সরকার-জনগণ মুখোমুখি: ফখরুল

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০২:০৩ পিএম, ২১ মে ২০২৩

সরকার দেশের জনগণকে তাদের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে রেখেছে মন্তব্য করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আমরা ক্রান্তিকালে এসে দাঁড়িয়েছি। এখন সিদ্ধান্ত হবে বাংলাদেশ কি গণতান্ত্রিক হবে নাকি পরনির্ভরশীল ও ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্র হবে? একদিকে একটি শাসকগোষ্ঠী ও অন্যদিকে জনগণ। দেশের মানুষের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আছে সরকার। তারা অন্যায়ভাব র্যাব, পুলিশ ও দলীয় গুন্ডা দিয়ে জনগণের আন্দোলন দমাতে চায়।

রোববার (২১ মে) দুপুরে রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক অনুষ্ঠানে তিনি প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।

আওয়ামী লীগকে ওয়াদা ভঙ্গকারী দল আখ্যা দিয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, নিজেদের অধিকার নিজেদের আদায় করতে হবে, বাইরে থেকে কেউ এসে দাবি পূরণ করে দেবে না। বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার দেশের অর্থনীতি খুবলে খুবলে খাচ্ছে। হাসিনার অধীন কোনো নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না। অবশ্যই সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিরোধ করতে হবে। না হলে কারও অস্তিত্ব থাকবে না।

তিনি বলেন, অথচ ১৯৯৬ সালে যখন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হয়েছিল তখন আজকের আওয়ামী লীগ অনেক প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সেসব তো পূরণ করেইনি বরং সেখান থেকে দূরে সরে গেছে। তারা দুটি ভুয়া নির্বাচন করেছে। ২০১৪ সালের নির্বাচনে কোনো ভোটার ভোট দিতে যায়নি। ২০১৮ সালেও নিশিরাতে ভোট করেছে। আজ এই সরকার নির্বাচন ধ্বংস করে দিয়েছে। এখন সিটি করপোরেশন নির্বাচন হচ্ছে সেখানেও তারা কী করছে। এমতাবস্থায় আমাদের সিলেটের সাবেক নির্বাচিত মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী ভোট না করার ঘোষণা দিয়েছেন।

আরও পড়ুন: নির্বাচন না করার ঘোষণা দিলেন মেয়র আরিফ

তিনি বলেন, বর্তমান হাসিনা সরকার থাকলে কোনো সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না। কারণ তারা নির্বাচনী প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করে দিয়েছে। এতগুলো মিডিয়া আছে কিন্তু স্বাধীনভাবে লিখতে ও বলতে পারে না। অসংখ্য সাংবাদিক দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন। দিনকাল বন্ধ করেছে। সাগর-রুনি দম্পতির চার্জশিট দিতে পারেনি। কেউ কথা বলতে পারে না চাকরির ভয়ে।

মির্জা ফখরুল বলেন, আমাদের অবশ্যই ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিবাদ করতে হবে। না হলে কোনো কিছুই থাকবে না। এই হলো আওয়ামী লীগ। যারা বাকশাল করেছিল। আজ রাশেদ খান মেনন বলেছেন- পরিকল্পিত নির্বাচন চাই না। শিল্প প্রতিমন্ত্রী বলেছেন- মন্ত্রীরাই সিন্ডিকেট করছে। আজ দেশে ঋণখেলাপি বাড়ছে।

