র‌্যাব হেফাজতে জেসমিনের মৃত্যুর দায় সরকারকে নিতে হবে: ফখরুল

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৯:১৪ পিএম, ৩১ মার্চ ২০২৩
বক্তব্য রাখেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর/ছবি: সংগৃহীত

নওগাঁয় র‌্যাব হেফাজতে সুলতানা জেসমিনের মৃত্যুর দায় সরকারকেই নিতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, ‘একজন মন্ত্রী বলেছেন, এখানে (জেসমিনকে আটকের ক্ষেত্রে) ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টের অপপ্রয়োগ করা হয়েছে। এ অপপ্রয়োগের ফলে নিরপরাধ অসহায় একজন নারীর (সুলতানা জেসমিন) জীবন পর্যন্ত চলে গেলো। এর দায় কে নেবে? এ দায় সম্পূর্ণ সরকারকে নিতে হবে।’

শুক্রবার (৩১ মার্চ) রাজধানীর পল্লবী ও রূপনগর থানা বিএনপি আয়োজিত ইফতার মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। মিরপুর ২নং ওয়ার্ড কমিউনিটি সেন্টারে এ মাহফিলের আয়োজন করা হয়। এতে লন্ডন থেকে অনলাইনে যুক্ত হন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আজকে সরকারের দমন-পীড়ন থেকে কেউ বাদ যাচ্ছে না। শুধু বিএনপির লোকেরা নই, সাধারণ মানুষও বাদ যাচ্ছে না। নওগাঁর একজন নারী সুলতানা জেসমিন, তিনি সরকারি কর্মচারী। কী কারণে তাকে র‌্যাব তুলে নিয়ে গেলো? এখন পর্যন্ত তা জানা যায়নি। তাকে তুলে নিয়ে যাওয়ার ৩৬ ঘণ্টার মধ্যে নির্যাতনে মৃত্যু হলো..তাকে মেরে ফেলা হলো। এখন তারা বলছেন যে, এটা ভুল হয়েছে..।’

আরও পড়ুন>> নিষেধাজ্ঞার পরও ব্যবস্থা না নেওয়ায় প্রশ্রয় পেয়েছে র‌্যাব: ফখরুল

বিএনপির মহাসচিব বলেন, ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টের আওতায় আপনারা দেখেছেন প্রথম আলোর একজন সাংবাদিক শামসুজ্জামান শামসকে গভীর রাতে তুলে নিয়ে গেলো। তারপরে ৩৬ ঘণ্টা তার কোনো খবর নেই। পরে তাকে আদালতে সোপর্দ করেছে, সেটা নতুন করে মামলা করে। শুধু তাই নয়, আজকে প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে মামলা দিয়েছে। এটাই শেষ নয়, এ সরকার আসার পর থেকে আরও তিনজন খ্যাতনামা সম্পাদককে এমন অবস্থার মুখে ফেলেছে। তারা তো দেশ থেকে চলে যেতেই বাধ্য হয়েছেন। তারা হলেন- দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমান, দৈনিক সংগ্রামের সম্পাদক আবুল আসাদ ও যায়যায়দিনের শফিক রেহমান।’

তিনি বলেন, আজকে ভোট দেওয়ার স্বাধীনতা, কথা বলার স্বাধীনতা, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা, কোনো কিছুই অবশিষ্ট নেই। প্রতি মুহূর্তে আমাদের সেই চ্যালেঞ্জ সামনে নিয়ে এগোতে হচ্ছে। সেখানে যদি আমরা শৃঙ্খলা না মানি, যদি বিশৃঙ্খল হয়ে যাই, তাহলে সেই যুদ্ধে আমরা কি জয়লাভ করতে পারবো? আমরা কি পরিবর্তন আনতে পারবো? আমরা কি চাই না শেখ হাসিনা সরকার চলে যাক? রমজানের এ পবিত্র দিনে আমাদের সবাইকে শপথ নিতে হবে যে, আমরা শৃঙ্খলাবদ্ধ হয়ে আমাদের নেতা তারেক রহমান যে নির্দেশ দেবেন, সেই নির্দেশে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সবাই মিলে সংগ্রাম করতে হবে।

