আলোচনায় ধর্মেন্দ্র, দেখুন তার জনপ্রিয় কিছু সিনেমা
বলিউডের সোনালি যুগে যখন প্রেম মানেই কবিতা, নায়ক মানেই আকর্ষণ ও আভিজাত্যের প্রতীক তখনই আবির্ভাব হয় এক এমন অভিনেতার, যিনি ছিলেন একই সঙ্গে কোমল হৃদয়ের প্রেমিক, নির্ভীক যোদ্ধা এবং পরিপূর্ণ ভদ্রলোক। তিনি ধর্মেন্দ্র। যিনি ভারতীয় চলচ্চিত্র ইতিহাসে ‘হ্যান্ডসাম হিরো’ উপাধি অর্জন করেন নিজের অভিনয়, ব্যক্তিত্ব ও মানবিকতায়। ছবি: সোশ্যাল মিডিয়া থেকে
-
১৯৩৫ সালের ৮ ডিসেম্বর পাঞ্জাবের লুধিয়ানায় ধর্মেন্দ্র সিং দেওল এর জন্ম। ছোটবেলায় সিনেমার প্রতি গভীর টানই তাকে মুম্বাইয়ে নিয়ে আসে। ১৯৬০ সালে ‘দিল বিহ তেরা হাম বিহ তেরে’ ছবির মাধ্যমে বলিউডে আত্মপ্রকাশ করেন তিনি। তবে তার আসল সাফল্যের শুরু হয় ষাটের দশকের মাঝামাঝি, যখন তিনি একের পর এক হিট ছবির মাধ্যমে দর্শকদের মনে জায়গা করে নেন।
-
শোলে (১৯৭৫): ধর্মেন্দ্রর ক্যারিয়ারের সবচেয়ে জনপ্রিয় সিনেমা ‘শোলে’। জয়-ভিরুর বন্ধুত্ব, গব্বর সিংয়ের আতঙ্ক আর ‘বসন্তী ইন কো কুছ মত বোলনা’ সংলাপের মাধ্যমে এই সিনেমা ভারতীয় সংস্কৃতির অংশ হয়ে গেছে। ভিরু চরিত্রে ধর্মেন্দ্রর সরলতা, হাস্যরস আর বীরত্ব আজও দর্শকদের কাছে সমান জনপ্রিয়।
-
চুপকে চুপকে (১৯৭৫): এই সিনেমা প্রমাণ করে ধর্মেন্দ্র শুধু অ্যাকশন নয়, নিখাদ কমেডিতেও সমান পারদর্শী। এক অধ্যাপক হিসেবে নিজের পরিচয় গোপন করে প্রেমিকার পরিবারের মধ্যে হালকা ধোঁয়াশা সৃষ্টি করেন তিনি। হৃষিকেশ মুখার্জির এই ক্লাসিক কমেডি আজও হালকা মেজাজে হাসির খোরাক জোগায়।
-
সত্যকাম (১৯৬৯): ধর্মেন্দ্রর জীবনের অন্যতম সেরা পারফরম্যান্স বলা হয় এই ছবিকে। এখানে তিনি আদর্শবাদী এক যুবকের চরিত্রে অভিনয় করেন, যিনি নিজের নীতির সঙ্গে আপস করেন না। ছবিটি ধর্মেন্দ্রকে একজন ‘সিরিয়াস অ্যাক্টর’ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে।
-
আনন্দ অর আনন্দ: এখানে ধর্মেন্দ্র অভিনয় করেন নিজের ছেলে সানি দেওলের সঙ্গে। বাবা-ছেলের সম্পর্ক, দায়িত্ববোধ ও জীবনের দ্বন্দ্ব এই ছবিতে অনবদ্যভাবে ফুটে ওঠে। দুই প্রজন্মের এই যুগল দর্শকদের মনে গভীর ছাপ ফেলে।
-