তিনি আরও বলেন, আসলে এই সরকারের অপকর্ম বলে শেষ করা যাবে না। আর একমুহূর্ত ক্ষমতায় থাকলে দেশের অবস্থা আরও খারাপ হবে। আমাদের হাইকোর্ট জামিন দিলে নিম্ন আদালতে তা বাতিল করে কারাগারে পাঠানো হয়। বিচার বিভাগকে নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে। জাতির ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব যেন তৈরি না হয় সেজন্য পরিকল্পিতভাবে শিক্ষাব্যবস্থা পুরোপুরি ধ্বংস করে দিয়েছে। ব্যাঙের ছাতার মতো বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছে। অর্থাৎ জাতিকে পরনির্ভরশীল বানানের জন্য এটা করেছে।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, কোনো ভালো মানুষ আওয়ামী লীগে থাকতে পারেনি। মওলানা ভাসানীকে তারা বের করে দিয়েছে। আ স ম আব্দুর রব, শাহজাহান সিরাজ, ওবায়দুর রহমান, শাহ মোয়াজ্জেম, শফিউল আলম প্রধান, মাহমুদুর রহমান মান্না সবাই বেরিয়ে গেছেন। কারণ ওই সময় তারা দুর্নীতিপরায়ণ আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছেন। এখনকার আওয়ামী লীগ আরও বেশি খারাপ। তাদের বডিকেমিস্ট্রি হলো কাউকে সহ্য করতে পারে না। দুর্নীতি-চুরি তাদের বৈশিষ্ট্য। যে কারণে মওলানা ভাসানী বলেছিলেন- আওয়ামী লীগের নাম ‘নিখিল বাংলা লুটপাট সমিতি’।

আরও পড়ুন: সরকারের সময় কখন শেষ হবে, জনগণই তা ঠিক করবে: কাদের

মির্জা ফখরুল বলেন, বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার দেশের অর্থনীতি খুবলে খুবলে খাচ্ছে। তারা দেশের স্বাধীনতার চেতনা তারা ধ্বংস করেছে। ২০০৮ সালের নির্বাচনের আগে দেওয়া তাদের সব প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেছে। তারা হচ্ছে প্রতিশ্রুতি ভঙ্গকারী দল। এখন অনেক খেলা হবে। সবাই সতর্ক থাকবেন। বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলন চলছে। আমরা শেষ পর্যায়ে যাওয়ার জন্য সর্বশক্তি নিয়োগ করে এই সরকারকে সরিয়ে নির্দলীয়-নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি আদায় করতে হবে। বাইরে থেকে কেউ দাবি আদায় করে দেবে না। আমাদের তরুণদের জেগে উঠে বিপ্লব করতে হবে। জাতিকে রক্ষা করা ও বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করার দায়িত্ব তাদের।

শফিউল আলম প্রধানের স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে কখনো আপস করেননি মরহুম শফিউল আলম প্রধান। তিনি সবসময় দেশ ও জাতির জন্য সোচ্চার ছিলেন। তিনি কোনো সাধারণ নেতা ছিলেন না। তিনি সত্যিকার অর্থেই ত্যাগী, দেশপ্রেমিক ও বিপ্লবী নেতা ছিলেন। তার পিতা ছিলেন পূর্ব পাকিস্তান অ্যাসেম্বলির স্পিকার। তিনি নিজেও সারাজীবন পরাধীনতার বিরুদ্ধে কাজ করেছেন। তার পারিবারিক ঐতিহ্য রয়েছে। তিনি নীতির প্রশ্নে কোনো আপস করেননি। তিনি ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। কিন্তু ক্ষমতা বা অর্থলোভে গা ভাসিয়ে দেননি। তার রাজনীতির কোনো স্বার্থ ছিল না। তার কাছে দেশ ও দেশের মানুষ ছিল মুখ্য।

জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির (জাগপা) প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মরহুম শফিউল আলম প্রধানের ষষ্ঠ মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে জাগপা। সংগঠনের সভাপতি খন্দকার লুৎফর রহমানের সভাপতিত্বে এবং যুব জাগপার সভাপতি মীর আমির হোসেন আমুর পরিচালনায় অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমানউল্লাহ আমান, দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক মো. আব্দুস সালাম, জাগপার সাধারণ সম্পাদক এসএম শাহাদত হোসেন, তাঁতী দলের কাজী মনিরুজ্জামান মনির প্রমুখ।

কেএইচ/বিএ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।