গরমের মাঝে স্বস্তির ছোঁয়া
আমাদের প্রাণের শহর ঢাকা। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত এই শহর যেন কখনো থেমে থাকে না। ব্যস্ত সড়ক, গাড়ির হর্ন, মানুষজনের ভিড়-সব মিলিয়ে ঢাকা যে একটি জীবন্ত শহর। কিন্তু হঠাৎ দুপুরের আকাশ কালো মেঘে ঢাকা পড়ে, বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে আর্দ্রতার হালকা গন্ধ, আর শুরু হয় ঝুম বৃষ্টি-ঢাকার এই মুহূর্তটাই হয় শহরের প্রাণের এক অদ্ভুত বিরাম। ছবি: মাহবুব আলম
-
বৃষ্টি মানেই শুধু জল পড়া নয়। ঢাকার জন্য বৃষ্টি মানেই নগরের ব্যস্ততা থেকে কিছুটা মুক্তি, আরেক ধরনের শান্তি।
-
দুপুরের এই ঝুম বৃষ্টিতে শহরের ব্যস্ত মানুষদের চোখে দেখা যায় বিস্ময় এবং আনন্দের মিশ্র প্রতিক্রিয়া।
-
যারা খোলা রাস্তায় ছিলেন, তারা ছাতা খুঁজে বের করার জন্য ব্যস্ত, আবার কেউ কেউ সেই অপ্রত্যাশিত বৃষ্টির ছোঁয়ায় হাসতে লাগেন।
-
ঢাকার রাস্তাঘাট বৃষ্টির সময় যেন নতুন রূপে ফুটে ওঠে। গাড়ির হালকা হর্ন, ধুলো মুছে যাওয়া সড়ক, পানি জমে ছোট ছোট পুকুর-সবই যেন শহরের নান্দনিক চিত্রের অংশ।
-
রাস্তায় হাঁটা মানুষদের ধীরে ধীরে ছাতা খুলে নেওয়া, বৃষ্টির মধ্যে ছন্দময় পদচারণা এমন দৃশ্যগুলো অচেনা শহরের ছবির মতো।
-
তবে শুধু সৌন্দর্য নয়, বৃষ্টির সঙ্গে আসে কিছু সমস্যা। সড়কে পানি জমে যানজট তৈরি হয়, অটো এবং রিকশাচালকেরা পানির ভিড় সামলাতে হিমশিম খায়। বৃষ্টিতে ভিজে পোশাক, স্লিপার ও ব্যাগ-সবই নগর জীবনের এক বাস্তব ছবি। অথচ এই ঝুম বৃষ্টি, এই অল্প সময়ের ভেজা, ঢাকার মানুষের মনে এক অদ্ভুত রোমাঞ্চ সৃষ্টি করে।
-
ঢাকায় গ্রীষ্মকালীন বৃষ্টি আসলে মানুষের শরীর ও মন দুইয়ের জন্যই প্রয়োজনীয়। গরম, আর্দ্রতা, ধুলো-সব মিলিয়ে দুপুরের ঝড়ে একটি সতেজতার বাতাস আসে।
-
বৃষ্টির ফলে বাতাসে আর্দ্রতা কমে, তাপমাত্রা কিছুটা হ্রাস পায় আর শহরের মানুষের মুখে আসে স্বস্তির হাসি। বিশেষ করে যারা অফিস বা বাড়িতে গরমে অতিষ্ঠ হয়ে আছেন, তাদের জন্য এই ঝুম বৃষ্টি যেন প্রাকৃতিক কুলার।
-
ঝুম বৃষ্টি শুধু মানুষের আনন্দের কারণ নয়, এটি শহরের পরিবেশের জন্যও আশীর্বাদ। বৃষ্টির পানি ধুলো-কণা ধুয়ে দেয়, রাস্তার ধুলিকণা কমায় এবং শহরের সবুজে প্রাণ ফেরায়। গাছপালা এই বৃষ্টির পানিতে সজীব হয়ে ওঠে। ধুলো-ময়লা কমার কারণে বাতাস কিছুটা পরিষ্কার হয়, যা শহরের মানুষের স্বাস্থ্যেও ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।
-
ঢাকার এই দুপুরের ঝুম বৃষ্টি নগর জীবনের রোমাঞ্চের এক অংশ। ব্যস্ততা, যানজট, আবহাওয়ার চাপে চাপা পড়া জীবনে হঠাৎ এই বৃষ্টি আসে যেন শহরকে মনে করিয়ে দেয়-তুমি এখনো বেঁচে আছো। ছোট ছোট মুহূর্তগুলো, যেমন বৃষ্টির পানি গড়িয়ে রাস্তার খোঁড়াকালো চোরাগলিতে পড়া, বৃষ্টিতে ভিজে যাওয়া রিকশাচালক, স্কুলছাত্রদের খেলার দৃশ্য-সবই শহরের জীবন্ত গল্প।