শুভ জন্মদিন তানজিম হাসান সাকিব
বাংলাদেশের ক্রিকেটে এক নতুন আশার নাম তানজিম হাসান সাকিব। বয়স মাত্র ২৩, কিন্তু তার নাম এখন দেশের প্রতিটি ক্রিকেটপ্রেমীর মুখে মুখে। গতি, শৃঙ্খলা আর দৃঢ়তার মিশেলে তৈরি এই তরুণ পেসার ইতিমধ্যেই জানিয়ে দিয়েছেন-বাংলাদেশের পেস আক্রমণ এখন আর কেবল অভিজ্ঞদের হাতে নয়, তরুণরাও প্রস্তুত দেশের ভার কাঁধে তুলে নিতে। আজ তার জন্মদিন। তাই এই দিনে ফিরে দেখা যাক তার জীবনের গল্প-যেখানে আছে সংগ্রাম, আত্মবিশ্বাস আর সাফল্যের অনবদ্য এক যাত্রা। ছবি: সাকিবের ফেসবুক থেকে
-
সিলেটের বালাগঞ্জ উপজেলার তিলকচাঁনপুর গ্রামে জন্ম তার। সাধারণ এক মধ্যবিত্ত পরিবার, বাবা গাউচ আলী ও মা সেলিনা বেগমের স্বপ্ন ছিল ছেলে যেন লেখাপড়ায় ভালো করে। কিন্তু সাকিবের মন টানত অন্যদিকে-গ্রামের মাঠে বিকেলের ক্রিকেটই ছিল তার পৃথিবী। পুরোনো টেপ বল হাতে ছেলেবেলায়ই বন্ধুদের চোখে পড়েছিল সেই তীব্র আগ্রহ।
-
স্কুলে পড়ার পাশাপাশি স্থানীয় টুর্নামেন্টে বল হাতে ছড়াতে শুরু করেন তিনি। খুব অল্প বয়সেই বুঝে ফেলেছিলেন, গতি আর নিয়ন্ত্রণ-এই দুইয়ের মিশেলই তাকে আলাদা করতে পারে বাকিদের থেকে।
-
সেই ছোট্ট গ্রামের ছেলেটির স্বপ্ন বাস্তব রূপ পায় যখন তিনি সুযোগ পান অনূর্ধ্ব–১৯ দলে। ২০২০ সালের অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে বাংলাদেশের ঐতিহাসিক জয়ের দলে ছিলেন তিনিও। তরুণ বয়সেই বড় মঞ্চে খেলার অভিজ্ঞতা তাকে আরও আত্মবিশ্বাসী করে তোলে।
-
তারপর শুরু হয় ঘরোয়া ক্রিকেটে নিয়মিত খেলা। বল হাতে ধারাবাহিক পারফরম্যান্সে ধীরে ধীরে জাতীয় দলের নির্বাচকদের নজরে আসেন তিনি। এবং অবশেষে ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে ভারতের বিপক্ষে ওডিআই অভিষেক।
-
প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচেই রোহিত শর্মা ও শুভমন গিলের মতো ব্যাটারদের বিপক্ষে দারুণ নিয়ন্ত্রিত বোলিং করে নিজের উপস্থিতি জানান দেন। সেই ম্যাচের পর ক্রিকেট বিশ্লেষকদের চোখে উঠে আসে এক নতুন সম্ভাবনার নাম তানজিম হাসান সাকিব।
-
তানজিমের খেলার ধরন অন্যরকম। তিনি আক্রমণাত্মক, কিন্তু চিন্তাশীল। রানআপে তার আত্মবিশ্বাস, বোলিংয়ের পরের প্রতিটি চিৎকারে প্রকাশ পায় নিজের প্রতি বিশ্বাস।
-
তার বলের সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হলো সুইং, নতুন বলে ইনসুইং-আউটসুইং দুটোই সমান দক্ষতায় করতে পারেন। ব্যাটারদের সামনে প্রতিটি বলেই রাখেন ছোট ছোট ধাঁধা। পুরোনো বলে কাটার বা স্লোয়ার দিয়েও ভেলকি দেখাতে পারেন। আর ব্যাট হাতে তিনি নিচের ক্রমে হলেও লড়াই চালিয়ে যাওয়ার মানসিকতা রাখেন-যা আধুনিক ক্রিকেটে অত্যন্ত মূল্যবান গুণ।
-
টি২০ ও একদিনের ক্রিকেটে ধারাবাহিকভাবে সুযোগ পাচ্ছেন তিনি। ২০২৪ সালের টি২০ বিশ্বকাপে বাংলাদেশের পেস আক্রমণে ছিলেন অন্যতম ভরসা। তার প্রতিটি স্পেলেই দেখা গেছে আত্মবিশ্বাস ও পরিণত মনোভাব।
-
বিশেষ করে বলের শুরুর দিকে তার বোলিং লাইন ও লেংথ ছিল নিখুঁত, যা অভিজ্ঞ বোলারদের কাছেও প্রশংসনীয়। তাসকিন, শরিফুল, এবাদতদের সঙ্গে তার জুটি এখন বাংলাদেশ দলের পেস ইউনিটকে আরও শক্তিশালী করছে।
-
মাঠের বাইরে সাকিব একদম অন্যরকম শান্ত, বিনয়ী ও ভীষণ পারিবারিক। ব্যস্ত ক্রিকেট সূচির ফাঁকেই তিনি সুযোগ পেলেই ফিরে যান সিলেটে, নিজের গ্রামের বাড়িতে। মা-বাবার সঙ্গে সময় কাটান, স্থানীয় ছেলেদের সঙ্গে ক্রিকেট খেলেন।
-
বাংলাদেশের ক্রিকেটে দীর্ঘদিন ধরে মানসম্পন্ন পেসারের অভাবের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু এখন দৃশ্যপট বদলাচ্ছে। তাসকিন, শরিফুল, এবাদতদের পাশে তানজিমের উপস্থিতি যেন এক নতুন দিগন্তের সূচনা। তার বয়স কম, কিন্তু মানসিক পরিপক্বতা অনেক বেশি। নিজের ভুল থেকে শিখে নেওয়ার প্রবণতা তাকে দীর্ঘমেয়াদে সফল করবে। ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারলে তিনি হতে পারেন বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ পেস বোলিংয়ের নেতা।