প্রচারণায় ব্যস্ত শরীয়তপুরের ইউপি নির্বাচনের প্রার্থীরা
তফসিল ঘোষণার পর শরীয়তপুর সদর উপজেলার ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী সম্ভাব্য চেয়ারম্যান ও মেম্বার প্রার্থীরা তাদের প্রচার প্রচারণা শুরু করেছে। ফলে সদর উপজেলার বিভিন্ন বাজার ও প্রতিষ্ঠান প্রার্থীদের পোস্টার ও ব্যানারে ছেঁয়ে গেছে। পৌরসভা নির্বাচনের মতো ইউপি নির্বাচন দলীয় প্রতীকে হবে এমন সিদ্ধান্তের পর থেকেই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সম্ভাব্য চেয়ারম্যান প্রার্থীরা মনোনয়ন লাভের আশায় প্রচার প্রচারণা শুরু করেছেন।
চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের ৪৩ জন, বিএনপির ১১ জন ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের ১২ জন এবং একটি ইউনিয়নে ১ জন স্বতন্ত্র প্রার্থীর নাম শোনা গেলেও বাকী দলের সম্ভাব্য প্রার্থীর নাম আলোচনার মধ্যে নেই।
এদিকে সদর উপজেলার ১১টি ইউনিয়নের বিভিন্ন ওয়ার্ডের সম্ভাব্য চেয়ারম্যান ও মেম্বার প্রার্থীরা কর্মী সমর্থকদের নিয়ে মতবিনিময় সভা করছেন। ভোটার ও সম্ভাব্য প্রার্থীদের নিয়ে শুরু করেছেন নানা হিসাব-নিকাশ। সব মিলিয়ে হাটবাজার থেকে শুরু করে হোটেল, অফিসসহ চায়ের দোকান সর্বত্রই শুরু হয়েছে নির্বাচনী আলোচনা। ইতোমধ্যে কেন্দ্রীয় নেতা থেকে শুরু করে স্থানীয় সংসদ সদস্য ও জেলার সভাপতি ও উপজেলার সভাপতিদের কাজ থেকে দলীয় মনোনয়ন লাভের আশায় সংযোগ রক্ষা করে চলেছেন সম্ভাব্য প্রার্থীরা। নির্বাচনে দলীয় প্রতীক হওয়ায় সকল প্রার্থীই দলীয় মনোনয়ন নিয়ে নির্বাচন করতে আগ্রহী। আর সেই চিন্তা ভাবনা মাথায় রেখেই প্রার্থীরা নির্বাচনে অংশ নেয়ার চেষ্টা চালাচ্ছেন।
বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীরা মাঠে কম থাকার কারণ হিসেবে দলের একাধিক নেতা বলেন, সদর উপজেলার বিএনপির সভাপতি সিরাজুল হক মোল্যা দীর্ঘ দিন যাবৎ বিভিন্ন মামলায় জড়িয়ে রয়েছেন। তাই রাজনৈতিক হয়রানির ভয়ে মাঠে না থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে দলীয় প্রচার প্রচারণা চালাচ্ছেন। তাই ইউনিয়ন বিএনপি প্রার্থীরা নিজ নিজ এলাকায় ঘরোয়া পরিবেশে প্রচার প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন।
অন্যদিকে জেলা বিএনপির সভাপতি শফিকুর রহমান কিরন সরকারি সম্পদ নষ্ট করার মামলায় পলাতক রয়েছে এবং তিনি বিভিন্ন রাজনৈতিক ঝামেলায় মাঠে না থাকার কারণে জেলা বিএনপির সহ- সভাপতি আলহাজ সাঈদ আহম্মেদ আসলাম উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে কাজ করে চলেছেন। আবার অনেকেই জেলে আছেন এবং কেউ কেউ কাঁধে মামলা নিয়ে গ্রেফতারের ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। সব মিলিয়ে বিএনপির অনেক নেতা মামলার ভয়ে দলীয় কার্যক্রম থেকে বিরত রয়েছেন।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীরা বলেছেন, শরীয়তপুর সদর উপজেলায় আওয়ামী লীগের দুটি গ্রুপ থাকায় আওয়ামী লীগের সমর্থকরা বিভিন্ন দ্বিধাদ্বন্দ্বে রয়েছেন। তাই ২৭ ফেব্রুয়ারি সম্মেলনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ আবারো সক্রিয় হয়ে উঠবে এবং একটি গ্রুপে পরিণত হবে।
এদিকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের শরীয়তপুরে দলীয় নেতাদের কাজ থেকে জানা যায়, আগামী ইউপি নির্বাচনকে সামনে রেখে তারাও প্রস্তুতি নিচ্ছেন। প্রতিটি ইউনিয়নে তারা নির্বাচন করবেন এবং ১ সপ্তাহের মধ্যে কেন্দ্রীয়ভাবে প্রার্থী বাছাই করে দলীয়ভাবে মনোনয়ন দিবেন। আওয়ামী লীগ ও বিএনপির লড়াই এর মধ্য দিয়ে তারা জয়যুক্ত হবেন বলে আশা করছেন।
শরীয়তপুর সদর উপজেলার ১১টি ইউনিয়নে যারা চেয়ারম্যান পদে মনোনয়ন পেতে প্রত্যাশী এবং নির্বাচনে অংশ নেয়ার সম্ভাবনা রয়েছে তারা হলেন-
পালং ইউনিয়ন :
পালং ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের সমর্থক হিসেবে মো. সুলতান মুন্সী, হাফেজ পেদা, আজাহার খাঁ, আবুল দেওয়ান ও ফজলু ছৈয়াল মনোনয়নপত্র জমা দিবেন। বিএনপির একক প্রার্থী হওয়ায় বর্তমান চেয়ারম্যান আতাউর রহমান গগণ খাঁ মনোনয়নপত্র জমা দিবেন। আর ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের পক্ষে ইয়াদ আলী শেখ মনোনয়নপত্র জমা দিবেন।
তুলাসার ইউনিয়ন :
তুলাসার ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের সমর্থক হিসেবে জাহিদ ফকির, জামাল ফকির, আনোয়ার সরদার, জসিম মাদবর ও আমীন উদ্দিন ফকির মনোনয়নপত্র জমা দিবেন। বিএনপির বর্তমান চেয়ারম্যান মাহবুব মোর্শেদ টিপু মাদবর ও মোফাজ্জল ফকির মনোনয়নপত্র জমা দিবেন। আর ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের পক্ষে হাফেজ কেরামত আলী মনোনয়নপত্র জমা দিবেন।
আংগারিয়া ইউনিয়ন :
আংগারিয়া ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের সমর্থক হিসেবে আনোয়ার হাওলাদার, মোস্তফা মোল্যা ও আনোয়ার কামাল মনোনয়নপত্র জমা দিবেন বলে শোনা যাচ্ছে। পাশাপাশি বিএনপির সমর্থক হিসেবে বর্তমান চেয়ারম্যান রব হাওলাদার, ইলোরা হাওলাদার ও আক্তার হোসেন মাঝির নাম শোনা যাচ্ছে। আর ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মাওলানা আনোয়ার হোসেন এবং ক্বারী আব্দুল রাজ্জাক, স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে কাজী জয়নাল আবেদীন মনোনয়নপত্র জমা দিবেন।
চিতলিয়া ইউনিয়ন :
চিতলিয়া ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের সমর্থক হিসেবে বর্তমান চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম হাওলাদার ও নিজাম হাওলাদার এর নাম শোনা যাচ্ছে। পাশাপাশি বিএনপির একক প্রার্থী হিসেবে সিরাজুল হক মোল্যা মনোনয়নপত্র জমা দিবেন। আর ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের পক্ষে রয়েছেন হাফেজ আব্দুল গণি।
বিনোদপুর ইউনিয়ন :
বিনোদপুর ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের বর্তমান চেয়ারম্যান আব্দুল হামিদ সাকিদার এবং মো. দেলোয়ার হোসেন মাদবরের নাম শোনা যাচ্ছে। বিএনপির সামছুল হক সরদার। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের নুরুল আমিন মুন্সী।
মাহমুদপুর ইউনিয়ন :
মাহমুদপুর ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের বর্তমান চেয়ারম্যান শাহ আলম মুন্সী, শাহজাহান ঢালী, বাদশা খান ও আবুল হোসেন তালুকদার মনোনয়নপত্র জমা দিবেন বলে গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে। বিএনপির একক প্রার্থী হিসেবে মো. আলী আহম্মদ খাঁন মনোনয়নপত্র জমা দিবেন। আর ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের পক্ষে রয়েছেন আব্দুল জব্বার ফকির।