ফাগুন (১৯৭৩): এই রোমান্টিক ছবিতে ধর্মেন্দ্র ও ওয়াহিদা রহমানের রসায়ন দর্শকদের মুগ্ধ করে। এক গ্রামীণ প্রেম কাহিনিতে ধর্মেন্দ্র দেখান কতটা সংবেদনশীল ও গভীর হতে পারে প্রেমের অনুভূতি।
-
হকীকত (১৯৬৪): ভারত-চীন যুদ্ধের পটভূমিতে নির্মিত এই দেশাত্মবোধক ছবিতে ধর্মেন্দ্রর অভিনয় ছিল নিঃস্বার্থ সৈনিকের প্রতীক। এটি তার প্রথমদিকের একটি মাইলফলক সিনেমা, যা তাকে দেশের নায়ক হিসেবে জনপ্রিয়তা দেয়।
-
দো বাদান (১৯৬৬): এই সিনেমায় ধর্মেন্দ্র ছিলেন একজন হৃদয়ভাঙা প্রেমিক, যার নিঃস্বার্থ প্রেম দর্শকদের চোখে জল এনে দেয়। “ভুলা না দে সে” গানের সঙ্গে তার সংযত অভিনয় আজও অমর।
-
জীবন মৃ্ত্যু (১৯৭০): অভিনয়ের তীব্রতা আর প্রতিশোধের আবেগে ধর্মেন্দ্র এখানে একেবারে নতুন রূপে হাজির হন। ছবিটি তাকে অ্যাকশন-হিরো হিসেবে বলিউডে পাকাপোক্ত অবস্থান এনে দেয়।
-
দ্য বার্নিং ট্রেন (১৯৮০): একই সঙ্গে অ্যাকশন, থ্রিলার ও দেশপ্রেমের এক অনন্য সংমিশ্রণ এই সিনেমা। ধর্মেন্দ্রর সাহসী চরিত্র এবং চমকপ্রদ রেল দৃশ্য দর্শকদের জন্য রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা তৈরি করে।
-
রাজা জানি (১৯৭২): ধর্মেন্দ্রর এক ভিন্নধর্মী রোমান্টিক চরিত্র। এখানে তিনি দেখিয়েছেন রোমান্স ও হিউমারের নিখুঁত ভারসাম্য। ছবিটির গান ও সংলাপ আজও ক্লাসিক হিসেবে বিবেচিত।
-
অভিনয় জীবনের পাশাপাশি ধর্মেন্দ্র সবসময় পরিচিত ছিলেন এক বিনয়ী, হৃদয়বান মানুষ হিসেবে। চলচ্চিত্রজগতে তিনি কখনও কারও বিরুদ্ধে কথা বলেননি। সহ-অভিনেতা, পরিচালক থেকে শুরু করে টেকনিশিয়ান সবাই তার বিনয়ী ব্যবহারে মুগ্ধ। তার পরিবারও বলিউডে এক গর্বের নাম। স্ত্রী হেমা মালিনী, পুত্র সানি ও ববি দেওল, যারা এখনো ভারতীয় সিনেমায় সক্রিয়। কিন্তু ধর্মেন্দ্রর মতো বহুমাত্রিক নায়ক খুব কমই পাওয়া যায়; যিনি একসঙ্গে রোমান্টিক, কমেডি, অ্যাকশন ও সামাজিক চরিত্রে সমান সফল।
-
ধর্মেন্দ্র আজও বলিউডের ইতিহাসে এক কিংবদন্তি অধ্যায়। তার সিনেমাগুলো শুধু বিনোদন নয়, সময়ের সাক্ষীও। ‘শোলে’র ভিরু যেমন হাসায়, ‘সত্যকাম’র সত্যব্রত চরিত্র তেমনই ভাবায়। তিনি প্রমাণ করেছেন নায়ক মানে শুধু রূপ নয়, মানসিক দৃঢ়তা, মানবিকতা ও অভিনয়ের গভীরতা।