ভুল পথে হাঁটা তারুণ্যের প্রতিচ্ছবি, কিন্তু ফিরে আসাও শেখায় লিন্ডসে
কখনও ছিলেন হলিউডের উজ্জ্বলতম টিন তারকা, কখনও বা বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দু। মাদক, আইনি জটিলতা, প্রেম-বিচ্ছেদ আর আত্মসংঘাতের গল্পে ভরা তার তারুণ্য, যেন হারিয়ে যাওয়ার আরেক নামই ছিল লিন্ডসে লোহান। অথচ সময়ের স্রোতে সেই হারিয়ে যাওয়া মুখই আজ এক শান্ত, পরিণত নারীর প্রতিচ্ছবি।লিন্ডসের গল্পটা শুধুই একজন অভিনেত্রীর উত্থান-পতনের নয়, এটি এক পুরো প্রজন্মের গল্প; যেখানে তরুণ বয়সের ভুল যেমন বাস্তব, তেমনি ফিরে আসার সাহসও সম্ভব। আজ তার জন্মদিনে ফিরে দেখা যাক সেই জীবনপথ, যেখানে প্রত্যাবর্তনই হয়ে উঠেছে সবচেয়ে বড় অর্জন। ছবি: অভিনেত্রীর ফেসবুক থেকে
-
১৯৮৬ সালে এই দিনে যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্ক শহরের ব্রঙ্কসে তার জন্ম। শৈশবে তার চোখেমুখে ছিল ক্যামেরার ঝলকানি, কৈশোরে হলিউডের গ্ল্যামারে মাথা ঘোরানো উত্থান, আর তারুণ্যে মিডিয়ার শিরোনামে বারবার ফিরে আসা নানা বিতর্কে।
-
মাত্র তিন বছর বয়সেই ফোর্ড মডেলিং সংস্থার হয়ে বিজ্ঞাপনচিত্রে কাজ শুরু করেন লিন্ডসে। কোকা-কোলা, পিজা হাট, উইন্ডিজ, জেপেনিজ কমার্শিয়াল-শৈশবে তার ঝুলিতে জমা হতে থাকে একের পর এক কাজ। সে সময় থেকেই তার চোখে মুখে ছিল আত্মবিশ্বাস, অভিনয়ের প্রতি ছিল সহজাত টান।
-
তার মা ডিনা ছিলেন প্রাক্তন গায়িকা ও নৃত্যশিল্পী, বাবা মাইকেল লোহান ওয়াল স্ট্রিটের ব্যবসায়ী। এমন পরিবারে জন্ম নেওয়া লিন্ডসের জন্য মিডিয়ার দুনিয়ায় প্রবেশ ছিলো যেন পূর্বনির্ধারিত।
-
১৯৯৮ সালে মাত্র ১১ বছর বয়সে ডিজনির সুপারহিট ছবি ‘দ্যা প্যারেন্ট ট্রাপ’ এ একাই দুই চরিত্রে অভিনয় করে তাক লাগিয়ে দেন লিন্ডসে। ওই ছবির পর থেকেই হলিউডের দরজা তার জন্য খুলে যায় বড় করে।
-
এরপর ‘ফ্রাঙ্কে ফ্রাইডে’ (২০০৩), ‘কনফেশন অফ এ টিনেজ ড্রামা কুইন’ (২০০৪), ‘হারবি: ফুললি লোডেড’ (২০০৫) সবই ছিল সফল। তবে তাকে সত্যিকারের টিন আইকন বানিয়ে দেয় ‘মিন গার্লস’ (২০০৪)। টিনা ফের লেখা সেই কাল্ট ক্লাসিক সিনেমায় ক্যাডি হারন চরিত্রে তার অভিনয় আজও মনে রেখেছেন দর্শকরা।
-
যে বয়সে অনেকেই উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা দেয়, সেই বয়সেই লিন্ডসে লোহান হলিউডের পার্টি কুইন হয়ে উঠেন। সাফল্যের ঝলকানিতে ধীরে ধীরে হারিয়ে যেতে থাকেন সেই স্নিগ্ধ মেয়েটি। শুরু হয় অ্যালকোহল, ড্রাগ, পার্টির অতিরিক্ততায় বুঁদ হয়ে থাকা।
-
২০০৭ সাল পুলিশি গ্রেফতার, আদালতের মামলা, রিহ্যাব-সব মিলিয়ে এক অন্ধকার অধ্যায় শুরু হয় তার জীবনে।
-
মিডিয়ার প্রতিটি ক্লিক তখন খুঁজে ফিরতো তার দুর্দশা। পাপারাজ্জিরা ঘিরে ধরতো প্রতিটি পার্টি থেকে বেরোনোর মুহূর্ত, প্রতিটি গাড়ি দুর্ঘটনার পরিনতি।
-
২০০৪ সালে মুক্তি পায় তার প্রথম মিউজিক অ্যালবাম ‘স্পিক’। অ্যালবামটি বিলবোর্ড চার্টে দ্রুত স্থান করে নেয় এবং প্ল্যাটিনাম লাভ করে। পরের বছর আসে ‘এ লিটল মোর পার্সনাল (র)’, যা তার জীবনের হতাশা ও সম্পর্কের টানাপড়েনকে ঘিরে লেখা।
-
ক্যারিয়ারের ঝড় সামলে কিছুটা নিজেকে গুটিয়ে নিতে শুরু করেন লিন্ডসে। ২০১৪ সালে তিনি লন্ডনে থিয়েটার মঞ্চে অভিনয় শুরু করেন, ‘স্পিড দ্যা পিলো; তে তার অভিনয় সমালোচকদের প্রশংসা কুড়ায়।
-
২০২২ সালে লিন্ডসে বিয়ে করেন ফিনান্সিয়াল এক্সিকিউটিভ বাদার শাম্মাসকে।
-
২০২৩ সালে জন্ম হয় তাদের প্রথম সন্তান লুয়াই। এই মাতৃত্ব ও দাম্পত্য জীবনের শান্তি যেন তাকে আরও স্থির করে তোলে।
-
সোশ্যাল মিডিয়ায় এখন আর আগের মতো ঝড় তোলেন না তিনি। তবে গত কয়েক বছরে তিনি আবার ধীরে ধীরে কাজ শুরু করেছেন।
-
২০২২ সালে মুক্তি পাওয়া ‘ফিলিং ফর ক্রিসমাস’ দিয়ে শুরু, এরপর ‘আইরিশ উইশ’।
-
ডিজনি প্রযোজিত ‘ফ্রিকি ফ্রাইডে টু’ তেও তিনি ফিরছেন জ্যামি লি কার্টিসের সঙ্গে; প্রমাণ করছেন, তার ভক্তরা তাকে এখনও ভালোবাসেন।