খুলনার মাঠ থেকে বিশ্ব ক্রিকেটে মিরাজ
বাংলাদেশ ক্রিকেটের ইতিহাসে যারা ধৈর্য, দৃঢ়তা আর মেধার অনন্য মিশ্রণ ঘটিয়েছেন, তাদের তালিকায় শীর্ষে থাকবে মেহেদী হাসান মিরাজের নাম। ব্যাট হাতে শান্ত, বল হাতে আগ্রাসী-এমন বৈপরীত্যের ভেতর দিয়েই তিনি নিজেকে করে তুলেছেন বাংলাদেশের এক অমূল্য সম্পদ। ছবি: মিরাজের ফেসবুক থেকে
-
১৯৯৭ সালের ২৫ খুলনায় তার জন্ম। ছোটবেলা থেকেই তিনি ছিলেন খেলাধুলায় আগ্রহী। ক্রিকেটের প্রতি ভালোবাসা তাকে নিয়ে আসে মিনি-ক্রিকেট থেকে প্রফেশনাল মাঠে। তার বাবা-মা শুরু থেকেই তাকে উৎসাহিত করেছেন খেলাধুলায় অংশ নিতে, যা পরবর্তীতে মিরাজকে দেশের জন্য গৌরব বয়ে আনার পথ সুগম করে।
-
খুব অল্প বয়সেই তিনি বয়সভিত্তিক ক্রিকেটে নিজের প্রতিভার স্বাক্ষর রাখেন। ২০১৬ সালের অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দলকে নেতৃত্ব দেন তিনি। তার নেতৃত্বে দল সেমিফাইনালে উঠেছিল, যা দেশের যুব ক্রিকেট ইতিহাসে এক উজ্জ্বল অধ্যায় হয়ে আছে। সেই টুর্নামেন্টেই ক্রিকেট দুনিয়া মিরাজ নামের এই স্পিনারের দিকে নজর দেয়।
-
২০১৬ সালের অক্টোবরে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্টে অভিষেক হয় মিরাজের। আর প্রথম টেস্টেই তিনি ঝলসে ওঠেন ১৯ উইকেট শিকার করে, যা তাকে রাতারাতি সুপারস্টারে পরিণত করে। একজন অফ-স্পিনার হিসেবে তিনি যেভাবে ব্যাটসম্যানদের বিভ্রান্ত করেছিলেন, তা বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে এক মাইলফলক।
-
মিরাজ শুধু বোলারই নন, একজন কার্যকর অলরাউন্ডার। টেস্টে কিংবা ওয়ানডেতে প্রয়োজনে ব্যাট হাতে দাঁড়িয়ে গেছেন দলের জন্য। ২০২২ সালে ভারতের বিপক্ষে চট্টগ্রাম ওয়ানডেতে তার অনবদ্য সেঞ্চুরি এখনো ভক্তদের মনে তাজা। তার ব্যাটিংয়ে আছে ধৈর্য ও পরিণত চিন্তাধারা, যা সংকট মুহূর্তে বাংলাদেশকে বাঁচাতে সহায়তা করেছে বহুবার।
-
মিরাজের ব্যক্তিগত জীবনও বেশ শান্ত ও সরল। তিনি পারিবারিক মানুষ হিসেবে পরিচিত। ক্রিকেটের বাইরেও তিনি সামাজিক কর্মকাণ্ডে অংশ নেন এবং তরুণদের উৎসাহ দেন খেলাধুলায় যুক্ত হতে।
-
টেস্ট অভিষেকেই রেকর্ড ভাঙা বোলিং, অনূর্ধ্ব-১৯ দলের সফল অধিনায়কত্ব, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অলরাউন্ডার হিসেবে ধারাবাহিক পারফরম্যান্স, ২০২২ সালে ভারতের বিপক্ষে সেঞ্চুরি করে বাংলাদেশের ক্রিকেটকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়া।
-
মিরাজ আজকের দিনে শুধু একজন ক্রিকেটার নন, বরং এক অনুপ্রেরণা। খুলনার মাটির ছেলে হয়ে তিনি বিশ্ব ক্রিকেটের আঙিনায় নিজের নাম প্রতিষ্ঠা করেছেন।