গণভোট নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সমঝোতার সময় ফুরিয়ে যাচ্ছে
জুলাই সনদ বাস্তবায়নে গণভোটের সময় নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলো নিজেরা বসে আলাপ-আলোচনা করে একটা সিদ্ধান্তে আসবে, এমনটাই বলেছিল অন্তর্বর্তী সরকার। শুধু তাই নয় সময়ও বেঁধে দেওয়া হয় ৭ দিন। আগামীকাল সোমবার (১০ নভেম্বর) সেই সময়সীমা শেষ হচ্ছে। এখনও রাজনৈতিক দলগুলোর তরফে এ নিয়ে বসার কোনো আভাস পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে শেষ পর্যন্ত জুলাই সনদ বাস্তবায়নের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত সরকারকেই দিতে হবে।
গত বৃহস্পতিবার (৬ নভেম্বর) বিকেলে রাজধানীর বেইলি রোডের ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে জুলাই সনদ বাস্তবায়নে রাজনৈতিক দলগুলোকে এক সঙ্গে বসার কথা জানান প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। তিনি বলেন, জুলাই সনদ বাস্তবায়নে রাজনৈতিক দলগুলো সিদ্ধান্ত না নিলে অন্তর্বর্তী সরকার সিদ্ধান্ত নেবে। কী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে সে বিষয়ে প্রস্তুতিমূলক অনেক মিটিং হচ্ছে। তবে আমরা আশা করবো পলিটিক্যাল পার্টিগুলো নিজেরা নিজেরাই আলাপ-আলোচনা করে একটা সিদ্ধান্তে আসবে।
রাজনৈতিক দলগুলো সাড়া না দিলে সরকার কী করবে এমন প্রশ্নের জবাবে প্রেস সচিব বলেন, গোটা জাতি এখন নির্বাচনের জন্য অপেক্ষা করছে। নির্বাচনের স্টেজ তৈরি হয়েছে। জাতি যেন খুব দ্রুতই নির্বাচনি প্রচারণায় নামতে পারে সে ব্যাপারে রাজনৈতিক দলগুলো সিদ্ধান্ত নেবে।
আরও পড়ুন:
জুলাই সনদ বাস্তবায়নে রাজনৈতিক দলগুলো সিদ্ধান্ত না নিলে সরকার নেবে
শফিকুল আলম আরও বলেন, আইন উপদেষ্টা রাজনৈতিক দলগুলোকে এক সপ্তাহের মধ্যে নিজেরা বসে সিদ্ধান্ত জানানোর কথা বলেছিলেন। আর তা না হলে সরকার সিদ্ধান্ত নেবে।
এদিকে, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেই গণভোটের দাবি তুলে আসছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীসহ আটটি ইসলামি দল। তবে বিএনপি এর বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে। গণভোট বিষয়ে বিএনপির সঙ্গে আলোচনায় বসতে রাজি আছেন বলে জানিয়েছেন জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এএইচএম হামিদুর রহমান আযাদ। তবে বিএনপি আলোচনায় বসতে রাজি নয় বলে জানিয়েছেন তিনি।

শনিবার (৮ নভেম্বর) দুপুরে রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে এক ডায়ালগে অংশ নিয়ে হামিদুর রহমান আযাদ বলেন, ‘আমরা বিএনপি মহাসচিবের সঙ্গে আলোচনায় বসতে চেয়েছিলাম। তারা বলেছেন আমাদের সঙ্গে আলোচনায় বসবেন না। আমরা যে কোনো সময় আলোচনায় বসতে রাজি। প্রয়োজনে অন্যান্য রাজনৈতিক দলকে আলোচনায় বসতে উদ্বুদ্ধ করবো।’
‘যতই চালাকি করে সময় নষ্ট করা হোক না কেন, আগে গণভোট তারপর জাতীয় নির্বাচন হতে হবে’ এমন মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের। তিনি বলেন, ‘সময়ক্ষেপণ করে লাভ নাই। গণভোট জাতীয় নির্বাচনের আগেই হতে হবে। যতই চালাকি করে সময় নষ্ট করা হোক না কেন, আগে গণভোট তারপর জাতীয় নির্বাচন হতে হবে। নতুবা জনগণ ঐতিহাসিক জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবসের চেতনায় আবার রাজপথে নেমে আসবে।’
শুক্রবার (৭ নভেম্বর) জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ জামায়াত আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে আবদুল্লাহ তাহের এসব কথা বলেন। সংকট সৃষ্টি না করে নভেম্বরের মধ্যে গণভোট সম্পন্ন করে জুলাই সনদের আলোকে ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন আয়োজন করতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
আরও পড়ুন:
জামায়াতের সঙ্গে আলোচনায় বসতে রাজি না বিএনপি: হামিদুর রহমান
নির্বাচন বিলম্বিত করে ক্ষমতার স্বাদ নিতে চায় কিছু দল: হাফিজ
অপরদিকে, গণভোট নিয়ে জামায়াতের সঙ্গে আলাদা করে বসতে নারাজ বিএনপি। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেছেন, প্রধান উপদেষ্টা আহ্বান জানালে আলোচনায় বসতে রাজি আছে বিএনপি। তবে অন্য একটি রাজনৈতিক দলকে দিয়ে কেন তাদের আলোচনার আহ্বান জানানো হচ্ছে?
