স্বাধীনতার ৬০ বছরে সিঙ্গাপুর
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার এক ছোট্ট দ্বীপ রাষ্ট্র সিঙ্গাপুর আজ বিশ্বের মানচিত্রে উন্নতির এক অসাধারণ মাপকাঠি হিসেবে পরিগণিত। ১৯৬৫ সালের ৯ আগস্ট মালয়েশিয়ার শাসন থেকে স্বাধীনতা পাওয়ার পর থেকে এই নগর-রাজ্য তার পদচারণায় স্থির নয়, বরং দ্রুত গতি ও দৃঢ় সংকল্পে অগ্রসর হয়েছে। চলতি বছরের আগস্টে সিঙ্গাপুর তার ৬০তম স্বাধীনতা বার্ষিকী বা ডায়মন্ড জুবিলি উদযাপন করেছে, যা কেবল একটি উৎসব নয় বরং দীর্ঘ সংগ্রাম ও অবিচল প্রগতির এক জীবন্ত প্রমাণ। তথ্যসূত্র: আল-জাজিরা, ছবি: সোশ্যাল মিডিয়া থেকে
-
দেশব্যাপী আয়োজিত আলোকসজ্জা ও বিশাল আতশবাজির মাধ্যমে সিঙ্গাপুর তার ইতিহাসের সেই স্বর্ণযুগকে স্মরণ করলো, যখন নান্দনিক শহুরে অবকাঠামো, শক্তিশালী অর্থনীতি ও মানবসম্পদের বিকাশের ফলে এক স্বপ্নপুরী রূপ নেয়। আজ বিশ্বের অনেক দেশের শ্রমিক, ব্যবসায়ী ও বিনিয়োগকারী এখানেই ভরসা করেন।
-
তবে এই স্বপ্নযাত্রার মধ্যেও সিঙ্গাপুরের সামনে রয়েছে বেশ কিছু বড় চ্যালেঞ্জ, যা আগামী দশকে দেশের ভবিষ্যত গড়ার পথে এক কঠিন পরীক্ষা হবে।
-
একদিকে দেশের পরিচিত চিত্র যেমন- মারিনা বে স্যান্ডসের নীলাকাশে ২০২৯ সালে নির্মিতব্য নতুন চতুর্থ টাওয়ার, ১৫ হাজার দর্শকের জন্য একটি আধুনিক ইনডোর এরিনা, আর চাঙ্গি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ২০৩০-এর দশকে পঞ্চম টার্মিনালের সূচনা।
-
অন্যদিকে, জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি, বৃদ্ধ বয়সী জনগোষ্ঠীর চাপ, কম জন্মহার এবং বৈশ্বিক রাজনৈতিক উত্তেজনা দেশটিকে নতুন বাস্তবতার মুখোমুখি করছে।
-
বিশেষজ্ঞদের মতে, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির ফলে সিঙ্গাপুরে বন্যা ও ভূমিধসের সম্ভাবনা বেড়েছে, যা সাবেক প্রধানমন্ত্রী লি সিয়েন লুং-এর ভাষায় ‘জীবন-মরণের বিষয়’। তাই সরকার পূর্ব উপকূলে কৃত্রিম তিনটি দ্বীপ নির্মাণের মাধ্যমে প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে।
-
তাপমাত্রার অপ্রত্যাশিত বৃদ্ধিও শ্রমজীবী মানুষের কর্মক্ষমতায় প্রভাব ফেলতে পারে। অন্যদিকে, ২০৩০ সালের মধ্যে দেশের এক-চতুর্থাংশ মানুষ ৬৫ বছরের বেশি বয়সী হবে। এতে স্বাস্থ্যসেবায় চাপে বৃদ্ধি পাবে, যা নতুন প্রযুক্তি ও সেবা ব্যবস্থার মাধ্যমে সামলাতে সরকার জোরালো উদ্যোগ নিয়েছে।
-
আরও উদ্বেগের বিষয় জন্মহার কমে যাওয়া। ২০২৩ সালে দেশটির জন্মহার ১.০ এর নিচে নেমে যাওয়ায় জনসংখ্যা বৃদ্ধির গতি প্রায় স্তিমিত। পরিবারকে সহায়তা করার মাধ্যমে সরকার এই প্রবণতাকে ঘুরিয়ে দাঁড় করানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
-
ভবিষ্যতের রাজনৈতিক পরিস্থিতিও সহজ নয়। চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক উত্তেজনার মাঝে সিঙ্গাপুর তার নিরপেক্ষ অবস্থান রক্ষায় জোর দিচ্ছে। তবে ২০২০ সালে আঞ্চলিক বৃহৎ বাণিজ্যিক চুক্তি আরসিইপির নেতৃত্বে স্বাক্ষর দেশটির অর্থনৈতিক নিরাপত্তার লক্ষণ স্বরূপ।
-
অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে ক্ষমতাসীন পিপলস অ্যাকশন পার্টির দীর্ঘ মেয়াদি শাসন রয়েছে, কিন্তু তরুণ প্রজন্মের মধ্যে আরও মুক্ত ও অংশগ্রহণমূলক রাজনৈতিক সংস্কৃতির চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
-
সিঙ্গাপুরের ৬০তম স্বাধীনতা বার্ষিকী শুধু অতীতের সাফল্যের গল্প নয়, এটি আগামী দিনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় এক অনুপ্রেরণা ও সংকল্পের প্রতীক।
-
প্রযুক্তি, পরিকল্পনা ও নেতৃত্বের মিশেলে এই ছোট্ট দ্বীপ রাষ্ট্র নিশ্চিতভাবেই ভবিষ্যতের পরীক্ষায় জয়ী হবে, আর বিশ্বকে দেখাবে কীভাবে সংকট থেকে সমৃদ্ধি গড়ে তোলা যায়।