ইশক’-এইসব ছবিতে তার ভিন্ন ভিন্ন চরিত্র তাকে প্রতিষ্ঠিত করে প্রতিভাবান অভিনেত্রী হিসেবে। তবে কিছু ব্যর্থ ছবি তার ক্যারিয়ারে সাময়িক ধাক্কা আনে।
-
তবু থেমে থাকেননি পরিণীতি। নিজেকে নতুন করে প্রস্তুত করেন, ওজন কমান, ফিটনেসে মনোযোগ দেন এবং ফিরে আসেন ‘গোলমাল এগেইন’, ‘সন্দীপ অউর পিঙ্কি ফারার’ ও ‘সাইনা’-এর মতো চলচ্চিত্রে।
-
বিশেষ করে ব্যাডমিন্টন তারকা সাইনা নেহওয়ালের জীবনীভিত্তিক চলচ্চিত্র ‘সাইনা’-এ তার নিবেদন ও প্রস্তুতি বলিউডে নতুন করে তাকে আলোচনায় আনে।
-
পরিণীতি চোপড়া শুধু একজন অভিনেত্রী নন, বরং এক আত্মবিশ্বাসী নারী, যিনি নিজের স্টাইল ও ব্যক্তিত্বে আলাদা ছাপ ফেলেছেন। সাহসী কিন্তু পরিমিত ফ্যাশন সেন্স, হাসিখুশি স্বভাব, আর সোজাসাপ্টা বক্তব্য তাকে করেছে ভক্তদের কাছে আপন।
-
ইনস্টাগ্রাম বা রেড কার্পেট-সব জায়গায়ই তিনি নিজের উপস্থিতি জানান দেন ভিন্নভাবে। তার পোশাকে যেমন আছে আধুনিকতার ছোঁয়া, তেমনি রয়েছে সরলতার সৌন্দর্য।
-
২০২৩ সালে তিনি বিয়ে করেন ভারতের রাজনীতিবিদ ও উদ্যোক্তা রাঘব চাড্ডাকে। দুজনের ভালোবাসা, পরস্পরের প্রতি সম্মান এবং জীবনযাত্রার ভারসাম্য তাদের সম্পর্ককে করে তুলেছে অনুপ্রেরণার গল্প।
-
সম্প্রতি পুত্রসন্তানের মা হয়েছেন জনপ্রিয় এই অভিনেত্রী।
-
পরিণীতি চোপড়া বলিউডের সেই প্রজন্মের মুখ, যারা পরিশ্রমে বিশ্বাস করেন। তিনি কখনও নিজেকে ‘পারফেক্ট’ বলে উপস্থাপন করেন না, বরং নিজের অসম্পূর্ণতাকেই শক্তি হিসেবে দেখেন। জীবনের প্রতিটি ধাক্কা তিনি পরিণত করেছেন নতুন সম্ভাবনায়।
-
তার গল্প শেখায়-সাফল্য মানে শুধুই আলো নয়, বরং নিজেকে ভেঙে গড়ে তোলার অবিরাম সাহস।