বাগেরহাটে ফিরছে আখের সুদিন
বাগেরহাটের অর্থনীতিতে আবারও সুদিন ফেরাতে পারে ঐতিহ্যবাহী আখ চাষ। একসময় এ জেলার গুড়ের খ্যাতি দেশজোড়া থাকলেও, মাটির লবণাক্ততা বৃদ্ধিসহ নানা কারণে কৃষকরা আখ চাষ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলেন। তবে, সম্প্রতি খাল খনন এবং অতিবৃষ্টির ফলে জমির লবণাক্ততা কমে যাওয়ায় কৃষকরা আবারও আধুনিক পদ্ধতিতে আখ চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। ছবি: নাহিদ ফরাজী
-
এক দশক ধরে অন্যের জমি বর্গা নিয়ে কৃষিকাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন আলী আকবর শেখ। একসময় ধান চাষের সাথে জড়িত থাকলেও বাড়তি লাভের আশায় গত বছর ১ বিঘা জমিতে আখ চাষ করেন তিনি। কিন্তু প্রাকৃতিক দুর্যোগে আখ নষ্ট হওয়ায় লোকসান হয় ৬০ হাজার টাকা। তবে তরুণ আকবর থেমে যাননি। ধারদেনা করে চলতি বছর আবারও আখ চাষ করেন। তবে জমির পরিমাণ কিছুটা কম। ১০ কাঠা জমিতে চাষাবাদ করে চলতি মৌসুমে লাভ করেন ৭০ হাজার টাকার বেশি।
-
বাগেরহাটের কচুয়া উপজেলার ফুলতলা গ্রামের আলী আকবর বলেন, ‘গত বছর দুর্যোগের মাত্রা বেশি ছিল। আমাদের এলাকার বেশিরভাগ চাষির লোকসান হয়। এ বছর আখের ফলন ভালো হয়েছে, দামও ভালো পেয়েছি। কিন্তু ধারদেনা করে চাষ করি। গত বছরের লোকসানের ঋণ শোধ করতে হবে। সারা বছর চার সদস্যের পরিবার নিয়ে কীভাবে চলবো সেই চিন্তায় আছি। চাষিরা ঘুরে দাঁড়াতে কৃষি অফিস থেকে সামান্য সহযোগিতাও পান না।’
-
কচুয়া উপজেলার বাধাল বাজারে দেখা যায়, ভোরের আলো ফুটতেই ক্রেতা-বিক্রেতাদের হাকডাকে মুখর বাজারটি। ভোর থেকেই জেলার বিভিন্ন জায়গা থেকে ভ্যান, পিকাপ ও ট্রাকে করে নিয়ে আসা আখ বেচাকেনা চলে।
-
বাজার সমিতি জানায়, রোববার ও বৃহস্পতিবার ১৫ থেকে ২০ লাখ টাকার আখ বিক্রি হয় এ বাজারে। চাষিদের থেকে পাইকারদের হাত ঘুরে এ আখ চলে যায় দেশের বিভিন্ন স্থানে। প্রতি একশ আখ পাইকারি মান ও আকার ভেদে ৩ হাজার থেকে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়।
-
কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, এ বছর বাগেরহাটে প্রায় ৭৫০ একর জমিতে আখ চাষ হয়েছে। যাতে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে প্রায় ১১ হাজার মেট্রিক টন। বাগেরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. মোতাহার হোসেন বলেন, ‘ধান, সরিষা, সূর্যমুখী চাষিদের সরকার প্রণোদনা দেয়। প্রণোদনা দিয়ে তাদের উৎসাহিত করা হয়। কিন্তু আখ চাষিদের জন্য এ ধরনের কোনো প্রণোদনা নেই।’