দেবর-ভাবির দ্বন্দ্বের ‘বলি’ রাঙ্গা, ফের ভাঙনের মুখে জাপা

সাইফুল হক মিঠু
সাইফুল হক মিঠু সাইফুল হক মিঠু
প্রকাশিত: ০৬:০৬ পিএম, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২২

সেনাপ্রধান থেকে দেশের রাষ্ট্রপতি হন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। রাষ্ট্রপ্রধানের পদে থেকে নিজ হাতে গড়েন জাতীয় পার্টি (জাপা)। আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু ১৯৮৬ সালের ১ জানুয়ারিতে। আশির দশকের শেষ দিকে দেশের প্রধান দুই দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপিকে রীতিমতো টেক্কাও দিয়েছে এ দলটি। তবে ১৯৯০ সালে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে এরশাদের পতনে ভাঙন ধরে জাতীয় পার্টিতে। কেউ যান বিএনপিতে, কারও ঠাঁই হয় আওয়ামী লীগে। একপর্যায়ে জাপা ভেঙে হয় চার ভাগ। তবে রাজনীতির মাঠে বরাবরই দাপট দেখিয়েছে এরশাদের নেতৃত্বাধীন মূল জাপাই।

১৯৯১, ৯৬ ও ২০০১ সালের জাতীয় নির্বাচনে সংসদীয় আসনে জয়ের দিক থেকে তৃতীয় অবস্থানে ছিল জাপা। ২০০৮ সালে দলটি আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে জোট সরকার গঠন করে। আর ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনের পর জাতীয় সংসদে বিরোধী দলের ভূমিকায় জাপা। ২০১৯ সালে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ মারা যান। দলের হাল ধরেন তার ভাই গোলাম মোহাম্মদ (জিএম) কাদের। পার্টির প্রধান পৃষ্ঠপোষক হন রওশন এরশাদ। জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় নেতাও হন এরশাদপত্নী।

jagonews24

এক মঞ্চে এরশাদ, রওশন ও জিএম কাদের/ফাইল ছবি

এমন পরিস্থিতিতে দলের বর্তমান চেয়ারম্যান জিএম কাদেরসহ শীর্ষ নেতারা গত দুই বছর ধরে বলে আসছেন, প্রতিষ্ঠার পর বর্তমানে সবচেয়ে সুসংগঠিত অবস্থায় দল চালাচ্ছে জাতীয় পার্টি। আগামীতে কারও সঙ্গে জোট নয়, তারা ৩০০ আসনে প্রার্থী দিতে চান। ঠিক এমন পরিস্থিতিতে আবারও ভাঙনের মুখে জাপা। এবার ভাঙনের শুরু রওশন এরশাদকে জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় নেতার পদ থেকে সরিয়ে জিএম কাদেরকে বসানোর চেষ্টা থেকে।

আরও পড়ুন: নির্বাচন ঘিরে ঘনিষ্ঠ হচ্ছে বিএনপি-জাতীয় পার্টি

এ ইস্যুতে প্রকাশ্যে মন্তব্য করায় গত ১৪ সেপ্টেম্বর মসিউর রহমান রাঙ্গাকে পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্যসহ সব পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। দলের চেয়ারম্যান জিএম কাদের গঠনতন্ত্রের ক্ষমতাবলে তাকে অব্যাহতি দেন। সেই আদেশ এরই মধ্যে কার্যকরও হয়েছে। অথচ রাঙ্গা বর্তমানে জাতীয় সংসদে বিরোধী দলীয় চিফ হুইপ। তিনি দলটির সাবেক মহাসচিব ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি

