রোমান্স থেকে অ্যাকশন, সবখানেই সফল ধর্মেন্দ্র
হিন্দি সিনেমার রুপালি পর্দায় যে কয়েকজন নায়ক সমান দক্ষতায় রোমান্স, কমেডি, অ্যাকশন আর চরিত্রভিত্তিক অভিনয় করেছেন ধর্মেন্দ্র তাদের সবার শীর্ষে। ষাটের দশকের কোমল প্রেমিক হিসেবে দর্শক তাকে যেমন নিঃশর্ত ভালোবেসেছে, ঠিক তেমনি সত্তর ও আশির দশকে অ্যাকশন নায়ক হয়ে তিনি জয় করে নিয়েছেন নতুন প্রজন্মের হৃদয়। ছবি: সোশ্যাল মিডিয়া থেকে
-
স্বাভাবিক অভিনয়, ক্যারিশমাটিক উপস্থিতি এবং অনন্য ব্যক্তিত্ব সব মিলিয়ে ধর্মেন্দ্র ছিলেন এমন একজন তারকা, যার কাছে প্রতিটি চরিত্রই হয়ে উঠেছে জীবন্ত, প্রতিটি ছবিই পেয়ে গেছে আলাদা মাত্রা। রোমান্টিক স্নিগ্ধতা হোক কিংবা অ্যাকশন নায়কের তীব্র উপস্থিতি ধর্মেন্দ্র ছিলেন সর্বত্রই অপ্রতিরোধ্য।
-
ভারতীয় চলচ্চিত্রে ‘হ্যান্ডসাম হিরো’ বললেই যে নামটি আজও মনে পড়ে তিনি ধর্মেন্দ্র। বোল্ড লুক, গভীর চোখ, হাসিতে অগাধ শীতলতা আর অভিনয়ে স্বতঃস্ফূর্ততা সব মিলিয়ে তিনি ছিলেন এমন এক নায়ক, যাকে দর্শক ভালোবেসেছেন প্রজন্মের পর প্রজন্ম।
-
ষাটের দশক থেকে হিন্দি সিনেমার যে বদলে যাওয়া শুরু, তার অন্যতম নেতৃত্বে ছিলেন এই পাঞ্জাবি তরুণ, যিনি পরে হয়ে ওঠেন বলিউডের ইতিহাসে ‘হি-ম্যান’।
-
১৯৩৫ সালে পাঞ্জাবের লুধিয়ানায় জন্ম হয় ধর্মেন্দ্র সিং দিওলের। ছোটবেলায় সিনেমা হলে গিয়ে ছবি দেখাই ছিল তার সবচেয়ে বড় আনন্দ। কিন্তু অভিনয়ের স্বপ্ন পূরণ হবে এমন ধারণা তখনকার ধর্মেন্দ্ররও ছিল না। কলেজে পড়াশোনার পাশাপাশি কৃষিকাজেই ছিল তার পরিবারের মূল কর্ম।
-
১৯৬০ সালে ‘ফিল্মফেয়ার নিউ ট্যালেন্ট’ প্রতিযোগিতায় নির্বাচিত হওয়ার মাধ্যমে মুম্বাইয়ে আসার সুযোগ তৈরি হয়। সেখান থেকেই শুরু তার দীর্ঘ চলচ্চিত্র ভ্রমণ।
-
ধর্মেন্দ্রকে বলা হয় বলিউডের সবচেয়ে স্বাভাবিক অভিনেতাদের একজন। তিনি যে চরিত্রেই অভিনয় করেছেন, তা মনে হয়েছে যেন বাস্তবের মানুষ। ষাটের দশকের রোমান্টিক হিরো হিসেবে ‘আস পাস’, ‘অনপঢ়’, ‘কায়া কসম’, ‘চায়না টাউন’ এসব চলচ্চিত্রে তিনি দেখিয়েছেন কোমল অভিনয়ের দারুণ উদাহরণ।
-
এরপর সত্তরের দশকে বলিউডে যখন অ্যাকশন সিনেমার উত্থান, তখন ধর্মেন্দ্রই ছিলেন সেই সময়ের প্রথম সারির অ্যাকশন আইকন। তার ছবিতে স্টান্ট ছিল সাহসী, অভিনয় ছিল প্রাণবন্ত আর স্টাইল ছিল একদম আলাদা। দর্শক তাকে ডাকতে শুরু করেন ‘হি-ম্যান অব বলিউড’।
-
