হঠাৎ বৃষ্টি, ক্লান্ত শহরে একফোঁটা শান্তি
দুপুরের রোদ তখন যেন আগুনের মতো ছড়িয়ে পড়েছিল রাজধানী ঢাকার আকাশে। রাস্তায় ধুলো, যানজট আর ক্লান্ত মুখের ভিড়ে শহরটা ছিল যেন প্রতিদিনের মতোই হাপিয়ে ওঠা। এমন সময় হঠাৎই আকাশে জমে উঠল কালো মেঘ, মুহূর্তেই নামল ঝুম বৃষ্টি-একদম অঘোষিত অতিথির মতো। কেউ ছাতা আনেননি, কেউ আবার অফিস বা স্কুল থেকে ফেরার পথে। কিন্তু তবুও, বৃষ্টির এমন আগমন যেন একরাশ স্বস্তি বয়ে আনল শহরের ক্লান্ত হৃদয়ে। ছবি: মাহবুব আলম
-
বাড্ডা, রামপুরা, মেরুল বাড্ডা কিংবা মালিবাগ-সবখানেই তখন এক দৃশ্য। হঠাৎ বৃষ্টিতে রাস্তার পাশে আশ্রয় নিচ্ছে মানুষজন।
-
কেউ দোকানের ছাউনির নিচে, কেউ বাসস্ট্যান্ডের গায়ে ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে।
-
স্কুলফেরত বাচ্চাদের হাতে হয়তো ছোট একটা ছাতা, কিন্তু তা দিয়ে পুরো শরীর তো ঢাকে না! তাই কেউ ভিজে হাসছে, কেউ বা কাঁদছে ঠান্ডা পানির ছিটে লাগায়।
-
রিকশাওয়ালারা কারও ছাতা খুলে দিয়েছে যাত্রীদের জন্য, আবার কেউ নিজের মাথা ভিজিয়েই চালাচ্ছেন রিকশা।
-
কারও শরীরে ভিজে গেছে কাপড়, কারও কাগজ বা ব্যাগ-তবুও সবার মুখে যেন অদ্ভুত এক প্রশান্তি। কারণ ঢাকার মানুষ জানে, বৃষ্টি মানেই শুধু ভিজে যাওয়া নয় এ এক অন্যরকম অনুভব।
-
শহরের একপাশে যেমন ছাতার নিচে দাঁড়িয়ে অফিসগামীদের তাড়া, অন্যপাশে তেমনি ছাদের ওপর দাঁড়িয়ে কিছু তরুণ-তরুণী বৃষ্টিতে গান গাইছে, হাসছে, ছবি তুলছে।
-
ঢাকার বৃষ্টি এমনই। এই শহরের মতোই হঠাৎ আসে, হঠাৎ চলে যায়, কিন্তু থেকে যায় কিছু মুহূর্ত-যা ব্যস্ত জীবনের মাঝে একটু থেমে যাওয়ার সুযোগ দেয়।
-
বৃষ্টির পর রাস্তা ভিজে যায়, কাদায় মাখা হয়ে যায় গলি-মহল্লা, গাড়ির চাকায় ছিটকে পড়ে পানি, কিন্তু এর মধ্যেও যেন একটা জাদু আছে। এই বৃষ্টি ক্লান্ত শহরটাকে ধুয়ে দেয় ধুলোয় ঢাকা ক্লান্তি থেকে।
-
যখন আকাশ পরিষ্কার হয়, সূর্যের আলো পানিতে প্রতিফলিত হয়ে ঝিলমিল করে, তখন মনে হয়-ঢাকা যেন নতুন করে প্রাণ ফিরে পেয়েছে।
-
হয়তো এই বৃষ্টিই ঢাকাবাসীর জীবনের একটুখানি কবিতা। যান্ত্রিক দিনের ভেতরেও সে মনে করিয়ে দেয়-সবকিছু সময়মতো না চললেও, জীবন সুন্দর হতে পারে এক ঝুম বৃষ্টির ফোঁটায়।