ফলে রাঙ্গার অব্যাহতি ঘিরে চলছে দুই পক্ষের কথা চালাচালি। বৃহস্পতিবার (১৫ সেপ্টেম্বর) পাল্টাপাল্টি সংবাদ সম্মেলন করেছেন পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু ও অব্যাহতি পাওয়া রাঙ্গা। জাতীয় পার্টির দুর্গ হিসেবে পরিচিত রংপুরেও এ নিয়ে সরগরম রাজনীতির মাঠ। সবমিলিয়ে জাতীয় পার্টিতে সংকট আরও ঘনীভূত।

jagonews24

রাঙ্গাকে অব্যাহতির পর রংপুরে জিএম কাদেরের কুশপুতুল দাহ/ফাইল ছবি

দলের মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুর অভিযোগ, সংগঠনবিরোধী কার্যক্রমের কারণে রাঙ্গাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। কিছুদিন ধরে তিনি জাতীয় সংসদসহ বিভিন্ন ফোরামে দলের স্বার্থবিরোধী কথাবার্তা বলেছেন। এমন প্রেক্ষাপটে দু-তিন মাস আগেও রাঙ্গা দল থেকে অব্যাহতির কথা চিন্তা করেছিলেন পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের। তবে সেসময় ক্ষমা চেয়ে পার পেয়ে যান রাঙ্গা।

মসিউর রহমান রাঙ্গা বলছেন, রওশন এরশাদকে সরিয়ে জিএম কাদেরকে জাতীয় সংসদে বিরোধী দলীয় নেতা করতে যে চিঠি দেওয়া হয়েছে, তার প্রক্রিয়া সঠিক ছিল না। তিনি একটি বেসরকারি টেলিভিশনে এমন বক্তব্য দেওয়ায় তাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। তার সঙ্গে অন্যায় করা হয়েছে

আরও পড়ুন: রাঙ্গাকে অব্যাহতির কারণ জানালেন জাপা মহাসচিব

জাতীয় পার্টির একাধিক সূত্রে জানা গেছে, বিরোধী দলীয় নেতার পদ থেকে রওশন এরশাদকে সরানোর ইস্যুতে মসিউর রহমান রাঙ্গা যে প্রতিক্রিয়া গণমাধ্যমে দিয়েছেন, তা মোটেও পছন্দ হয়নি জিএম কাদেরের। শ্রমিক নেতা ও সরকারের আস্থাভাজন হয়ে রাঙ্গা বিভিন্ন সুবিধা ভোগ করেন। এজন্য পার্টির অনেক শীর্ষ নেতাও তার ওপর ক্ষুব্ধ। সেসব নেতারা পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের কানভারী করে রাঙ্গাকে অব্যাহতি দিতে প্ররোচিত করে থাকতে পারেন।

jagonews24

অব্যাহতির প্রতিক্রিয়া জানাতে রাঙ্গার সংবাদ সম্মেলন/ফাইল ছবি

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মশিউর রহমান রাঙ্গা জাগো নিউজকে বলেন, ‘এমনটা হতে পারে তেমন কিছুই টের পাইনি। ওনার (জিএম কাদেরের) বয়স হয়ে গেছে। হয়তো ওনি মনে করছেন, যেকোনো সময় তিনি সিক (অসুস্থ) হয়ে যেতে পারেন। ওই কারণে মনে করতে পারেন, চেয়ারম্যানটা রাঙ্গাই হয়ে যাচ্ছেন। ব্যক্তিগতভাবে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আমার সম্পর্ক অনেক ভালো তো। এটা ওনি ভয় পান। পার্লামেন্টে ওনি (জিএম কাদের) আমাকে দেখেন, আমি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলছি। তখন ওনি ভয় পান। মনে করেন, আমি মনে হয় চেয়ারম্যান পদ নিয়ে নিচ্ছি। এটাই প্রধান কারণ। অন্য কিছু দেখি না।’

রাঙ্গার এমন বক্তব্যের সত্যতা ফুটে উঠেছে জিএম কাদেরের দেওয়া বিভিন্ন বক্তব্যেও। তিনি সরকারের সঙ্গে সুসম্পর্ক আছে- এমন নেতাদের একাধিকবার হুঁশিয়ার করেছেন। এমনকি সরকারের দালালি করলে দলত্যাগ করতে হবে বলেও দলের একাধিক ফোরামে স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন। সরকারের সঙ্গে মসিউর রহমান রাঙ্গার ঘনিষ্ঠতায় জিএম কাদের যে ক্ষুব্ধ হয়েছেন, তাতে দলের অনেকেই একমত।