১৯৭৫ সালে মুক্তি পাওয়া কিংবদন্তী চলচ্চিত্র ‘শোলে’ ধর্মেন্দ্রর ক্যারিয়ারের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। ‘বীরু’ চরিত্রে তার উপস্থিতি আজও ভারতীয় সিনেমার কালজয়ী অংশ। হালকা-ফুলকা রসিকতা, প্রেম, বন্ধুত্ব সবকিছুই তিনি এমনভাবে ফুটিয়ে তুলেছিলেন যে দর্শক তাকে হৃদয়ে জায়গা দিতে বাধ্য হন।
-
‘বাসন্তী, ইন কুওঁর কে সামনে মৎ নাচনা…’ সংলাপ আজও জনপ্রিয়, আজও মনে করিয়ে দেয় এক অপ্রতিরোধ্য ধর্মেন্দ্রকে।
-
যে যুগে রঙিন ক্যামেরা খুব কম, তখন থেকেই ধর্মেন্দ্রর পর্দায় উপস্থিতি ছিল চোখধাঁধানো। তার সুঠাম দেহ, গভীর দৃষ্টি, নেচারাল হাসি, পর্দার সামনে সহজ ভঙ্গিমা সবই তাকে বলিউডের সবচেয়ে ‘হ্যান্ডসাম’ অভিনেতাদের মধ্যে অন্যতম করে তুলেছিল। শুধু দর্শকই নয়; সহ-অভিনেত্রী, পরিচালক থেকে শুরু করে সমালোচকরাও তার সৌন্দর্য ও উপস্থিতির কথা উচ্চারণ করেছেন বারবার।
-
ধর্মেন্দ্রকে নিয়ে জয়া ভাদুড়ি একবার বলেছিলেন, ‘তিনি শুধু সুন্দর নন, তার সৌন্দর্য দিয়ে অভিনয় করেন।’ সত্যিই, তার হাসি ও চোখে যেন লুকানো ছিল গল্প বলার এক অনন্য ভাষা।
-
‘চুপকে চুপকে’, ‘সত্যকাম’, ‘জমীর’, ‘ড্রিম গার্ল’, ‘শরাফত’, ‘দোস্ত’ এমন বহু ছবিতে তিনি রোমান্টিক চরিত্রকে করেছেন নিজের মতো করে প্রাণবন্ত।
-
বলিউড ইতিহাসের সবচেয়ে আলোচিত প্রেম কাহিনি বলা হয় ধর্মেন্দ্র-হেমা মালিনী জুটিকে। পর্দায় যেমন রসায়ন ছিল, বাস্তবেও তাদের সখ্যতা পরিণত হয় ভালোবাসায়। দুজন মিলে অভিনয় করেছেন বহু জনপ্রিয় চলচ্চিত্রে। তাদের সম্পর্ক বলিউড প্রেম ইতিহাসে আজও অনুপ্রেরণা।
-
অভিনয়ের পাশাপাশি ধর্মেন্দ্র ২০০৪ সালে রাজনীতিতে যোগ দেন। তিনি বিজেপির হয়ে লোকসভা নির্বাচনে জয় লাভ করেন। রাজনীতিতে তিনি ততটা সক্রিয় না হলেও জনসেবার মানসিকতা তার ব্যক্তিগত জীবনে পরিলক্ষিত হয়েছে।
-
ধর্মেন্দ্রর দুই ছেলে সানি দেওল ও ববি দেওল এখন বলিউডের জনপ্রিয় মুখ। তার পরিবারকে বলিউডের অন্যতম প্রভাবশালী ফিল্ম পরিবার হিসেবে ধরা হয়।
-
বলিউড আজ অনেক বদলে গেছে, কিন্তু ধর্মেন্দ্রর মতো স্বতঃস্ফূর্ত অভিনেতা খুব কমই পাওয়া যায়।
-
ধর্মেন্দ্র শুধু বলিউডের ‘হ্যান্ডসাম হিরো’ নন, তিনি ভারতীয় চলচ্চিত্রের ইতিহাসে এক অনন্য অধ্যায়। তার অভিনয়, স্টাইল, ব্যক্তিত্ব ও মানবিকতা সব মিলে তিনি হয়ে উঠেছেন চলচ্চিত্রপ্রেমীদের চিরচেনা ভালোবাসার নাম। আজও তার ছবি দেখলে নতুন দর্শক মুগ্ধ হন, পুরোনো দর্শক স্মৃতির ভান্ডারে ফিরে যান।