অলিম্পিক থেকে গ্র্যান্ডস্ল্যাম, এক লড়াকু তারকার নাম লিয়েন্ডার
স্পোর্টসজগতে অনেকেই আসেন, খেলেন, আবার হারিয়ে যান সময়ের গহ্বরে। কিন্তু কেউ কেউ থাকেন ইতিহাস হয়ে; লড়াই, আবেগ আর অদম্য মনোবলের প্রতীক হয়ে। লিয়েন্ডার পেজ ঠিক তেমনই একজন। ভারতের টেনিস ইতিহাসে তিনি শুধু গ্র্যান্ডস্ল্যামজয়ী নন, তিনি একজন যোদ্ধা, যিনি সাত সাতটি অলিম্পিকে দেশের প্রতিনিধিত্ব করে গড়েছেন বিরল নজির। এক হাতে র্যাকেট, অন্য হাতে দেশের পতাকা-এই দুইকে একসূত্রে বেঁধে টানা তিন দশক কোর্টে নিজের জাত চিনিয়েছেন তিনি। জন্মদিনে ফিরে দেখা যাক সেই লড়াকু পথচলা, যার নাম আজও উচ্চারিত হয় গর্ব আর অনুপ্রেরণার সঙ্গে। ছবি: ফেসবুক থেকে
-
১৯৭৩ সালের এই দিনে কলকাতায় তার জন্ম। খেলাধুলার প্রতি ভালোবাসা যেন রক্তেই ছিল। তার বাবা ভেস পেজ ছিলেন ভারতের জাতীয় হকি দলের সদস্য এবং ১৯৭২ সালের মিউনিখ অলিম্পিকে ব্রোঞ্জজয়ী। মা জেনিফার পেজও ছিলেন অ্যাথলেট।
-
ছোটবেলা থেকেই খেলাধুলার পরিবেশে বেড়ে ওঠা লিয়েন্ডার প্রথম থেকেই ছিলেন স্পোর্টস-নির্ভর এক প্রাণ।
-
মাত্র ১২ বছর বয়সে তিনি ভর্তি হন চেন্নাইয়ের ‘ব্রিটানিয়া আমরিত্রাজ টেনিস অ্যাকাডেমি’ তে। সেখানে ভারতের কিংবদন্তি ভিজে আমরিত্রাজ এবং জেফ ট্রাম্বলের অধীনে গড়ে ওঠেন এক তরুণ প্রতিভা।
-
১৯৯০ সালে তিনি জুনিয়র টেনিস সার্কিটে নজর কাড়েন এবং ১৯৯০ সালের উইম্বলডনে জুনিয়র চ্যাম্পিয়ন হয়ে বিশ্বকে জানান নিজের আগমনের কথা।
-
লিয়েন্ডার পেজের কেরিয়ারের সবচেয়ে বড় মাইলফলক আসে ১৯৯৬ সালের আটলান্টা অলিম্পিকে, যেখানে তিনি একক ইভেন্টে ব্রোঞ্জ জিতে নেন। এ ছিল স্বাধীন ভারতের প্রথম একক অলিম্পিক পদক। ভারতীয় ক্রীড়াঙ্গনের ইতিহাসে এটি হয়ে ওঠে এক গৌরবময় অধ্যায়। অলিম্পিক পদকজয়ী হিসেবে তিনি হয়ে যান জননন্দিত নায়ক।
-
ডাবলস এবং মিক্সড ডাবলসে লিয়েন্ডার ছিলেন এক অতুলনীয় প্রতিভা। তার ঝুলিতে রয়েছে ৮টি গ্র্যান্ডস্ল্যাম ডাবলস ও ১০টি গ্র্যান্ডস্ল্যাম মিক্সড ডাবলস খেতাব।
-
মার্টিনা হিঙ্গিস, মহেশ ভূপতি, লুকাস ডলোহি, কারা ব্ল্যাকের মতো কিংবদন্তি পার্টনারদের সঙ্গে জুটি বেঁধে কোর্টে জাদু দেখিয়েছেন বহুবার। বিশেষ করে মহেশ ভূপতির সঙ্গে তার জুটি ছিল অবিস্মরণীয়, যা ভারতীয় টেনিসকে প্রথমবার আন্তর্জাতিক মর্যাদায় পৌঁছে দেয়।
-
লিয়েন্ডার পেজ ৭টি অলিম্পিকে ভারতের প্রতিনিধিত্ব করেছেন ১৯৯২ থেকে ২০১৬ পর্যন্ত। এই ধারাবাহিকতা তাকে বিশ্বের অন্যতম দীর্ঘতম অলিম্পিক ক্যারিয়ারের ক্রীড়াবিদদের কাতারে তুলে ধরে। তিনি যখন খেলেন, তখন তার কোর্টে শুধু খেলা নয়, যেন দেশের পতাকা উঁচিয়ে ধরার এক নীরব যুদ্ধ চলত।