শনিবার (৮ নভেম্বর) রাজধানীতে ‘ঐতিহাসিক ৭ নভেম্বর জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবসের ৫০ বছর’ উপলক্ষে আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন সালাহউদ্দিন আহমদ।
আরও পড়ুন:
গণভোট সংবিধানে নেই, কথায় কথায় রাস্তায় নামবেন না: আমীর খসরু
বিএনপির আরেক স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘বর্তমান সংবিধানের পরিপ্রেক্ষিতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন হয়েছে, তারা এই সংবিধানের অধীনে শপথ নিয়েছেন। এই সংবিধানে গণভোট নিয়ে কিছু নেই। আগামীতে নির্বাচনে পাস করে সংসদে গিয়ে সংবিধানে গণভোট যুক্ত করে এরপর গণভোটে আসতে পারে।’ এসময় গণভোটের দাবি নিয়ে কথায় কথায় রাস্তায় না নামার জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

শনিবার (৮ নভেম্বর) দুপুরে রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে ‘জনতার ইশতেহার’ শীর্ষক এক ডায়ালগে অংশ নিয়ে তিনি একথা বলেন।
আমীর খসরু বলেন, কথায় কথায় আপনি দাবি নিয়ে রাস্তায় যাবেন, সেটা হবে না। আপনাদের দাবি নিয়ে মাঠে যাবেন, এর বিপরীতে যদি দেশের সর্বোচ্চ রাজনৈতিক দল কর্মসূচি দেয় তাহলে সংঘর্ষ বাঁধবে না?
নির্বাচনি মাঠে প্রভাবশালী দুই দলের নেতাদের বক্তব্যের জেরে স্পষ্ট হচ্ছে যে তারা সরকারের বেধে দেওয়া সময়ে আলোচনায় বসতে রাজি নন। তাদের পাল্টাপাল্টি বক্তব্যে নির্দিষ্ট সময়ে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে।
আরও পড়ুন:
জুলাই সনদ বাস্তবায়ন না হলে তরুণদের অপরাধীকরণ আদালত পর্যন্ত গড়াবে
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন শনিবার (৮ নভেম্বর) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে ‘নারীর কণ্ঠে জুলাই সনদের বাস্তবায়ন রূপরেখা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় সতর্কবার্তা উচ্চারণ করে বলেন, জুলাই সনদ বাস্তবায়িত না হলে গণঅভ্যত্থানে অংশ নেওয়া তরুণদের ক্রিমিনালাইজেশন বা অপরাধীকরণ আদালত পর্যন্ত গড়াবে।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে তরুণদের ভূমিকা তুলে ধরে সামান্তা শারমিন বলেন, ‘আমরা একে বলি জেন-জি রেভ্যুলেশন। কারণ, মাঠে আমরা বুক চেপে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেছি জেন-জিদের, তরুণ জনগোষ্ঠীকে। তাদের রক্তের ওপর দিয়েই এই সরকার (অন্তর্বর্তী) প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। কিন্তু আমরা অবাক হয়ে লক্ষ্য করলাম, এখন এসে সেই তরুণদের এক ধরনের ক্রিমিনালাইজ করা হচ্ছে। ভুলে যাবেন না, আপনারা কেউ ভুল করবেন না, এই ক্রিমিনালাইজেশনের শেষ এখানেই নয়। এটা শুধু বক্তব্যের মাধ্যমে শেষ হবে না। জুলাই সনদ যদি আদেশের মাধ্যমে বাস্তবায়িত না হয়, যদি আইনি প্রক্রিয়ায় তা নিশ্চিত না করা যায়, তাহলে এই ক্রিমিনালাইজেশন কোর্ট পর্যন্ত গড়াবে।’
জুলাই-আগস্টে গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ক্ষমতায় আসা অন্তর্বর্তী সরকার রাষ্ট্রের বিভিন্ন কাঠামোয় সংস্কার আনার উদ্যোগ নেয়। যেসব সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়নে রাজনৈতিক দলগুলো একমত হয়েছে, সেগুলো নিয়ে তৈরি হয় জুলাই জাতীয় সনদ। সেটির বাস্তবায়নে গণভোট করতে চায় অন্তর্বর্তী সরকার।
এসএনআর/এমএমএআর/এএসএম