হলিউড থেকে ইউরোপ, জেরাল্ডিনের বৈচিত্র্যময় অভিনয়যাত্রা
সিনেমার ইতিহাসে এক অনন্য নাম চার্লি চ্যাপলিন। তার কৌতুক, নীরব অভিনয় আর মানবিক গল্প দিয়ে তিনি হয়ে উঠেছিলেন বিশ্বব্যাপী একটি আবেগের প্রতীক। তবে আজকের গল্প তার মেয়ে জেরাল্ডিন চ্যাপলিনকে নিয়ে। তিনি একজন অসম্ভব প্রতিভাবান অভিনেত্রী, যিনি কেবল কিংবদন্তির কন্যা নন, বরং নিজেই হয়ে উঠেছেন একটি অভিনয় অধ্যায়। ছবি: সোশ্যাল মিডিয়া
-
১৯৪৪ সালের এই দিনে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ায় তার জন্ম। তার মা ছিলেন চার্লির শেষ স্ত্রী ও অভিনেত্রী উনা ও’নিল। আর এ দম্পতির সন্তান হিসেবে জন্ম থেকেই তার রক্তে ছিল অভিনয়ের ধারা। তবে চ্যাপলিন নামের ভার যে সহজে বইবার নয়, তা জেরাল্ডিন খুব ছোট বয়সেই টের পেয়েছিলেন।
-
প্রথমদিকে অভিনয়ের চেয়ে নৃত্যই ছিল তার মূল আগ্রহ। তিনি লন্ডনের রয়্যাল ব্যালে স্কুলে পড়াশোনা করেন, পরে প্যারিসে চলে যান ব্যালে ক্যারিয়ার গড়তে। কিন্তু ভাগ্যের কি পরিহাস! পায়ে আঘাতের কারণে নৃত্যকে বিদায় জানাতে হয়। কিন্তু থেমে থাকেননি তিনি। অভিনয়ের দ্বার খুলে দিলেন নিজের জন্য।
-
১৯৬৫ সালে ডেভিড লিনের ঐতিহাসিক ছবি ‘ডক্টর জিভাগো’ দিয়ে অভিনয়ে পা রাখেন জেরাল্ডিন। ‘টোনিয়া’-র চরিত্রে তার আবেগঘন, সংবেদনশীল অভিনয় সবাইকে মুগ্ধ করে। এই ছবি তাকে আন্তর্জাতিক খ্যাতি এনে দেয়, আর প্রমাণ করে তিনি কেবল চ্যাপলিনের কন্যা নন, একজন শক্তিমান অভিনেত্রীও।
-
জেরাল্ডিন চ্যাপলিন নিজের অভিনয়জীবনকে শুধুমাত্র হলিউডে সীমাবদ্ধ রাখেননি। বরং তিনি ইউরোপমুখী হন, বিশেষ করে স্প্যানিশ ও ফরাসি চলচ্চিত্রে তার ব্যাপক উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। এই পদক্ষেপ ছিল তার ক্যারিয়ারের জন্য সাহসী ও কৌশলী।
-
স্প্যানিশ পরিচালক কার্লোস সাউরার সঙ্গে তার দীর্ঘদিনের পেশাগত ও ব্যক্তিগত সম্পর্ক ছিল। সাউরার বেশ কয়েকটি সিনেমায় জেরাল্ডিন মুখ্য চরিত্রে অভিনয় করেন, যেমন-‘ক্রিয়া কুয়েরভোস (১৯৭৬)’, ‘এলিসা, ভিডা মিয়া (১৯৭৭)’, ‘মামা কুমপ্লে সিয়েন আনিয়োস (১৯৭৯)’। তার অভিনয়শৈলীতে ছিল অন্তর্নিহিত আবেগ, আত্মসংঘাত ও মানবিক জটিলতার দারুণ প্রকাশ।
-
জেরাল্ডিন পাঁচটি ভাষায় অভিনয় করেছেন ইংরেজি, স্প্যানিশ, ফরাসি, ইতালিয়ান ও পর্তুগিজ। এই বহুভাষিক দক্ষতাই তাকে করে তুলেছে ট্রুলি গ্লোবাল আর্টিস্ট। কখনো ফরাসি আর্থহাউজ সিনেমায়, কখনো স্প্যানিশ রাজনৈতিক নাটকে-প্রতিটি চরিত্রে তিনি এনেছেন গভীরতা ও বৈচিত্র্য।
-
জেরাল্ডিন কখনোই স্টারডমের মোহে বন্দি হননি। বরং তিনি কাজ বাছাই করেছেন চরিত্রের গভীরতা দেখে। তিনি ছিলেন এমন একজন অভিনেত্রী, যিনি বড় ব্যানারের চেয়ে গুরুত্ব দিতেন গল্পের আবেদনকে। কখনো তিনি ছিলেন গৃহবধূর কষ্টের কাহিনিতে, কখনো বৃদ্ধাশ্রমে আশ্রিত নিঃসঙ্গ নারীর ভূমিকায়।
-
জেরাল্ডিনের কন্যা উনা চ্যাপলিন এখন নিজেও একজন অভিনেত্রী, যিনি ‘গেম অফ থ্রোনস’ সিরিজে ‘তালিসা’-র চরিত্রে অভিনয় করেছেন। এমন উত্তরাধিকার যেখানে বংশ নয়, বরং প্রতিভা ও সাহসিকতার ছায়া বিস্তার করে চলেছে।
-
জেরাল্ডিনের অভিনয়জীবন পুরস্কারে ঠাসা না হলেও, সমালোচক ও সহকর্মীদের কাছে তিনি বরাবরই ছিলেন একজন সম্মানিত শিল্পী। ২০১৮ সালে তাকে স্প্যানিশ ফিল্ম অ্যাকাডেমির পক্ষ থেকে সম্মানসূচক ‘গোয়া অ্যাওয়ার্ড ফর বেস্ট সাপোর্টিং অ্যাকট্রেস’ দেওয়া হয়।
-
৮০ পেরিয়েও অভিনয়ের প্রতি তার ভালোবাসা এতটুকু কমেনি। মাঝে মাঝে তাকে এখনও সিনেমায় দেখা যায় প্রবীণ অথচ সংবেদনশীল চরিত্রে। তার অভিনয় আজও দর্শককে নাড়িয়ে দেয়।