আরও পড়ুন: ৩০০ আসনে প্রার্থী দেবে জাতীয় পার্টি: চুন্নু

এ বিষয়ে ইঙ্গিত দিয়েছেন জাপা মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুও। সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘জাপা চেয়ারম্যান দলের রাজনীতির বিষয়টি পরিষ্কার করেছেন। জিএম কাদের ও আমি বলেছি, জাতীয় পার্টি কারও দালাল না। দালালি করবেও না। কারও পকেটের লোক না। জাতীয় পার্টির নিজস্ব অস্তিত্ব আছে, ঐতিহ্য আছে।’

jagonews24

রাঙ্গার অব্যাহতি নিয়ে জাপা মহাসচিবের সংবাদ সম্মেলন/ফাইল ছবি

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জাতীয় পার্টির নতুন টানাপোড়েন শুরু গত ৩০ আগস্ট থেকে। থাইল্যান্ডের হাসপাতালে থেকে পার্টির প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদ হঠাৎ করেই জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় সম্মেলন আহ্বান করে বিজ্ঞপ্তি পাঠান। রওশন নিজেকে সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক করে ছয় সদস্যের কমিটিও ঘোষণা করেন। এ সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির সদস্যসচিব পদে নিয়োগ দেওয়া হয় রওশন এরশাদের রাজনৈতিক সচিব গোলাম মসীহকে।

পরদিনই জাতীয় পার্টির সংসদীয় দলের সভা ডেকে রওশন এরশাদকে বিরোধীদলীয় নেতার পদ থেকে সরিয়ে জাপার চেয়ারম্যানকে স্থলাভিষিক্ত করার সিদ্ধান্ত হয়। ওই সভায় মসিউর রহমান রাঙ্গাও অংশ নেন। সভার কার্যবিবরণীতেও তিনি সই করেন। তার নেতৃত্বেই সংসদীয় দলের সিদ্ধান্ত স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর কাছে পৌঁছানো হয়। কিন্তু দলীয় সিদ্ধান্ত এখনো কার্যকর হয়নি।

আরও পড়ুন: আমাকে অন্যায়ভাবে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে: রাঙ্গা

জাপার সংসদীয় দলের বৈঠকে রওশন এরশাদকে সরানোর বিষয়ে মসিউর রহমান রাঙ্গা বলেন, ‘ওইটা বেআইনি করেছে। তারা এটা আমার হাত দিয়ে করিয়েছে। আমি তখনো বলেছি বেআইনি হচ্ছে। তারা পরে এসে বলছেন, চিঠিতে তিনটি সই দেওয়া আছে, সেগুলো সব রাঙ্গার সই। মিটিং ডাকছে রাঙ্গা, প্রিজাইড করছে রাঙ্গা, সই করছে রাঙ্গা। আমি বললাম, তাহলে এজেন্ডা কে দিলো?’

jagonews24

হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ও রওশন এরশাদ/ফাইল ছবি

তিনি আরও বলেন, ‘এজেন্ডাটা চাইলাম, তারা সেটা দিলেন না। রেজ্যুলেশন লিখলেন তাদের লোক, আমাকে বললেন সই করতে বলেছেন স্যার (জিএ কাদের), এখানে সই করেন। করে দিছি, স্পিকারের কাছে নিয়ে যেতে বললেন মুজিবুল হক চুন্নু, নিয়েও গেলাম। স্পিকারও বললেন, আর কয়েকটা মাস ছিল। এ কয়েকটা মাসের জন্য তাকে (রওশন এরশাদ) অপমান করবেন আপনারা? আমি বললাম, তাদের অপমান করার শখ হয়েছে তো তাই করলেন। স্পিকার বললেন, দেখি আমি আপার (প্রধানমন্ত্রী) সঙ্গে কথা বলে সিদ্ধান্ত জানাবো।’