আরও পড়ুন>> অহেতুক আলাপ করে কী হবে, ইসির সংলাপের বিষয়ে ফখরুল

সরকার নতুন করে নির্বাচন নিয়ে পাঁয়তারা শুরু করেছে অভিযোগ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ২০২৩ সালের শেষে বা ২০২৪ সালের প্রথম দিকে তারা নির্বাচন করতে চান। সেই নির্বাচন আবার আগের মতো করবেন, ২০১৪-তে যেমন করেছেন, ২০১৮-তে যেমন করেছে। বিরোধী দল থাকবে না। শুধু তারাই থাকবেন। আর পুলিশ থাকবে পাহারায়। যেমন খুশি তেমন সিল মেরে ভোটের আগের রাতেই ফলাফল নিয়ে যাবেন। সেটা এবার এ দেশের মানুষ হতে দেবে না। আমাদের একমাত্র পথ হচ্ছে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন করে সব মানুষকে একত্রিত করে দুর্বার গণআন্দোলন গড়ে তোলা। আমাদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে আন্দোলন, আন্দোলন, আন্দোলন করতে হবে। আন্দোলনের কোনো বিকল্প নেই।

আরও পড়ুন>> শামসুজ্জামানের মুক্তি-ডিজিটাল আইন বাতিলের দাবি ফখরুলের

বিএনপি নেতা জহিরুল হকের সভাপতিত্বে ইফতারে আগে আলোচনা সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক আমানউল্লাহ আমান, সদস্যসচিব আমিনুল হক, যুবদলের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম মিল্টন, স্বেচ্ছাসেবক দলের সহ-সভাপতি ইয়াছিন আলি প্রমুখ।

বিএনপির ইফতারে হট্টগোল-সাংবাদিক হেনস্তা
বিএনপির এ ইফতার মাহফিলে শুরু থেকেই বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান লন্ডন থেকে অনলাইনে যুক্ত হয়ে বক্তব্য দেওয়া শুরু করলে নেতাকর্মীদের মধ্যে হট্টগোল বাধে।

ইফতার মাহফিলে সাংবাদিকদের বসার জায়গাও রাখা হয়নি। পেশাগত দায়িত্ব পালনের কোনো পরিবেশও ছিল না। এতে ক্ষিপ্ত কয়েকজন সাংবাদিক ইফতার মাহফিল থেকে বেরিয়ে যান। পরে তাদেরকে বিএনপি নেতারা অনুরোধ করে ফিরিয়ে আনেন।

আরও পড়ুন>> প্রথম আলো সম্পাদকের মামলা প্রত্যাহারের দাবি ফখরুলের

অন্যদিকে নেতাকর্মীদের হট্টগোলের মধ্যে পড়ে সাংবাদকিরাও আহত হয়েছেন। এনটিভির বিশেষ প্রতিনিধি ইমরুল আহসান জনির পাঞ্জাবিও ছিঁড়ে ফেলেন বিএনপি নেতাকর্মীরা। আহত হন চ্যানেল আই’র আকতার হাবিব। আঘাত পান কয়েকজন ক্যামেরাম্যানও।

এছাড়া ইফতার মাহফিলে অংশ নিতে মিলনায়তনে প্রবেশের সময় হেনস্তার শিকার হন নিউজ২৪ টেলিভিশনের সিনিয়র রিপোর্টার মারুফা রহমান।

পরে বিএনপি মহাসচিব মঞ্চ থেকে নেমে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করেন। এরপর বক্তব্যের শুরুতেই মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন।

ফখরুল বলেন, ‘আমি নিজে দেখেছি, কারা কারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে। এরা কারা? এখানে আওয়ামী লীগের দালালরা ঢুকেছে, এখানে সরকারের দালালরা এসেছেন। আমি আবারও আমার সাংবাদিক ভাইদের কাছে দলের পক্ষ থেকে ক্ষমা চাচ্ছি।’

কেএইচ/এএএইচ/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।