নায়াব মিধার বিয়ের একগুচ্ছ ছবি
একটা কবিতা কখনও কখনও বদলে দিতে পারে পুরো জীবন। তিন বছর আগে ‘মুসকুরাও’, অর্থাৎ ‘হাসো’ নামে একটি কবিতা ঝড় তুলেছিল অনলাইন দুনিয়ায়। কয়েক কোটি মানুষের মন ছুঁয়ে গিয়েছিল সেই কবিতার প্রতিটি শব্দ, প্রতিটি নিঃশ্বাসে ভরা আবেগ। আর সেই কবিতার স্রষ্টা নায়াব মিধা নামটি রাতারাতি হয়ে ওঠে পরিচিত মুখ, এক প্রেরণার প্রতীক। ছবি: ইনস্টাগ্রাম থেকে
-
নায়াব শুধু কবিতাই লেখেন না, তিনি সেই কবিতাকে বাঁচিয়ে তোলেন কণ্ঠে, অনুভবে, দর্শনে। তার কণ্ঠে ‘মুসকুরাও’ শোনা মানে নিজের জীবনের ক্লান্ত দিনটাকে একটু নতুন করে শুরু করা। এই এক কবিতাকেই ভারতের মানসিক স্বাস্থ্যচর্চার ইতিহাসে বলা হয় ২০২২ সালের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার।
-
‘শায়ের’ নায়াব মিধা যিনি মুখে মুখে কবিতা রচনা করেন, মঞ্চে দাঁড়িয়ে ভালোবাসা, বেদনা, আশার ভাষা বলেন। তার শোতে যান অনেকে মন খারাপের চিকিৎসা খুঁজতে, জীবনের নতুন অর্থ পেতে।
-
ইনস্টাগ্রামে তার অনুসারী এখন ২৫ লাখ ছাড়িয়েছে। সম্প্রতি তিনি পেয়েছেন ‘স্টোরিটেলিং স্টার অব দ্য ইয়ার’ পুরস্কার, তার গল্প বলার ক্ষমতাকেই স্বীকৃতি দিয়েছে পৃথিবী।
-
আর সেই গল্প এবার ছুঁয়ে গেল জীবনের নতুন অধ্যায়। ১ থেকে ৩ নভেম্বর পর্যন্ত রাজস্থানের উদয়পুরে অনুষ্ঠিত হলো নায়াব মিধা ও তার দীর্ঘদিনের ভালোবাসার মানুষ আয়ুশ চাধকের বিয়ের উৎসব।
-
আয়ুশ পেশায় সফটওয়্যার প্রকৌশলী। ২০১৪ সালে কলেজে তারা দুজন একসঙ্গে জিতেছিলেন ‘মিস্টার অ্যান্ড মিসেস ফ্রেশার’ খেতাব। ১১ বছর পর সেই পুরোনো টাইটেলই সত্যি হয়ে গেল জীবনে, এবার তারা সত্যিই হলেন মিস্টার অ্যান্ড মিসেস চাধক।
-
তাদের প্রেমের গল্পও সিনেমার মতো সুন্দর। ২০১৬ সালে মালয়েশিয়ায় এক স্টুডেন্ট প্রোগ্রামে গিয়ে একে অন্যকে নতুন করে চিনেছিলেন তারা। সেখানে তারা তিন মাস ধরে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের দেখাশোনা করেছেন। তাদের জন্য রান্না করতেন, খেলতেন, হাসাতেন। সেই স্নিগ্ধ মুহূর্তগুলোর মাঝেই একদিন অজান্তেই জন্ম নেয় ভালোবাসা।
-
নায়াব পরে এক সাক্ষাৎকারে হাসতে হাসতে বলেছিলেন, ‘টমেটো কাটা আর চাওমিন রাঁধার ফাঁকে, আমরা নিজেরাই বুঝিনি কখন প্রেমটা হয়ে গেল।’
-
প্রায় নয় বছর প্রেমের পর তারা বিয়ের মঞ্চে। আর এই বিয়েতেও নায়াব রাখলেন নিজের স্বতন্ত্রতা, প্রথা ভেঙে বরকে হাঁটু গেড়ে নিজেই প্রস্তাব দেন আয়ুশকে। নারীবাদী হিসেবে তার এই সাহসিকতা নিয়ে এখন সামাজিক মাধ্যমে চলছে আলোচনা।
-
নায়াব বলেন, ‘আমি ঝড়ের মতো চাই সব বদলে দিতে। আর আয়ুশ সেই শান্ত সাগর, যে আমাকে ভারসাম্য দেয়।’
-
পরিবেশপ্রেমী এই দম্পতি তাদের বিয়েতে রেখেছিলেন এক ভিন্ন আয়োজন। কোনো প্লাস্টিক নয়, কৃত্রিম ফুল নয়, নেই একটিও অপচয়। আসর সাজানো হয়েছিল রাজস্থানের সত্যিকারের ফুল দিয়ে, অতিথিদের জন্য ছিল পুনর্ব্যবহারযোগ্য গ্লাস ও পানির স্টেশন।
-
নায়াবের পোশাকেও ছিল এক আলাদা বার্তা। নারীর ক্ষমতায়ন নিয়ে কাজ করা এক সংগঠনের মাধ্যমে রাজস্থানি নারীদের হাতে তৈরি লেহেঙ্গা পরেছিলেন তিনি। প্রতিটি অনুষ্ঠানে তার পোশাকেই ছিল স্থানীয় নারীদের হাতে বোনা ঐতিহ্যের ছোঁয়া।
-
লাল লেহেঙ্গা, মাথায় ঐতিহ্যবাহী ওড়না টানা ঘোমটা, পাশে জীবনের ভালোবাসা এইভাবেই সাজলেন নায়াব। বিয়ের প্রতিটি মুহূর্তে ছিল ভালোবাসা, সরলতা আর মানবিকতার মিশেল।
-
দীর্ঘ প্রেম, যৌথ সংগ্রাম আর একে অপরের প্রতি অটল শ্রদ্ধার পর তারা এখন একসঙ্গে নতুন জীবনের পথে। সম্প্রতি দিল্লিতে নতুন ঘর কিনেছেন নায়াব ও আয়ুশ, সেখানেই শুরু হবে তাদের সংসারের গল্প যেখানে থাকবে কবিতা, স্বপ্ন আর সেই পুরোনো প্রতিজ্ঞা-‘মুসকুরাও, কারণ জীবন এখনও সুন্দর।’