দিল্লির পড়ুয়া মেয়ের দক্ষিণী সিনেমায় নক্ষত্র হয়ে ওঠার গল্প
চোখে এক ধরনের সরল দীপ্তি, হাসিতে কোমলতা আর অভিনয়ে গভীর আবেগ-রাশি খান্না যেন জন্ম থেকেই আলো ছড়ানোর জন্য তৈরি। তবুও এই আলোর পেছনে রয়েছে প্রচুর পরিশ্রম, আত্মবিশ্বাস আর নিজের জায়গা তৈরি করে নেওয়ার জেদ। জন্মদিনের এই বিশেষ দিনে ফিরে দেখা যাক সেই মেয়ের গল্প, যে দিল্লির ব্যস্ত রাস্তায় বড় হয়েছে, আইএএস হওয়ার স্বপ্ন দেখেছে আর পরে পরিণত হয়েছে দক্ষিণী সিনেমার চেনা মুখে। ছবি: অভিনেত্রীর ইনস্টাগ্রামে থেকে
-
দিল্লির কোলাহলের মাঝেই ১৯৯০ সালের এই দিনে জন্ম রাশির। স্কুলে ছিলেন চুপচাপ কিন্তু দারুণ মেধাবী। ক্লাসে সবসময় পরিচিত ছিলেন মেধাবীদের একজন হিসেবে। পরে ইংরেজি সাহিত্যে স্নাতক সম্পন্ন করেন। ছোটবেলা থেকেই তার লক্ষ্য ছিল একজন প্রশাসনিক কর্মকর্তা হওয়া। দেশের জন্য কাজ করার ইচ্ছা তাকে আইএএস হওয়ার দায়িত্বশীল পথের দিকে টেনে নিয়েছিল।
-
মজার ব্যাপার হলো সিনেমা তার জীবনে পরিকল্পনা করে আসেনি; বরং সুযোগ তাকে খুঁজে নিয়েছে।
-
কলেজ জীবনে কিছু বিজ্ঞাপন ও মডেলিংয়ের সুযোগ আসতে শুরু করে। ক্যামেরার সামনে দাঁড়ানোটা তার কাছে যত না স্বপ্ন ছিল, তার চেয়েও বেশি ছিল চ্যালেঞ্জ। তবে নিয়তি যে তাকে আলাদা পথের জন্য তৈরি করেছিল, তা হয়তো তখনই একটু একটু করে বুঝতে শুরু করেছিলেন।
-
অল্প সময়েই পরিচালকদের নজর পড়ে তার দিকে। সাধারণ চেহারার মেয়ের মধ্যে ছিল অসাধারণ স্ক্রিন প্রেজেন্স।
-
২০১৩ সাল। হিন্দি চলচ্চিত্র ‘মাদ্রাস ক্যাফে’ এ একটি সহ-অভিনয়ের ছোট্ট সুযোগ পেলেন রাশি। পর্দায় তার উপস্থিতি ছিল অল্প, কিন্তু শক্তিশালী। সেই প্রথম দর্শক ও পরিচালকরা লক্ষ্য করলেন এ মেয়ের চোখে গল্প আছে। এই ছবিই খুলে দেয় দক্ষিণ ভারতীয় চলচ্চিত্রে প্রবেশের দরজা।
-
২০১৪ সালে মুক্তি পাওয়া ‘উহালু গুসাগুসালাদে’ রাশির অভিনয় ক্যারিয়ারের মোড় ঘুরিয়ে দিল। প্রথম ছবিতেই নায়িকা এবং প্রথম ছবিতেই দর্শকের প্রশংসার ঝড়।
-
এই ছবির কল্যাণেই তিনি পান ‘সাইমা অ্যাওয়ার্ডস’-এর সেরা নারী নবাগত পুরস্কার। সেখান থেকেই শুরু দক্ষিণী সিনেমায় তার নতুন যাত্রা।
-
রাশি খান্নার অভিনয় ক্যারিয়ার যেন ধীরে ধীরে একটি রঙিন মোজাইক। প্রতিটি চরিত্রে ছিল ভিন্ন ভিন্ন রং কখনো হাসি, কখনো আবেগ, কখনো শক্ত মনের নারী।
-
এখন দক্ষিণী ইন্ডাস্ট্রির ‘ডিমান্ডেড ফেস’ মেকার্সদের পছন্দের তালিকায় সবসময় থাকেন রাশি।
-
শুধু সিনেমা নয়, ওয়েব সিরিজেও দুর্দান্ত শক্তি দেখিয়েছেন রাশি। ‘রুদ্রা: দ্য এজ অব ডার্কনেস’–এ আজয় দেবগনের বিপরীতে তার সংযত, গভীর অভিনয় প্রশংসা কুড়ায়। ‘ফারজি’ –তে তার চরিত্র দেখিয়েছে তিনি আরও বৈচিত্র্যময় গল্পে কতটা সহজেই নিজের জায়গা তৈরি করতে পারেন।
-
অনেকেই মনে করেন ওটিটিতে তার সাফল্য প্রমাণ করে তিনি সময়ের অন্যতম বহুমাত্রিক অভিনেত্রী।
-
রাশি খান্নার বিশেষত্ব শুধু তার স্ক্রিন প্রেজেন্স নয়। তার ব্যক্তিত্ব শান্ত, ভারসাম্যপূর্ণ, আত্মবিশ্বাসী। নিজের সাফল্য নিয়ে অহংকার নেই, ব্যর্থতা নিয়ে অভিযোগ নেই। তিনি শুধু নিজের কাজ আর উন্নতিকে গুরুত্ব দিতে পছন্দ করেন।