বাসভাড়া বাড়ানোর সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবিতে একাট্টা বামেরা

ফজলুল হক শাওন
ফজলুল হক শাওন ফজলুল হক শাওন , বিশেষ সংবাদদাতা
প্রকাশিত: ০৫:৩৯ পিএম, ০১ জুন ২০২০

গাড়ি ভাড়া ৬০ শতাংশ বাড়িয়ে দেয়ার প্রতিবাদে একাট্টা হয়েছে বাম দলগুলো। এদের সঙ্গে সরকারের একাধিক শরিক দলও যোগ দিয়েছে। এক লাফে ৬০ শতাংশ ভাড়া বাড়িয়ে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় থেকে যে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে সেটাকে অযৌক্তিক বলছেন দলগুলোর নেতারা। এজন্য তারা আগামীকাল মঙ্গলবার (২ জুন) সারাদেশে বিক্ষোভ সমাবেশেরও ডাক দিয়েছেন। অন্যদিকে ভাড়া বৃদ্ধির প্রতিবাদে হাইকোর্টে রিটও হয়েছে। ৬০ শতাংশ ভাড়া বাড়ানোয় ক্ষুব্ধ সাধারণ মানুষও। তারা বলছেন, এই সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে গণমানুষের স্বার্থের বিপরীতে পরিবহন মালিকদের স্বার্থকে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে।

ভাড়া বাড়ানোর সিদ্ধান্তের প্রতিবাদকারী বাম নেতারা বলছেন, করোনাভাইরাসের কারণে দুই মাসেরও অধিক সময় লকডাউন পরিস্থিতি থাকায় খেটে খাওয়া অনেক মানুষই এখন বিপদে আছেন। এ সময়ে তাদের কোনো আয়-রোজগার ছিল না। শুধু দিন আনি দিন খাই শ্রেণীর তারাই নন, যারা বেসরকারি চাকরি করেন, তারা অনেকেই চাকরি হারিয়েছেন। নতুন করে তাদের চাকরি খুঁজতে হবে। পরিবার-পরিজন নিয়েও তারা খুব অসুবিধার মধ্যে আছেন। সে শ্রেণীটি ত্রাণও পাননি, আবার হাতও পাততে পারেননি। এই শ্রেণীটি খুব কষ্টে দিনাতিপাত করেছেন। এমন অভাব-অনটনে দিশেহারা লোকদের জন্য বৃদ্ধি করা গাড়ি ভাড়া ‘মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা’-এর শামিল।

প্রতিবাদকারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, করোনার এই দুঃসময়ে একসঙ্গে গাড়ির এতো ভাড়া বৃদ্ধি কেউ মেনে নিতে পারছেন না। সেজন্য আন্দোলনে নেমেছেন বাম রাজনৈতিক দলের নেতারা। এ বিষয়ে তারা নানাভাবে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করছেন।

ক্ষমতাসীন ১৪ দলীয় জোটের শরিক জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি ও সাবেক মন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেন, বাস ভাড়া বৃদ্ধির অযৌক্তিক সিদ্ধান্ত মানা যায় না। এটাকে আমরা প্রত্যাহার করতে বলেছি। স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব মেনে বাস চালানো হলে একটি বাসের আসন সংখ্যার অর্ধেক যাত্রী পরিবহন করলে ভাড়া ৫০% ভাগ বৃদ্ধি দাবিও এই সংকটকালে সাধারণ মানুষের প্রতি ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’র শামিল।

তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম অস্বাভাবিকভাবে কমে যাবার ফলে বাস চালনার খরচ অনেক কমিয়ে আনা সম্ভব। তাই বাসের ভাড়া যুক্তিসংগত করার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানাই।

ক্ষমতাসীন জোটের আরেক শরিক বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির ঢাকা মহানগরীর সভাপতি আবুল হোসাইন বলেন, লকডাউন প্রত্যাহারের পর গণপরিবহনের দ্বিগুণ ভাড়া বৃদ্ধি করোনাগ্রস্ত নগরবাসীর ওপর ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’র শামিল। দীর্ঘ ৬৬ দিন লকডাউনে নাগরিকদের জীবন-জীবিকা দুর্বিসহ হয়ে পড়েছে। দীর্ঘ তিন মাস নগরজীবনে আয়-রোজগার না থাকায় মধ্যবিত্ত-নিম্নবিত্তসহ দরিদ্র মানুষের জীবন-জীবিকার যে ব্যাপক ক্ষতিসাধন হয়েছে তা পুষিয়ে নিতে আরও অনেক সময় প্রয়োজন। নগরবাসীর আয়-রোজগার বৃদ্ধির জন্য সরকারকে নানামুখী কর্মসূচি নিতে হবে।

তিনি বাসের দ্বিগুণ ভাড়া বৃদ্ধির পরিবর্তে গণপরিবহনে অবৈধ চাঁদাবাজি কঠোরভাবে বন্ধ করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।

