আতঙ্কে দিন-যাপন : হামলা ঠেকাতে রাত জেগে বাড়ি পাহারা


প্রকাশিত: ০৫:৩৬ এএম, ০২ মার্চ ২০১৬

নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে চারটি হিন্দু পরিবারকে পৈতৃক ভিটেমাটি থেকে উচ্ছেদের অভিযোগ উঠেছে। সন্ত্রাসী হামলা ও বর্তমানে জামিনে থাকা আসামিদের হুমকির কারণে পরিবারগুলো চরম আতঙ্কের মধ্যে দিন অতিবাহিত করছেন। ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার জীরতলি ইউনিয়নের রামনগর গ্রামে।

সরজেমিনে বেগমগঞ্জ উপজেলার জরিতলী ইউনিয়নের রামনগর গ্রামের ধোপা বাড়ি গিয়ে দেখা যায়, গোটা ধোপা বাড়িতে বসবসারত পুরুষ থেকে শুরু করে নারী ও শিশুদের মধ্যে আতঙ্কের ছাপ। আশপাশে সব মুসলিম বাড়ি। মাঝখানে তাদের বসবাস। প্রতিবেশি অনেকে মুসলিম পরিবার তাদের পাশে থাকলেও একটি পরিবারের কারণে তারা ভয়ে রাত জেগে বাড়ি পাহারা দেয়।

কথা হয় বাড়ির মৃত গিরেন্দ্র কুমার দাসের ছেলে ব্রজলাল দাসের সঙ্গে। তিনি কান্নাজড়িত কণ্ঠে জানান, বাপ-দাদার ভিটে মাটিতে তারা যুগ যুগ ধরে পরিবার পরিজন নিয়ে বসবাস করে আসছে। বাপ দাদার রেখে যাওয়া জমি চাষাবাদ ও এলাকার মানুষের জামা-কাপড় ধুয়ে তা থেকে আয় রোজগার করে তাদের সংসার কোন রকমভাবে চলছে। এরই মধ্যে তাদের বাপ-দাদার রেখে যাওয়া সম্পত্তির উপর লোলুপ দৃষ্টি পড়ে প্রতিবেশি ইসমাইল হোসেনের। তিনি বিভিন্ন সময় ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে ব্রজলাল ও তার তিন ভাইয়ের সম্পত্তি দাবি করে দখলের চেষ্টা করে এবং হিন্দু পরিবারের সদস্যগুলোকে উচ্ছেদের চেষ্টা চালায়।

তিনি আরও জানান, সর্বশেষ ১২ ফেব্রুয়ারি সকালে ব্রজলাল তার বসতভিটার গাছ কেটে ঘর করতে গেলে ইসমাইল হোসেন ও তার তিন ছেলে বহিরাগত সন্ত্রাসী এনে তাদের উপর আক্রমণ চালায়। এ সময় সন্ত্রাসীরা বিভিন্ন অস্ত্র শস্ত্র নিয়ে বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করে নারীসহ বেশ কয়েকজনকে  বেদম মারধর করে এবং ঘরের মূল্যবান জিনিসপত্র ভাঙচুর ও লুটপাট করে। যাওয়ার সময় ঘর সংলগ্ন পূজার ঘরে আগুন ধরিয়ে দেয়। পরে স্থানীয়রা আহতদের উদ্ধার করে বেগমগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে।

Noakhali

এ ঘটনায় তিনি বাদী হয়ে বেগমগঞ্জ মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। পুলিশ তাৎক্ষণিক তদন্ত করে মামলার তিন আসামিকে আটক করলে পরবর্তীতে তিনজনই জামিনে বের হয়ে আসেন। জামিনে আসার পর তারা মামলা তুলে নেয়ার জন্য তাকে ও পরিবারের অন্যান্যদের হুমকিসহ বিভিন্ন ভয়ভীতি প্রদর্শন করছে।

মৃত হরলাল দাসের স্ত্রী কানন রানী ও কাঞ্চী লাল দাসের স্ত্রী অনিমা রানী দাস জানান, ইসমাইল হোসেন ও তার বখাটে সন্তানদের নানা ধরনের হুমকিতে তারা চরম আতঙ্কে রয়েছে। সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে তাদের যেমন উচ্ছেদের হুমকি দেয়া হচ্ছে পাশাপাশি কলেজ ও স্কুল পড়ুয়া ছেলে মেয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন। কখন তারা আবার ঝাঁপিয়ে পড়ে তাদের ওপর।

স্থানীয় এলাকাবাসী আবুল খায়ের ও মামুন জানান, ইসমাইল হোসেন একজন প্রতারক। যার পেশা হলো মামলা এবং মানুষের জায়গা-জমি দখল করা। ১৯৭১ সালে ইসমাইল হোসেনের পিতার বিতর্কিত ভূমিকা থাকায় দেশ স্বাধীন হওয়ার পর তাকে পার্শ্ববর্তী সোনাইমুড়ী উপজেলা থেকে বিতাড়িত করে ওই এলাকার মানুষ। বর্তমানে রামনগর গ্রামে এসে তিনি হিন্দু পরিবারের সম্পত্তি দখল করার চেষ্টা করছে।

এদিকে হিন্দু সম্প্রদায়ের পরিবারের ওপর হামলার ঘটনাটি জানার জন্য ইসমাইল হোসেনের বাড়িতে গেলে তাকে না পাওয়া গেলে তার স্ত্রী জানান, বাড়ির বেশির ভাগ সম্পত্তি ব্রজলালের পূর্ব পুরুষদের কাছ থেকে ক্রয় করেছেন। আর ক্রয়কৃত জমিতে ব্রজলাল তার পুরাতন ঘর ভেঙে নতুন করে ঘর তুলতে গেলে তারা বাধা দেয়।  

এ বিষয়ে বেগমগঞ্জ মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. গোলাম ফারুক জাগো নিউজকে জানান, জমি নিয়ে বিরোধের জের ধরে সন্ত্রাসী হামলা, ভাঙচুর ও আগুন দেয়ার ঘটনায় ব্রজলাল বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করে। পুলিশ তাৎক্ষণিক অভিযান চালিয়ে তিন আসামিকে আটক করে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠায়। আাসামিরা যদি জামিনে থাকার পর বাদীকে ভীতি প্রদর্শন করে আর এ সংক্রান্ত তার কাছে অভিযোগ আসে তাহলে তিনি দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণসহ হিন্দু সম্প্রদায়ের পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।

মিজানুর রহমান/এসএস/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।