একজন নারীর স্বাবলম্বী হওয়ার গল্প


প্রকাশিত: ০৩:৩০ পিএম, ০৮ মার্চ ২০১৬

নারী তুমি এগিয়ে চলো। কাজই আমার স্বপ্ন, কাজই আমার প্রেরণা, কাজই আমার চলার পথের সাথী, এই এগিয়ে চলার পথে যত জনকে সঙ্গে নিতে পারবো ততোই আমার আনন্দ। কথাগুলো এক বাক্যে হাসি মুখে বলেন, ফরিদপুর শহরের ঝিলটুলী এলাকার মেয়ে ফারজানা মোরশেদ মিতা। নিজ উদ্যোগে গড়ে তুলেছেন সেবা বুটিক। বর্তমানে সেবা বুটিক শপের সদস্য সংখ্যা ১৫১ জন।

২০০০ সালে নিজ বাড়িতে ছোট পরিসরে সেবা বুটিক শপ নামে তৈরি পোশাকের দোকান দিয়েছিলেন মিতা। মাত্র ৫ হাজার টাকা ও একটি সেলাই মেশিন নিয়ে পথচলা শুরু। মিতা তখন বুটিক শপে একাই কাজ করতেন। সেই ছোট বুটিক শপ এখন আর ছোট নেই। এখন সেই শপে ৩১ জন নারী-পুরুষ কাজ করেন। সঙ্গে আছেন আরও ১২০ জন নারী। এরা সকলেই গৃহবধূ। সেবা বুটিক শপ থেকে অডার নিয়ে বাড়িতে বসে কাজ করেন তারা।

Faridpur

ছোটবেলা থেকেই মিতার স্বপ্ন ছিল কিছু একটা করার। আর সেই স্বপ্ন থেকেই শুরু করেন সেলাই এর কাজ। আর সে কারণেই বিভিন্ন ধরনের হাতের কাজ শিখে ফেলেন অল্প সময়ের মধ্যে। বিভিন্ন মার্কেট, মেলা, বই দেখে, বিভিন্ন লোকের কাছে গিয়ে তাদের কাজ দেখে কাপড় কাটা, ডিজাইন করা, সেলাই করা, বাটিক, ব্লক, রং এর কাজ ও কারচুপির কাজ শিখে নেন।

আলাপকালে মিতা জানালেন, সদস্যদের সঙ্গে নিয়ে থ্রি-পিস, কাজ করা বিভিন্ন ধরনের শাড়ি, বিছানার চাদর, পাঞ্জাবি, ফতুয়া, বাচ্চাদের পোশাক, নবজাতক শিশুদের পোশাক, পর্দা, পাটের বিভিন্ন জিনিস তৈরি করে থাকি।

পাইকারি দরে কাপড় কিনে এনে সদস্যদের সঙ্গে নিয়ে কাজ করি। একটা পোশাক বিক্রি করে ১০০-২০০ টাকা লাভ হয়। বিশেষ বিশেষ সময় লাভের পরিমান একটু বেশি হয়।

এরই মধ্যে এম.এ পাস করেছেন মিতা। এতদিনের আয়ের টাকা দিয়ে শহরের ঝিলটুলীতে মায়ের বাড়ির পাশে এক খণ্ড জমি ক্রয় করেছেন। বর্তমানে তার দোকান ঐ জমির উপর। ঝর্ণা, পাপিয়া, সুলতানা, আখি আরো অনেকে সূচ-সুতার কাজ, পাথর চুমকি, ব্লক, বাটিকের কাজ করতে পেরে নিজেদেরকে আত্মনির্ভরশীল নারী হিসেবে সমাজে প্রতিষ্ঠা করতে পেয়েছেন।

Faridpur

তাদের দক্ষ ও নিপুন হাতের কাজ করা কাপড় ঢাকা-সিলেট ও ফরিদপুরের বিভিন্ন মার্কেটের দোকানে ঠাঁই পেয়েছে। এখানের তৈরি শাড়ী ও লেহেঙ্গার মধ্যবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের বিয়েতে যথেষ্ঠ কদর রয়েছে। এছাড়াও সেবা বুটিক সপের তৈরি পোষাক সৌদি আরব ও আমেরিকাতেও যাচ্ছে। প্রতিবছর মিতা যুবউন্নয়ন ও মহিলা অধিদপ্তর থেকে বছরে ১৫-৩৫ হাজার টাকা অনুদান পেয়ে থাকেন।

স্বামী, সন্তান আর সংসার সামলানোর পরে বাকি সময় সেবা বুটিক সপ নিয়ে পড়ে থাকি। স্বামী মোবারক খান এর উৎসাহে এতদুর পর্যন্ত এসেছে বলেও জানান তিনি।

জেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা খন্দকার দৌলতানা আক্তার বলেন, মিতাকে আমরা সব সময় সব ধরনের সহযোগিতা দিয়ে থাকি। তার কাজের মান খুবই ভাল। সে একজন স্বাবলম্বী নারী হিসাবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে।

এফএ/এমএএস/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।