রাঙ্গা কি জাপায় ফিরবেন?
মসিউর রহমান রাঙ্গার অব্যাহতির ঘটনায় গত বুধবার (১৪ সেপ্টেম্বর) রাতে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে জাতীয় পার্টির দুর্গ হিসেবে পরিচিত রংপুর। জিএম কাদের ও রাঙ্গার সমর্থকরা পাল্টাপাল্টি কুশপুতুল দাহ করেন। ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। এতে উভয়পক্ষের ২০ জন নেতাকর্মী আহত হয়েছেন।

রংপুরে বড় প্রতিক্রিয়া ও জাপায় ফেরা প্রসঙ্গে রাঙ্গা বলেন, ‘আমি তো কিছুই বলিনি। ওরা নিজেরা নিজেরা উত্তেজিত হয়ে কিছু করলে করতেই পারে। আইনিভাবে এটা লড়ার কথা বলেছিলাম। তবে মনে হয় না অতদূর যাওয়ার প্রয়োজন পড়বে। তার আগেই হয়তো সিদ্ধান্ত হয়ে যাবে। থু থু ফেলতে চাই না। যে থু থু গায়ে পড়ে, তা ওপরে ফেলে লাভ কী?’

এসব বিষয়ে জানতে জাপা চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি। তবে সার্বিক বিষয়ে কথা বলেছেন দলের মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু।

আরও পড়ুন: রওশনকে বিরোধী দলীয় নেতার পদ থেকে বাদ দিতে স্পিকারকে চিঠি

চুন্নু জাগো নিউজ নিউজকে বলেন, ‘যদি পার্টির চেয়ারম্যান চান, তবেই মসিউর রহমান রাঙ্গা দলের রাজনীতিতে ফিরতে পারবেন। কাউকে জাতীয় পার্টিতে ফেরানোর এখতিয়ার শুধুমাত্র চেয়ারম্যানের। কেউ দল থেকে চলে যেতে পারেন, তাতে দলের কোনো ক্ষতি হয় না। অনেকেই চলে গেছেন। কিন্তু জাতীয় পার্টি তার অবস্থানেই আছে।’

রওশন এরশাদের সম্মেলন কতদূরে?
২০১৯ সালে জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের মৃত্যুর পর প্রকাশ্যে আসে দেবর-ভাবির দ্বন্দ্ব। বিরোধী দলীয় নেতা হিসেবে দলের একাংশের নেতৃত্ব দেন রওশন এরশাদ। তবে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ তার ভাই জিএম কাদেরকে দলের নেতৃত্ব দিয়ে যান। পরে জিএম কাদের তার ভাবি রওশন এরশাদকে দলের প্রধান পৃষ্ঠপোষক করেন। এতে কিছুটা স্থিতিশীলতা ফেরে জাতীয় পার্টিতে।

jagonews24

চিকিৎসার জন্য দ্বিতীয় দফায় থাইল্যান্ডে যান রওশন এরশাদ/ফাইল ছবি

গত প্রায় ১০ মাস গুরুতর অসুস্থ রওশন এরশাদ। তিনি থাইল্যান্ডে চিকিৎসাধীন। মাঝে একদফা দেশে ফিরলেও আবারও গেছেন চিকিৎসা নিতে। তবে অসুস্থতার মধ্যে জিএম কাদের ও তার অনুসারীরা রওশনের কোনো খোঁজ-খবর নেননি বলে অভিযোগ রয়েছে। এতে ক্ষুব্ধ তিনি। গত জুলাইয়ে কয়েকদিনের জন্য দেশে এসে দলের একটি মতবিনিময় সভায় ক্ষোভ ঝাড়েন রওশন এরশাদ।

তবে হঠাৎ করেই গত ৩০ আগস্ট দলের সম্মেলন করার ঘোষণা দেন তিনি। তাতে আগামী ২৬ নভেম্বর ডাকেন দলের কাউন্সিল। যদিও জিএম কাদেরের দাবি কাউন্সিল ডাকার এখতিয়ার রওশন এরশাদের নেই।

