হলফনামা

আমীর খসরু দম্পতির ২২ কোটি টাকার সম্পদ, নগদ আছে ৩ কোটি

ইকবাল হোসেন
ইকবাল হোসেন ইকবাল হোসেন , নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম
প্রকাশিত: ০৬:১১ পিএম, ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী/ছবি: সংগৃহীত
  • ১৭ বছরে সম্পদ বেড়েছে ১২ গুণ
  • দুই বছরে খালাস পেয়েছেন ৩২ মামলা
  • বেড়েছে স্ত্রীর আয়-সম্পদও

চট্টগ্রাম-১১ (বন্দর-পতেঙ্গা) আসনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী সাবেক মন্ত্রী আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর আয় গত ১৭ বছরে বেড়েছে ১২ গুণ। সম্পদও বেড়েছে তার। পাশাপাশি তিনি পুরোপুরি ঋণমুক্ত হয়েছেন। গত দুই বছরে ৩২ মামলায় খালাস পেয়েছেন তিনি। স্থাবর-অবস্থাবর মিলে খসরু দম্পতির মোট সম্পদ প্রায় ২২ কোটি টাকার।

২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জমা দেওয়া ওই বছরের ২৯ নভেম্বর তারিখের হলফনামা এবং ২৯ ডিসেম্বর (সোমবার) ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হলফনামা বিশ্লেষণ করে এসব তথ্য পাওয়া যায়।

২০২৬ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। নির্বাচন কমিশনের ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী ২৯ ডিসেম্বর মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা।

হলফনামা পর্যালোচনায় দেখা যায়, ২০০৮ সালে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বাড়ি ভাড়া ও পেশাগত পরামর্শক ফি হিসেবে বার্ষিক আয় দেখিয়েছিলেন ১৩ লাখ ৩০ হাজার টাকা। এর মধ্যে বাড়ি ভাড়া হিসেবে পেতেন ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা। ওই সময়ে তার স্ত্রী তাহেরা আলমের কোনো আয় ছিল না।

২০২৫ সালের ২৯ ডিসেম্বর তিনি বার্ষিক আয় দেখিয়েছেন, এক কোটি ৫৯ লাখ ৬৩ হাজার ৪২৪ টাকা। এতে ১৭ বছরে তার বার্ষিক আয় বেড়েছে ১ কোটি ৪৬ লাখ ৩৩ হাজার ৪২৪ টাকা। যা ২০০৮ সালের তুলনায় প্রায় ১২ গুণ বেশি। বর্তমান আয়ের মধ্যে কৃষিখাতে ৪৫ হাজার টাকা, বাড়ি, অ্যাপার্টমেন্ট ও বাণিজ্যিক স্থান ভাড়া হিসেবে ৬ লাখ ৪ হাজার ৬শ টাকা, শেয়ার, বন্ড, ব্যাংক আমানত মিলে ৩৬ লাখ ২৯ হাজার ৮২৪ টাকা, আলফা সিকিউরিটিজের শেয়ার থেকে আয় ৩৬ লাখ ৮৪ হাজার টাকা, সাইনিং মানি হিসেবে আয় হয়েছে ৮০ লাখ টাকা।

আরও পড়ুন
কোটিপতি জামায়াত আমির, আছে ডুপ্লেক্স বাড়ি-নগদ ৬০ লাখ টাকা
হলফনামায় মিথ্যা তথ্য থাকলে খতিয়ে দেখবে দুদক: কমিশনার
ববি হাজ্জাজের নেই জমি-বাড়ি, স্ত্রীর আছে ১২০ ভরি সোনা

পাশাপাশি ব্যবসায়ী স্ত্রীর আগে কোনো আয় না থাকলেও বর্তমানে বার্ষিক বাড়ি ও অ্যাপার্টমেন্ট ভাড়া থেকে সাড়ে ৪ লাখ টাকা, শেয়ার, বন্ড, সঞ্চয়পত্র থেকে ২৬ লাখ ৩১ হাজার টাকা এবং সাইনিং মানি হিসেবে ৭ লাখ ১ হাজার ৮২৭ টাকা আয় হয়েছে।

