দুর্গন্ধ নয়, এখন বুড়িগঙ্গায় প্রাণের ঘ্রাণ
একসময় বুড়িগঙ্গার নাম শুনলেই মানুষের মনে ভেসে উঠত কালো, স্থবির, দুর্গন্ধে ভরা এক নদীর চিত্র। যে নদী ছিল ঢাকার প্রাণ, সেই নদীই ধীরে ধীরে হারিয়ে ফেলেছিল নিজের অস্তিত্ব। কিন্তু সময় ঘুরে দাঁড়িয়েছে-প্রকৃতির ছোঁয়ায়, বৃষ্টির ধারায়, আর মানুষের আশা মিশে এখন যেন নতুন জীবন পেয়েছে বুড়িগঙ্গা। ছবি: বিপ্লব দীক্ষিৎ
-
বৃষ্টির ফোঁটা পড়তেই বদলে যায় তার রূপ। ধুয়ে যায় মলিনতা, স্বচ্ছ জলে দেখা মেলে মাছের খেলা, নৌকার ছলছল ধ্বনি, আর মাঝিদের কণ্ঠে ফিরে আসে পুরনো দিনের গান।
-
সদরঘাটের বাতাসে এখন আর নেই দূষণের ভার, বরং ভেসে আসে এক নির্মল সতেজ ঘ্রাণ, যা বলে দেয়, নদী এখনো বেঁচে আছে, প্রাণ ফিরে পেয়েছে বুড়িগঙ্গা।
-
মেঘভেজা বাতাসে যখন শহরের কোলাহল নরম হয়ে আসে, তখন বুড়িগঙ্গার বুকেও পড়ে নতুন প্রাণের ছোঁয়া। দীর্ঘদিনের জমে থাকা দূষণ ধুয়ে দেয় বৃষ্টির ধারা। কালো জলের জায়গায় ধীরে ধীরে ভেসে ওঠে হালকা সবুজাভ নীল রঙ, যেটা সূর্যের আলোয় ঝলমল করে।
-
এই সময় নদীর জল এতটাই স্বচ্ছ হয়ে যায় যে, মাঝনদীতে দাঁড়ালে নিচে মাছের দলকে দেখা যায় এদিক-ওদিক ছুটোছুটি করতে। ঢেউয়ের সঙ্গে মিশে যায় পাখির ডাক, আর বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে এক পরিচ্ছন্ন সতেজতা। যে নদীর জল একসময় দুর্গন্ধে ভরা ছিল, এখন সেই নদীর ঘ্রাণেই জেগে ওঠে জীবনের অনুভব।
-
বৃষ্টির মৌসুমে সদরঘাট যেন এক জীবন্ত ক্যানভাস। সারি সারি নৌকা নদীর বুক জুড়ে ভাসে, মাঝিদের কণ্ঠে বাজে পুরনো নৌকার গান।
-
যাত্রীরা এখন নদী পাড়ি দিতে গিয়ে মুখ ঢাকে না, বরং মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকে বুড়িগঙ্গার জলে। যাদের কাছে নদী মানেই একসময় ছিল গন্ধ আর গ্লানি, তাদের চোখেও এখন ভেসে ওঠে এক নতুন আশা।
-
সদরঘাটের ঘাটে দাঁড়িয়ে দেখা যায়-নৌকার সারি, ঢেউয়ের উপর ঝিকিমিকি আলো, আর দূরের আকাশে ভাসমান মেঘের খেলা। মনে হয়, নদী যেন আবারও ঢাকাকে বাঁচিয়ে রাখছে নিজের বুকের জলে।
-
বৃষ্টিভেজা বাতাসে যখন নদীর ধারে দাঁড়ানো যায়, তখন চোখ বন্ধ করলেই টের পাওয়া যায় সেই অনন্য ঘ্রাণ। না, এটা কোনো কৃত্রিম সুবাস নয়, এটা প্রকৃতির নিজের ঘ্রাণ। মাটির সঙ্গে মিশে থাকা জলের গন্ধ, ঢেউয়ের স্পর্শ আর বাতাসে ভেসে থাকা জীবনের সুর-সব মিলিয়ে যেন এক অদ্ভুত প্রশান্তি।
-
এই ঘ্রাণ মানুষকে মনে করিয়ে দেয়, এখনও সব শেষ হয়নি। যতদিন নদী আছে, ততদিন শহর বাঁচবে; যতদিন বৃষ্টি আসবে, ততদিন নদী আবারও নিজের জীবন ফিরে পাবে।