রওশনের ঘনিষ্ঠ নেতারা জানিয়েছেন, আগামী ২৬ নভেম্বর ডাকা সম্মেলনের প্রস্তুতি চলছে। এ মাসের শেষ সপ্তাহে রওশন এরশাদ দেশে ফিরবেন। তিনি আসার পর সম্মেলনের মূল প্রস্তুতি শুরু হবে।

আরও পড়ুন: জিএম কাদেরকে বাদ দিয়ে কাউন্সিলের ডাক রওশনের

তবে দলের শীর্ষ নেতারা এখনই এ নিয়ে মুখ খুলতে রাজি নন। তারা বলছেন, আগেও দেবর-ভাবির দ্বন্দ্ব হয়েছে। পরে তা মিটেও গেছে। এবারও যে তেমন হবে না, সেই সম্ভাবনা উড়িয়ে দিতে নারাজ তারা। এ রহস্যের খোলাসা হতে পারে রওশন এরশাদ দেশে ফেরার পর

রওশন এরশাদের ডাকা সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির প্রধান গোলাম মসীহ জাগো নিউজ বলেন, প্রস্তুতি পুরোদমে চলছে। জেলা কমিটির লোকজন আসছে। থানা লেভেলের নেতাকর্মীরাও আসছেন। রওশন এরশাদের সঙ্গে দিনে একাধিকবার কথা হচ্ছে। ওনি সবকিছু মনিটরিং করছেন।

এদিকে, রওশন এরশাদের ডাকা সম্মেলনের প্রস্তুতি সমন্বয়ের জন্য দলের ছয়জন কো-চেয়ারম্যানকে যুগ্ম-আহ্বায়ক করা হয়। তারা হলেন- দলের মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু, ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, রুহুল আমিন হাওলাদার, কাজী ফিরোজ রশীদ, আবু হোসেন বাবলা ও সালমা ইসলাম।

যুগ্ম-আহ্বায়কের দায়িত্বে থাক এসব নেতাসহ অন্যরাও প্রস্তুতির কাজে সাড়া দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন গোলাম মসীহ। তিনি বলেন, আমরা গুলশান ও তোপখানায় দুটি অফিসে নিয়মিত বসছি।

জাতীয় পার্টিতে যত ভাঙন
১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ তৎকালীন সেনাপ্রধান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ বিচারপতি আব্দুস সাত্তারকে হটিয়ে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করেন। ১৯৮৬ সালের শুরুতে বিভিন্ন দলের রাজনীতিবিদদের নিয়ে ‘জাতীয় পার্টি’ নামে দল গঠন করেন তিনি। ১৯৮৬ সালে সংসদ নির্বাচন করে জাতীয় পার্টি। তবে সেই সংসদ টিকেছিল মাত্র একবছর।

১৯৮৮ সালে মূল ধারার দলগুলোর বয়কটের মুখে একতরফা নির্বাচন করেন এরশাদ। দুই বছর পর আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও বামপন্থী দলগুলোর গণআন্দোলনের মুখে ১৯৯০ সালে এরশাদ শাসনের পতন হয়। ক্ষমতা হারানোর পরে জাপায় কয়েক দফা ভাঙন দেখা দেয়।

আরও পড়ুন: রাঙ্গাকে জাপা থেকে অব্যাহতি

১৯৯৯ সালে অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় পার্টি ও ইসলামী ঐক্য জোট মিলিত হয়ে চারদলীয় ঐক্যজোট গঠন করে। কিছুদিন পরই জাতীয় পার্টির মূল অংশ এরশাদের নেতৃত্বে জোট থেকে বের হয়ে যায়। কিন্তু নাজিউর রহমান মঞ্জুর সমর্থক অংশটি ‘বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি’ নামে দল গঠন করে চারদলীয় জোটে থেকে যায়। এছাড়া জাতীয় পার্টি থেকে বেরিয়ে পৃথক দল করেন আনোয়ার হোসেন মঞ্জু। তার দলটি জেপি নামে পরিচিত। সর্বশেষ ২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগে নতুন জাতীয় পার্টির ঘোষণা দেন দলটির নেতা কাজী জাফর আহমেদ।

এসএম/এএএইচ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।