সংগীতে সাহস আর সমাজে ভাঙচুরের নাম ম্যাডোনা
বিশ্ব সংগীতের ইতিহাসে এমন কিছু নাম আছে, যারা শুধু গান গেয়েই থেমে থাকেননি। তারা ভেঙেছেন বাঁধাধরা নিয়ম, প্রশ্ন তুলেছেন সমাজের চর্চিত ধ্যান-ধারণার বিরুদ্ধে, আর এক নতুন মানচিত্র এঁকেছেন শিল্প ও সংস্কৃতিতে। সেই তালিকায় সবচেয়ে উজ্জ্বল নক্ষত্রদের একজন ম্যাডোনা লুইজ চিকোন, যিনি আজও পরিচিত ‘পপের রানী’ নামে। ছবি: অভিনেত্রীর ফেসবুক থেকে
-
ম্যাডোনার ক্যারিয়ার শুরু হয়েছিল আশির দশকের শুরুতে। সে সময় সংগীতের মঞ্চ ছিল অনেকটাই পুরুষশাসিত। নারীরা গান গাইতেন, কিন্তু তারা খুব কমই নিজেদের মত প্রকাশে সাহসী হতে পারতেন। ম্যাডোনা সেই প্রথা ভেঙে সামনে নিয়ে এলেন এক নতুন ধারা।
-
তার গানগুলো শুধু প্রেম, আবেগ বা বিনোদনের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল না; বরং সাহসিকতার সঙ্গে তিনি গেয়েছেন নারী স্বাধীনতা, যৌনতা, ধর্ম এবং সামাজিক বৈষম্য নিয়ে।
-
‘লাইক আ ভার্জিন’, ‘ম্যাটেরিয়াল গার্ল’, ‘লাইক আ প্রেয়ার’, ‘এক্সপ্রেস ইয়োরসেলফ’ প্রতিটি গানেই তিনি দর্শক-শ্রোতাদের চ্যালেঞ্জ করেছেন। বারবার প্রমাণ করেছেন সংগীত শুধু বিনোদনের মাধ্যম নয়, বরং এটি হতে পারে সামাজিক বক্তব্যের শক্তিশালী হাতিয়ার।
-
ম্যাডোনার বিশেষত্ব ছিল তার অদম্য বিদ্রোহী মনোভাব। তিনি কখনো সামাজিক ট্যাবুকে ভয় পাননি। ধর্মীয় প্রতীক ব্যবহার থেকে শুরু করে যৌনতা নিয়ে সরাসরি উচ্চারণ সবকিছুতেই তিনি ছিলেন আলোচনার কেন্দ্রে। ফলে তাকে ঘিরে বিতর্ক যেমন থামেনি, তেমনি তিনি হয়ে উঠেছেন প্রগতির প্রতীক।
-
ম্যাডোনা দেখিয়েছেন, একজন নারীও নিজের শর্তে তারকা হতে পারেন। পুরুষতান্ত্রিক দুনিয়ার চোখরাঙানি উপেক্ষা করে তিনি প্রমাণ করেছেন সাহসী কণ্ঠই পারে পৃথিবীর দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে।
-
শুধু গানে নয়, ফ্যাশন আর স্টাইলেও ম্যাডোনা ছিলেন ভাঙচুরকারী। তার পোশাক, নাচ, মিউজিক ভিডিও সবই সময়ের তুলনায় ছিল অনেক এগিয়ে। আশির দশকে তিনি ছিলেন তরুণদের ফ্যাশন-আইকন। আজও নতুন প্রজন্ম তার ফ্যাশন স্টেটমেন্ট থেকে অনুপ্রাণিত হয়।
-
ম্যাডোনা নারীশক্তির কণ্ঠস্বর হয়ে উঠেছিলেন। তিনি শিখিয়েছেন, একজন নারী কেবল সুন্দরী বা নীরব দর্শক হয়ে থাকবে না, বরং সে হতে পারে নেতা, শিল্পী ও আন্দোলনের প্রতীক। তার সাহসী উপস্থিতি অনেক নারী শিল্পীকেই আত্মবিশ্বাসী করেছে।
-
ষাট পেরিয়েও ম্যাডোনা এখনো থেমে যাননি। মঞ্চে তার এনার্জি, গান নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা আর জীবনের প্রতি তার দৃষ্টিভঙ্গি প্রমাণ করে, তিনি শুধু একজন পপ তারকা নন; তিনি এক যুগের প্রতিনিধিত্বকারী আইকন।
-
ম্যাডোনার নাম উচ্চারিত হলে কেবল গান নয়, সাহস, ভাঙচুর আর পরিবর্তনের কথাও মনে পড়ে। তিনি প্রমাণ করেছেন শিল্প যদি সত্যিই শক্তিশালী হয়, তবে তা সমাজের শিকল ভাঙতে পারে। তাই বলা যায়, সঙ্গীতে সাহস আর সমাজে ভাঙচুরের নাম একটাই ‘ম্যাডোনা’।