ছবিতে ইমরান খানের অনন্য যাত্রা
জীবনের প্রতিটি অধ্যায়েই কিছু না কিছু যুদ্ধ থাকে। কারও তা মাঠে, কারও তা রাজপথে, কারও আবার নিজের ভেতরে। পাকিস্তানের সাবেক ক্রিকেটার, বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক ও রাজনীতিবিদ ইমরান খান এই তিন যুদ্ধেরই সৈনিক। আজ তার জন্মদিনে, ফিরে দেখা যাক সেই মানুষটিকে-যিনি ব্যর্থতাকেও নিজের শক্তিতে রূপ দিতে জানতেন। ছবি: সোশ্যাল মিডিয়া থেকে
-
১৯৫২ সালের এই দিনে পাকিস্তানের লাহোরে ইমরান আহমেদ খান নিয়াজির জন্ম। পরিবারের অবস্থান ছিল সম্ভ্রান্ত, কিন্তু ছোটবেলা থেকেই তার মন টানত ক্রিকেটের দিকে। অন্য ছেলেরা যখন কেবল খেলায় মেতে থাকত, তখন ইমরান বলের গতি, দিক আর সুইং বোঝার চেষ্টা করতেন।
-
স্কুল-কলেজ পেরিয়ে ইংল্যান্ডের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে গিয়েও ক্রিকেট তাকে ছাড়েনি। বরং ইংল্যান্ডের কঠিন আবহাওয়ার মধ্যে খেলে, ধৈর্য ও নিয়ন্ত্রণ শিখেছিলেন তিনি। সেখানেই জন্ম নেয় ভবিষ্যতের সেই লড়াকু বোলারের মানসিকতা।
-
১৯৭১ সালে পাকিস্তান দলে অভিষেক হয় ইমরানের। শুরুটা সহজ ছিল না। বলের গতি ছিল, কিন্তু ধার ছিল না; প্রতিভা ছিল, কিন্তু আত্মবিশ্বাসের অভাবও কম ছিল না।
-
বছরের পর বছর কঠোর পরিশ্রমে তিনি নিজেকে গড়ে তোলেন এক ভয়ংকর ফাস্ট বোলার হিসেবে। ব্যাট হাতে ছিলেন দায়িত্বশীল, বোলিং হাতে ছিলেন ধ্বংসাত্মক। ১৯৮২ সালে পাকিস্তান দলের অধিনায়ক হওয়ার পর বদলে গেল সবকিছু-দল পেল নতুন নেতৃত্ব, আর ক্রিকেট পেল নতুন দর্শন।
-
ইমরান বিশ্বাস করতেন, ‘একটি দল কেবল তার প্রতিভায় নয়, মনোবলে জেতে।’ সেই দর্শনই তিনি ঢুকিয়ে দিয়েছিলেন প্রতিটি খেলোয়াড়ের মনে।
-
১৯৯২ সালের বিশ্বকাপের কথা ক্রিকেট ইতিহাসে আজও কিংবদন্তি হয়ে আছে। পাকিস্তান দল তখন চরম সমালোচনার মুখে, পরপর কয়েক ম্যাচ হেরে বসে প্রায় বিদায় নিশ্চিত।
-
ঠিক তখনই তিনি পুরো দলকে এক সিংহে পরিণত করেছিলেন, যারা প্রতিপক্ষকে ভয় নয়, চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখেছিল। ফলাফল পাকিস্তানের ইতিহাসে প্রথম ও একমাত্র বিশ্বকাপ জয়।
-
ফাইনালের শেষে ইমরান যখন ট্রফি হাতে তুলেছিলেন, তখন তার চোখে শুধু আনন্দ নয়, ছিল সংগ্রামের ক্লান্তি আর আত্মবিশ্বাসের ঝলক। ক্রিকেট তখন জানল-নেতৃত্ব মানে শুধু কৌশল নয়, মানসিক দৃঢ়তা।
-
ক্রিকেট থেকে অবসর নেওয়ার পরও ইমরান থেমে যাননি। মায়ের ক্যান্সারে মৃত্যুর পর তিনি স্থির করলেন দেশে এমন একটি হাসপাতাল করবেন যেখানে দরিদ্র মানুষও চিকিৎসা পাবে।
-
এভাবেই প্রতিষ্ঠিত হয় শওকত খানুম ক্যান্সার হাসপাতাল-যা এখন পাকিস্তানের গর্ব। হাজারো রোগী আজও সেই প্রতিষ্ঠানে বিনামূল্যে চিকিৎসা পান। খেলোয়াড় ইমরান তখন হয়ে ওঠেন মানবিক নেতা।
-
১৯৯৬ সালে প্রতিষ্ঠা করেন পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) দল। শুরুটা ছিল কঠিন, কারণ তার পাশে তখন কেউ ছিল না। তবুও তিনি বিশ্বাস রেখেছিলেন, একদিন পরিবর্তন আসবেই।
-
২০১৮ সালে তার সেই বিশ্বাস বাস্তবে রূপ নেয়, তিনি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হন। যদিও রাজনীতির মাঠ ছিল ক্রিকেটের চেয়েও কঠিন, তবুও ইমরান তার নীতিতে অটল ছিলেন। দুর্নীতি, বৈষম্য, ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে ছিলেন সরব।
-
বর্তমানে তিনি রাজনীতির কঠিন সময় পার করছেন, কিন্তু তার ভক্তদের চোখে তিনি এখনো সেই অদম্য ইমরান।
-
তাই বিশেষ এই দিনে মনে হয়, ইমরান খান নামটি কেবল একজন খেলোয়াড় বা রাজনীতিক নয়-একটি প্রতীক, যিনি ব্যর্থতার মধ্যেও সাফল্যের আলোকরেখা খুঁজে পেয়েছেন।