শরতের কাশফুল আর আকাশ
বাংলার প্রকৃতি যেন ঋতুর ছন্দে গান গেয়ে যায়। গ্রীষ্মের রোদ, বর্ষার বৃষ্টি শেষে যখন শরৎ আসে, তখন প্রকৃতির রঙ বদলে যায়। শরতের আকাশ আর কাশফুল মিলে তৈরি করে এক অন্যরকম কবিতা, যেখানে আলো, বাতাস আর রূপের সুরেলা মেলবন্ধন ঘটে। এই ঋতুতে মাঠের পর মাঠ কাশফুলে ভরে ওঠে সাদা সাদা তুলোর মতো ফুলে, যেন প্রকৃতি তার বুকজুড়ে বিছিয়ে দিয়েছে শুভ্রতার চাদর। ছবি: অধরা মাধুরী পরমা
-
কাশফুল শুধু ফুল নয়, বাংলার শরতের পরিচয়। নদীর তীর, মাঠের প্রান্তর কিংবা গ্রামের বাঁশঝাড়ের পাশে সারি সারি কাশফুল দাঁড়িয়ে থাকে হাওয়ার দোলায় দুলে। দূর থেকে তাকালে মনে হয় প্রকৃতির বুকজুড়ে যেন সাদা ঢেউ খেলছে। এই কাশফুল মানুষের মনে এনে দেয় প্রশান্তি, জাগায় নরম অনুভূতি। কবি-সাহিত্যিকদের কাব্যে কাশফুল তাই বিশেষ জায়গা করে নিয়েছে। শরতের রূপ বর্ণনায় কাশফুল ছাড়া বাংলা সাহিত্য যেন অসম্পূর্ণ।
-
কাশফুলের শুভ্রতার সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে শরতের আকাশ। বর্ষার ঘন মেঘ কেটে গিয়ে আকাশ তখন ঝকঝকে নীল। মাঝে মাঝে সাদা মেঘ ভেসে বেড়ায় তুলোর মতো, আর সেই মেঘের আড়াল থেকে হঠাৎ উঁকি দেয় সোনালি রোদ। শরতের এই আকাশ যেন স্বপ্ন আর বাস্তবের মিলিত ছবি। ভোরের আকাশ হয় নির্মল, সন্ধ্যার আকাশে ছড়িয়ে পড়ে কমলা আর গোলাপি রঙের আভা। মনে হয়, প্রকৃতি যেন তুলির আঁচড়ে এঁকে চলেছে রঙিন ক্যানভাস।
-
শরতের কাশফুল আর আকাশ শুধু প্রকৃতির রূপ নয়, গ্রামীণ জীবনের আনন্দও বটে। এই সময়ই অনুষ্ঠিত হয় শারদীয় দুর্গাপূজা, যার আবহ কাশবন আর নীল আকাশের সাথে যেন মিশে যায়। মাঠের শিশুরা কাশফুল হাতে খেলতে থাকে, আবার তরুণ-তরুণীরা শরতের এই সৌন্দর্যকে কবিতা, গান আর ছবিতে ধারণ করে রাখে।
-
শরতের কাশফুলে লুকিয়ে আছে শান্তি, স্নিগ্ধতা আর অনাবিল সৌন্দর্য। ব্যস্ত নগর জীবনে এক মুহূর্তের জন্য হলেও যখন কেউ কাশবনের সামনে দাঁড়িয়ে থাকে, তখন বুক ভরে যায় এক অন্যরকম প্রশান্তিতে। আর যখন চোখ ওঠে নীল আকাশে, তখন মনে হয়-এ পৃথিবী এখনো কত সুন্দর, কত নির্মল।
-
রাস্তার পাশে বেঁধে রাখা গরু। শহরের মাঝে এমন দৃশ্য খুবই বিরল।