স্বাস্থ্যখাতের ব্যবসায়ীরা আঙুল ফুলে বটগাছ: জিএম কাদের

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৯:১৯ পিএম, ২৩ মার্চ ২০২৩

স্বাস্থ্যখাতকে দুর্নীতির বড় আখড়া হিসেবে মন্তব্য করেছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও বিরোধীদলীয় উপনেতা গোলাম মোহাম্মদ (জি এম) কাদের।

তিনি বলেন, দুর্নীতির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন চিকিৎসকরা। স্বাস্থ্যখাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট আমলা ও ব্যবসায়ীরা লাখ-কোটি টাকা লুটপাট করে বিদেশে পাচার করছেন। করোনা মোকাবিলায় সাফল্যের চেয়ে দুর্নীতি হয়েছে বেশি। স্বাস্থ্যখাতে জড়িত ব্যবসায়ীরা আঙুল ফুলে কলাগাছ নয়, বটগাছ হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (২৩ মার্চ) বিকেলে বনানীতে জি এম কাদেরের কার্যালয়ে আয়োজিত অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি। চিকিৎসা বিজ্ঞানী ডা. জাহিদুল বারীর নেতৃত্বে শতাধিক চিকিৎসক জাপায় যোগ দেন। এসময় জাতীয় চিকিৎসক পরিষদ নামে একটি সংগঠনের আত্মপ্রকাশ ঘটে।

অনুষ্ঠানে জি এম কাদের বলেন, ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল দুর্নীতির তথ্য প্রকাশ করেছে। কোভিড মোকাবিলায় আমরা নাকি পুরস্কার পেয়েছি। বিদেশ থেকে পুরস্কার কীভাবে আসে আমরা তা জানি। দেশের মানুষ কি আপনাদের পুরস্কার দিয়েছে? বিদেশি পুরস্কারের কথা বলে দেশের মানুষকে আর বোকা বানানো যাবে না। দুঃখজনক হলো, কোভিডের কথা বলেও কিছু মানুষ হাজার-হাজার কোটি টাকা পাচার করেছে। সব খাত থেকেই লুটপাটের টাকা বিদেশে পাচার করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, স্বাস্থ্যখাতে জড়িত ব্যবসায়ীরা আঙুল ফুলে কলাগাছ নয়, বটগাছ হয়েছে। দুর্নীতিরোধে কোনো ব্যবস্থা নেই। হাসপাতালে নির্ধারিত কোটা অনুযায়ী চিকিৎসক নেই। এসব কথা সংসদে বললে ওই হাসপাতালে চিকিৎসকের সংখ্যা আরও কমে যায়। বাথরুমের সামনেও রোগী থাকে, এ যেন নারকীয় পরিবেশ।

জাপা চেয়ারম্যান বলেন, চিকিৎসা খাতে হ-য-ব-র-ল চলছে। দেশের মানুষ কখনোই চিকিৎসা সেবা নিয়ে সন্তুষ্ট হতে পারেনি। দেশের বেশিরভাগ মানুষের চিকিৎসার জন্য একমাত্র ভরসা সরকারি হাসপাতাল। হাসপাতালে ডাক্তার নেই, সেবা নেই, যন্ত্রপাতি নেই। চিকিৎসকদের নিরাপত্তা নেই। সংখ্যা কম থাকায় চিকিৎসকদের ওপর বাড়াবাড়ি রকমের দাবি থাকে সাধারণ মানুষের। যেটা অনেক সময় চিকিৎসকরা ম্যানেজ করতে পারে না। এ কারণেই অনেক সময় সংঘাত সৃষ্টি হয়। প্রয়োজনীয় ডাক্তার, নার্স এবং যন্ত্রপাতি থাকে না হাসপাতালে। যন্ত্রপাতি যা দেওয়া হচ্ছে তা চলছে না।

তিনি বলেন, বড় বড় অবকাঠামো বা বিল্ডিং বানানো হচ্ছে। মুষ্টিমেয় কিছু মানুষের ব্যক্তিগত স্বার্থ রক্ষায় উন্নয়ন করা হচ্ছে। সব উন্নয়নের পেছনে কিছু মানুষের ব্যক্তিগত স্বার্থ আছে। জনগণের স্বার্থের কথা বিবেচনা করে কোনো উন্নয়ন করা হচ্ছে না। ডাক্তার দেওয়া হলে তাদের সাহায্য করার লোক নেই। যারা দায়িত্বে আছেন তাদের একটাই লক্ষ্য, কী করে ব্যক্তিগতভাবে লাভবান হওয়া যায়। যার কারণে বেশিরভাগ মানুষ চিকিৎসা সহায়তা পাচ্ছে না। চিকিৎসা খাতে কোনো সাফল্য নেই।

জাতীয় পার্টিতে যোগ দিতে আসা চিকিৎসকদের বিভিন্নভাবে বাধা দেওয়া হয়েছে জানিয়ে জি এম কাদের বলেন, সংবিধান রাজনীতির অধিকার দিয়েছে। স্বাধীনভাবে মতামত প্রকাশের অধিকার হচ্ছে সাংবিধানিক অধিকার। এই সংবিধান অর্জনের জন্য জীবন দিয়ে মানুষ দেশ স্বাধীন করেছে। ক্ষমতায় থাকার জন্য সংবিধান ব্যবহার করা হচ্ছে। ক্ষমতায় থেকে অবৈধভাবে টাকা উপার্জন করে সেই টাকা বিদেশে পাচার করাই এখন কালচার হয়ে গেছে। আমরা এমন বাস্তবতা থেকে দেশকে উদ্ধার করতে চাই।

অনুষ্ঠানে জাতীয় পার্টি মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের চেয়ে প্রতিটি উপজেলায় বিশেষায়িত হাসপাতাল জরুরি। তিনি বলেন, বর্তমানে সরকার সংবিধানের প্রতি খুবই শ্রদ্ধাশীল। সংবিধানের বাইরে নির্বাচন তারা চায় না। একইভাবে বিএনপিও এক সময় সংবিধানের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিরোধিতা করেছিল। এখন বিএনপি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জন্য আন্দোলন করছে। আসলে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা কোনো সমাধান নয়।

জাপা চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা ও জাতীয় পার্টি রিচার্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট উইংয়ের আহ্বায়ক মনিরুল ইসলাম মিলন অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন।

এসএম/কেএসআর/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।