এ সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে আগামীকাল মঙ্গলবার সারাদেশে বাম গণতান্ত্রিক জোটের পক্ষ থেকে মানববন্ধন, সমাবেশ ও বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। বাম জোটের সকল জেলা-উপজেলা শাখা কর্মসূচিটি পালন করবে।

এ বিষয়ে বাম গণতান্ত্রিক জোটের সমন্বয়ক ও বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) নেতা বজলুর রশীদ ফিরোজ বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে সারাদেশের লাখ লাখ মানুষ কর্মহীন ও বেকার হয়ে পড়েছেন। এমতাবস্থায় বাসের বর্ধিত ভাড়া মানা কারও পক্ষেই সম্ভব নয়। আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম এক তৃতীয়াংশে নেমে আসার পরও আমাদের দেশে তেলের দাম কমানো হয়নি। জ্বালানির দাম কমালে ভাড়া বৃদ্ধির প্রয়োজন হবে না। বাসের ভাড়া বৃদ্ধি না করে বিভিন্ন সড়কে সরকারি টোল আদায় বন্ধ, পেট্রোল ও ডিজেলের দাম কমাতে হবে।

বাসদের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান বলেন, সরকারের গণপরিবহনের ভাড়া বৃদ্ধির বিষয়টি মোটেও যুক্তিযুক্ত নয়। করোনা সংকটে জনগণ এমনিতেই বিপর্যস্ত। এ সময়ে ভাড়া বাড়ানো সম্পূর্ণ অন্যায়, অযৌক্তিক ও জনগণের সাথে এক নির্মম তামাশা ছাড়া কিছুই না।

তিনি বলেন, গণপরিবহনের ভাড়া বৃদ্ধি মানা সম্ভব নয়। এটা সরকারকে প্রত্যাহার করতে হবে। বাস মালিকের যদি ক্ষতি হয় তা সরকার ভর্তুকি দিয়ে পূরণ করুক, সরকার কোনো দায়িত্ব না নিয়ে সব জনগণের কাঁধে চাপিয়ে দেবে কেন?

একইসঙ্গে সব কিছু খুলে দিয়ে গণপরিবহন চালুর সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করে জনগণকে বিপদ থেকে রক্ষা করার দাবি জানান খালেকুজ্জামান।

বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, করোনার এই দুর্যোগে এমনিতেই সাধারণ মানুষের পকেটে টাকা নেই। কাজ-কর্ম, ব্যবসা, দোকানপাট- সমস্ত কিছু বন্ধ থাকায় গত ক’মাসে তাদের সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হয়েছে। তার ওপর যদি বাস ভাড়া ৬০ ভাগ বাড়ানো হয় তাহলে এটা তাদের উপর ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’। গণপরিবহনের ভাড়া বৃদ্ধির কোনো যৌক্তিক কারণ নেই। জ্বালানির মূল্য তুলনামূলক এখন অনেক কম। তারপরও যদি কোনো কারণে পরিবহনের শ্রমিক কিংবা মালিকদের চাপে সেটা করতে হয় সেক্ষেত্রে সরকার এখানে ভর্তুকি দেবে। কোনো অবস্থাতেই সাধারণ জনগণের পকেট কেটে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা যাবে না। কোনো দায়িত্বশীল এবং জবাবদিহিমূলক সরকার এটা করতে পারে না।

বাম ঐক্যফ্রন্টের সমন্বয়ক, গণমুক্তি ইউনিয়নের আহ্বায়ক নাসির উদ্দীন আহম্মদ নাসু বলেন, এই সঙ্কটকালে বাসের ভাড়া বৃদ্ধি কেউই মেনে নেবে না। আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম বৃদ্ধিসহ নানা ছুতোয় আগে দফায় দফায় বাসের ভাড়া বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু তেলের দাম কমলেও কখনো বাসের ভাড়া কমানোর কোনো উদাহরণ নেই।

তিনি ভাড়া বৃদ্ধি না করে সড়কে পুলিশের চাঁদাবাজি এবং শ্রমিকদের কল্যাণের নামে বিভিন্ন সমিতির ব্যানারে চাঁদা আদায় বন্ধের দাবি জানান।

রোববার (৩১ মে) সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় প্রজ্ঞাপন জারি করে ভাড়া বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত জানিয়েছে। এতে বলা হয়েছে, বাস বা মিনিবাস চলাচলের ক্ষেত্রে বিদ্যমান ভাড়ার (যাত্রীপ্রতি কিলোমিটার সর্বোচ্চ ১.৪২ টাকা) ৬০ শতাংশ বৃদ্ধি করা হলো। এছাড়া একজন যাত্রীকে বাস বা মিনিবাসের পাশাপাশি দুইটি আসনের একটি আসনে বসিয়ে অপর আসনটি অবশ্যই ফাঁকা রাখতে বলা হয়েছে প্রজ্ঞাপনে।

এফএইচএস/এইচএ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।