২০০৮ সালে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর নিজের কোনো নগদ অর্থ ছিল না। ওই সময়ে স্ত্রীর হাতে নগদ ছিল ১৫ হাজার ৩১ টাকা। কিন্তু ২৯ ডিসেম্বরের হলফনামায় আমীর খসরু ও তার স্ত্রীসহ মিলে দুজনের হাতে ৩ কোটি টাকার বেশি হাতে নগদ রয়েছে। এর মধ্যে আমীর খসরুর হাতে ১ কোটি ৮৭ লাখ ৮৫ হাজার ৫৫০ টাকা এবং স্ত্রী তাহেরা আলমের হাতে ১ কোটি ৩২ লাখ ৫০ হাজার ২৮৭ টাকা।

সব মিলিয়ে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর অস্থাবর সম্পদ রয়েছে বর্তমান মূল্যে আনুমানিক ১২ কোটি ১০ লাখ ২০ হাজার টাকার। অন্যদিকে তাহেরা আলমের অস্থাবর সম্পদ রয়েছে ৪ কোটি ২ লাখ ৫০ হাজার টাকার। এর মধ্যে দুজনের নামে দুটি জিপ গাড়ি, শেয়ার, ঋণপত্র, সঞ্চয়পত্র, স্থায়ী আমানত, ক্রিপ্টোকারেন্সির বিনিয়োগ, স্বর্ণালংকার ও আসবাবপত্র রয়েছে।

পাশাপাশি আমীর খসরুর স্থাবর সম্পদ রয়েছে বর্তমান মূল্যে আনুমানিক ২ কোটি ৭০ লাখ টাকার। তাতে চারটি ভবন, অকৃষি জমিসহ নানান সম্পদ রয়েছে। অন্যদিকে স্ত্রী তাহেরা আলমের স্থাবর সম্পদ রয়েছে ২ কোটি ৯০ লাখ টাকার। তার কাছেও দুটি অ্যাপার্টমেন্ট রয়েছে বলে হলফনামায় উল্লেখ করা হয়।

২০০৮ সালে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর স্থাবর-অস্থাবর মিলে ৪ কোটি ৯২ লাখ ৬০ হাজার টাকার এবং স্ত্রীর কাছে ৪ কোটি ৭৩ লাখ ৫৬ হাজার টাকার সম্পদ ছিল।

চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরে আমীর খসরু নিজে ২৪ লাখ ৪০ হাজার ৫৯২ টাকার কর দিয়েছেন। স্ত্রী তাহেরা আলম দিয়েছেন ২ লাখ ১২ হাজার ৬৫ টাকার কর। তবে বর্তমানে তার কোনো ধরনের কর্জ কিংবা ব্যাংক ঋণ না থাকলেও ২০০৮ সালের হলফনামায় দেখা যায়, ওই সময়ে আলফা প্যাকেজেস লিমিটেড থেকে কর্জ ছিল ৮৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা। যৌথ নামে মেহের হাউজিং কোম্পানির নামে ৪ কোটি ১৭ লাখ টাকা আইপিডিসির ঋণ ছিল।

২০০৮ সালে আমীর খসরুর বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগে দায়ের হওয়া দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দুটি মামলা ছিল। মামলাটি দুটি ওই সময়ে উচ্চ আদালতের আদেশে স্থগিত ছিল। কিন্তু বর্তমান হলফনামায় দেখা যায়, দুদকের ওই দুই মামলার মধ্যে একটি এখনো বিচারাধীন। অন্যটি থেকে ২০২৪ সালে হাসিনা সরকারের পতনের পর খালাস পান তিনি। ২০১৩ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত তার বিরুদ্ধে আরও ৩৩টি ফৌজদারি অপরাধের মামলা হয়। বিশেষ ক্ষমতা আইন, বিস্ফোরক আইন, সন্ত্রাসবিরোধী আইন, তথ্যপ্রযুক্তি, দুদক আইনে মামলাগুলো হলেও সবগুলো থেকে তিনি খালাস ও অব্যহতি পান। এর মধ্যে ৩২টি মামলা খালাস, অব্যাহতি ও প্রত্যাহার হয় ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর।

২০০৮ সালের নির্বাচনে বন্দর-পতেঙ্গা এলাকা নিয়ে চট্টগ্রাম-১০ নির্বাচনী এলাকা গঠন করা হয়। আগের নির্বাচনগুলোতে জিতলেও ওই বছরের ৯ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী এম এ লতিফের কাছে ২২ হাজার ৬৪৫ ভোটের ব্যবধানে হেরে যান আমীর খসরু।

এমডিআইএইচ/এএসএ/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।