চন্দ্রপুর ইউনিয়ন :
চন্দ্রপুর ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের বর্তমান চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর সিকদার, আবুল হালিম মোল্যা এবং মো. ওমর ফারুক মনোনয়নপত্র জমা দিবেন। কিন্তু বিএনপির পক্ষে কোন প্রার্থী নেই। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের পক্ষে রয়েছেন জসিম উদ্দিন ফকির।
চিকন্দি ইউনিয়ন :
চিকন্দি ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের বর্তমান চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আব্দুল মান্নান তালুকদার, অ্যাডভোকেট মঞ্জুর আলম খান, মো. বাচ্চু সরদার, এনামুল হক মুন্সী ও আবুল হাকিম মনোনয়নপত্র জমা দিবেন বলে গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে। পাশাপাশি বিএনপির পক্ষে মাস্টার জালাল উদ্দিন তালুকদার মনোনয়নপত্র জমা দিবেন। এখানে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের কোন প্রার্থী নেই।
শৌলপাড়া ইউনিয়ন :
শৌলপাড়া ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের বর্তমান চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম, আলমগীর খান, আবুল হোসেন খান, লিটন খান ও ইয়াসিন হাওলাদার মনোনয়নপত্র জমা দিবেন। এখানে বিএনপির কোন প্রার্থী নেই। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের পক্ষে শরীফ উদ্দিন বেপারী রয়েছেন।
ডোমসার ইউনিয়ন :
ডোমসার ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের বর্তমান চেয়ারম্যান মাস্টার মজিবুর রহমান, চাঁন মিয়া মাদবর, মিজান মোহাম্মদ খাঁন ও মোস্তফা মাদবর মনোনয়নপত্র জমা দিবেন। এখানে বিএনপির কোন প্রার্থী নেই। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের পক্ষে সিরাজ মোল্লা মনোনয়নপত্র জমা দিবেন।
রুদ্রকর ইউনিয়ন :
রুদ্রকর ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের বর্তমান চেয়ারম্যান মো. হাবিবুর রহমান ঢালী, সাবেক চেয়ারম্যান আ. রাজ্জাক মোল্যা, মোক্তার চৌকিদার ও সিরাজুল ইসলাম ঢালী মনোনয়নপত্র জমা দিবেন। বিএনপির পক্ষে সাবেক চেয়ারম্যান জহির উদ্দিন তালুকদার মনোনয়নপত্র জমা দিবেন। আর ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মাওলানা জাহাঙ্গীর আলম ও ওয়াসিম তালুকদার মনোনয়নপত্র জমা দিবেন।
উল্লেখ্য, প্রথম দফায় আগামী ২২ মার্চ থেকে ৭৫২ ইউনিয়ন পরিষদের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এসব ইউনিয়ন পরিষদে নির্বাচনের জন্য মনোনয়ন দাখিলের শেষ সময় নির্ধারণ করা হয়েছে ২২ ফেব্রুয়ারি। মনোনয়নপত্র যাচাই বাছাই শেষ হবে ২৩ ও ২৪ ফেব্রুয়ারি। মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ সময় ২ মার্চ। প্রতীক বরাদ্দ দেয়া হবে ৩ মার্চ। এছাড়াও প্রার্থীদের আপিল দাখিলের জন্য তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে ২৫ থেকে ২৭ ফেব্রুয়ারি। আপিল নিষ্পত্তির তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে ২৮ ফেব্রুয়ারি। এরপরই অর্থাৎ দ্বিতীয় ধাপে শরীয়তপুরের ইউপি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
ছগির হোসেন/এসএস/আরআইপি