মাইক টাইসন: ঘুষিতে গড়েছেন ইতিহাস, আচরণে ডেকে এনেছেন বিতর্ক
ঘুষি ছিল তার হাতের ভাষা। প্রতিপক্ষের চোখে ভয়, গতি আর শক্তির মিশেলে তিনি হয়ে উঠেছিলেন রিংয়ের একমাত্র রাজা। মাত্র ২০ বছর বয়সেই হয়ে গিয়েছিলেন হেভিওয়েট চ্যাম্পিয়ন-যেখানে অনেকেই পৌঁছাতে পারেন না সারা জীবনেও। কিন্তু এই বিজয়ের আড়ালেই ছিল এক অসংযত, উগ্র স্বভাব; যার কারণে টাইসনের নাম যেমন উচ্চারিত হয়েছে সম্মানের সঙ্গে, তেমনি জড়িয়েছে অগণিত বিতর্কেও। কখনও ধর্ষণ মামলায় কারাগারে, কখনও প্রতিপক্ষের কান কামড়ানোয়-প্রতিভার সঙ্গে বয়ে বেড়িয়েছেন বিতর্কের দাগ। আজও তিনি বক্সিংয়ের ইতিহাসে অনন্য, তবে সেই ইতিহাস রচিত হয়েছে আলো-অন্ধকার দুই মিশিয়ে। ছবি: ফেসবুক থেকে
-
১৯৬৬ সালের এই দিনে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক শহরের ব্রুকলিন এলাকার ফর্ট গ্রিনে জন্ম মাইকেল জেরাল্ড টাইসনের, যিনি বিশ্বজুড়ে পরিচিত ‘মাইক টাইসন’ নামে। তার মা লরনা মেই স্মিথ এবং কথিত পিতা জিমি কার্কপ্যাট্রিক। বাবা ছোটবেলায় পরিবার ছেড়ে চলে গেলে টাইসনের বেড়ে ওঠা হয় শুধুমাত্র মায়ের সান্নিধ্যে, দারিদ্র্য আর অপরাধপ্রবণ এলাকায়।
-
মাত্র ১৩ বছর বয়সে ৩৮ বার পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়েছিলেন তিনি। সেই সময়ই পাঠানো হয় নিউইয়র্কের ট্রাইওন স্কুল ফর বয়েজে, সেখানেই জীবন বদলে যাওয়ার শুরু।
-
এক ক্রীড়া প্রশিক্ষক বব স্টুয়ার্ট প্রথম তার প্রতিভা চিনে ফেলেন এবং নিয়ে যান কিংবদন্তি কোচ কাস ড্যামাটো’র কাছে। ড্যামাটো মাইককে শুধু একজন বক্সার নয়, একজন সাহসী মানুষ হিসেবেও গড়ে তোলেন।
-
মাত্র ১৮ বছর বয়সে পেশাদার বক্সিংয়ে পা রাখেন টাইসন। দুর্দান্ত গতি, অসম্ভব শক্তি ও অবিশ্বাস্য প্রতিক্রিয়া তাকে রিংয়ে এক ভয়ংকর প্রতিপক্ষ করে তোলে।
-
১৯৮৬ সালের ২২ নভেম্বর, মাত্র ২০ বছর বয়সে ট্রেভর বেরবিককে হারিয়ে সবচেয়ে কম বয়সে হেভিওয়েট চ্যাম্পিয়ন হওয়ার রেকর্ড গড়েন তিনি। এরপর একে একে জয় করেন ডব্লিউবিএ, ডব্লিউবিসি ও আইবিএফ-সবগুলো গুরুত্বপূর্ণ হেভিওয়েট শিরোপা। এক বছরেই তিনি হয়ে ওঠেন ‘আনডিসপিউটেড হেভিওয়েট চ্যাম্পিয়ন’।
-
১৯৮৮ সালে মাত্র ৯১ সেকেন্ডে মাইকেল স্পিঙ্কসকে হারিয়ে দেন। তার প্রতিটি লড়াই যেন একটি যুদ্ধ, যেখানে প্রতিপক্ষকে শুধু হারিয়ে দেওয়া নয়, ধ্বংস করে দেওয়াই ছিল লক্ষ্য।
-
মাইক টাইসনের জীবন শুধু রিংয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল না, বরং বাইরের জীবনেও ছিল আলো ও অন্ধকারের মিশেল। ১৯৮৮ সালে অভিনেত্রী রবিন গিভেন্সকে বিয়ে করেন, তবে সেই সম্পর্ক খুব বেশি দিন স্থায়ী হয়নি। এরপর আরও দুইবার বিয়ে করেন মনিকা টার্নার ও বর্তমান স্ত্রী লাকিহা স্পাইসারকে।
-
তার জীবনের সবচেয়ে বড় বিতর্ক আসে ১৯৯২ সালে, যখন তাকে একজন নারীকে ধর্ষণের দায়ে দোষী সাব্যস্ত করে ছয় বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়, যার মধ্যে তিন বছর কাটাতে হয় জেলে। ১৯৯৫ সালে মুক্তি পান।
-
তারপরও বিতর্ক পিছু ছাড়েনি। ১৯৯৭ সালে এভান্ডার হোলিফিল্ডের সঙ্গে লড়াই চলাকালীন তিনি প্রতিপক্ষের কান কামড়ে দেন, যা পুরো বিশ্বকে হতবাক করে দেয়। তার এই আচরণ তার জনপ্রিয়তা ও ক্যারিয়ার দুটোকেই প্রশ্নবিদ্ধ করে তোলে।
-
তারপরও বিতর্ক পিছু ছাড়েনি। ১৯৯৭ সালে এভান্ডার হোলিফিল্ডের সঙ্গে লড়াই চলাকালীন তিনি প্রতিপক্ষের কান কামড়ে দেন, যা পুরো বিশ্বকে হতবাক করে দেয়। তার এই আচরণ তার জনপ্রিয়তা ও ক্যারিয়ার দুটোকেই প্রশ্নবিদ্ধ করে তোলে।
-
২০০৫ সালে মাইক টাইসন আনুষ্ঠানিকভাবে বক্সিং থেকে অবসর নেন। কিন্তু এরপরও তিনি থেমে যাননি। তিনি ব্যবসার পাশাপাশি অভিনয় করেন চলচ্চিত্রে, এমনকি আত্মজীবনীভিত্তিক স্ট্যান্ড-আপ শো ‘মাইক টাইসন: আনডিসপিউটেড ট্রুথ’ চালু করে দর্শকদের মুগ্ধ করেন।