কয়লাখনি থেকে ক্রিকেটের মাঠে এক অদম্য যোদ্ধার গল্প
ভারতীয় ক্রিকেটের এক অনন্য গতি তারকা উমেশ যাদবের জন্মদিন আজ। তিন ফরম্যাটেই ভারতের হয়ে বল হাতে লড়াই করা এই পেসার শুধু উইকেট শিকার করেই আলোচনায় আসেননি, তার জীবনসংগ্রামও ক্রিকেটপ্রেমীদের কাছে প্রেরণার গল্প হয়ে আছে। কয়লাখনির শ্রমিকের ছেলে থেকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে জ্বলে ওঠা উমেশ যাদবের এই পথচলা নিঃসন্দেহে এক অনন্য অধ্যায়। ছবি: ফেসবুক থেকে
-
১৯৮৭ সালের ২৫ অক্টোবর মহারাষ্ট্রের নাগপুর জেলায় উমেশের জন্ম। তার বাবা ছিলেন কয়লাখনির শ্রমিক। সীমিত আয়ে চলা পরিবারে ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্নটা একসময় যেন আকাশকুসুম কল্পনাই ছিল। ছোটবেলায় ফুটবল আর ভলিবল খেলতে ভালোবাসতেন তিনি। ক্রিকেটের প্রতি আগ্রহ থাকলেও কখনো ভাবেননি পেশাদার ক্রিকেটার হয়ে উঠবেন।
-
প্রথম জীবনে উমেশ চেষ্টা করেছিলেন ভারতীয় সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়ার। কিন্তু নানা কারণে সফল হতে পারেননি। পরবর্তীতে স্থানীয় এক বন্ধুর প্রেরণায় ক্রিকেটে মনোযোগী হন। তাও আবার পেশাদার ক্রিকেট নয়, প্রথমদিকে শুধু টেনিস বলের খেলাতেই সীমাবদ্ধ ছিলেন তিনি। তবে একসময় কোচ পি. কে. কর্ণের নজরে পড়েন এবং চমকপ্রদ গতির জন্য তাকে বল হাতে সিরিয়াসলি অনুশীলনে আনা হয়।
-
উমেশ যাদবের বিশেষত্ব হলো তার গতি। ঘরোয়া ক্রিকেটেই তিনি দাপট দেখিয়েছেন ১৪৫-১৫০ কিলোমিটার বেগে ধারাবাহিক বল করার ক্ষমতা দিয়ে। ভারতের মতো স্পিন-নির্ভর দেশে এই গতি যেন ছিল বিরল সম্পদ। খুব দ্রুতই তিনি সিলেক্টরদের নজরে আসেন এবং ২০১০ সালে জাতীয় দলে ডাক পান।
-
২০১০ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ওয়ানডে ম্যাচে আন্তর্জাতিক অভিষেক হয় তার। তবে প্রকৃত উমেশকে চিনতে পারে বিশ্ব ২০১১ সালের পর থেকে। ২০১৫ বিশ্বকাপ ছিল তার ক্যারিয়ারের সেরা আসরগুলোর একটি। ১৮ উইকেট নিয়ে তিনি টুর্নামেন্টের অন্যতম সেরা বোলার হিসেবে জায়গা করে নেন।
-
টেস্ট ক্রিকেটে তিনি ভারতীয় দলের আক্রমণে গুরুত্বপূর্ণ ভরসা হয়ে উঠেন, বিশেষ করে ভারতের মাটিতে রিভার্স সুইং করানোর দক্ষতায়। একসময় তাকে বলা হতো ভারতের ‘পাওয়ারপ্লে স্পেশালিস্ট’, কারণ নতুন বল হাতে প্রতিপক্ষকে চাপে ফেলতে তার জুড়ি মেলা ভার ছিল।
-
উমেশের ক্যারিয়ারে সবচেয়ে বড় বাঁধা ছিল চোট। হ্যামস্ট্রিং, গোড়ালি কিংবা পিঠের ইনজুরিতে বারবার মাঠের বাইরে যেতে হয়েছে। তবে প্রতিবারই তিনি লড়াই করে ফিরেছেন। ভারতীয় ক্রিকেটে তার উপস্থিতি হয়তো নিয়মিত ছিল না, কিন্তু যখনই সুযোগ পেয়েছেন, নিজের সর্বোচ্চ দিয়েছেন।
-
আইপিএল উমেশ যাদবকে দিয়েছে আলাদা পরিচিতি। দিল্লি ডেয়ারডেভিলস, কলকাতা নাইট রাইডার্স, রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু, এমনকি সাম্প্রতিক সময়ে কলকাতায় ফিরে গিয়ে দারুণ কিছু পারফরম্যান্স উপহার দিয়েছেন। আইপিএলে তার গতি আর পাওয়ারপ্লেতে আক্রমণাত্মক বোলিং এখনও দর্শকদের মুগ্ধ করে।
-
উমেশ যাদবের জীবনের গল্প শুধু ক্রিকেট নয়, লড়াইয়ের প্রতীকও বটে। কয়লাখনি থেকে উঠে এসে ভারতের হয়ে খেলার স্বপ্ন পূরণ করা তার জীবনের সবচেয়ে বড় অর্জন। তার জীবনী আজ অনেক তরুণকে শেখায়-পরিশ্রম আর দৃঢ় সংকল্প থাকলে কোনো স্বপ্নই অসম্ভব নয়।